ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (jaishankar) শুক্রবার বলেছেন, ভারত কখনোই পারমাণবিক হুমকির কাছে নতি স্বীকার করবে না এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দেবে। গুজরাটের বরোদায় একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার উদ্দেশ্য ছিল জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন অর্থনীতিকে ধ্বংস করা এবং ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, “আমরা যা দেখেছি তা ছিল জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পর্যটন অর্থনীতিকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা এবং ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টির একটি কুটিল পরিকল্পনা।”
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
জয়শঙ্কর (jaishankar) জানান, পহেলগাঁওয়ে হামলার নৃশংসতার জবাবে ভারত কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, “এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য একটি উদাহরণস্বরূপ জবাব প্রয়োজন ছিল, যা বাহাওয়ালপুর এবং মুরিদকে জঙ্গি কমান্ড সেন্টার ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।” তিনি পাকিস্তানের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, “যারা সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়, পোষণ করে এবং তাদের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে, তাদের উচ্চ মূল্য দিতে হবে।”
পারমাণবিক হুমকির বিষয়ে জয়শঙ্কর (jaishankar)স্পষ্ট করে বলেন, “ভারত কখনোই পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলের কাছে মাথা নত করবে না। জাতীয় স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, তা নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে।” তিনি জানান, অনেক দেশ ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেছে। তিনি বলেন, “অন্যান্য দেশের কাছ থেকে আমাদের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন পাওয়া হৃদয়গ্রাহী ছিল।”
প্রথমবারের মতো ইউক্রেনীয় F-16 কে ধ্বংস করেছে S-400, টেনশনে আমেরিকা
উপনিবেশ-পরবর্তী যুগে নতুন আধিপত্য (jaishankar)
জয়শঙ্কর (jaishankar)উপনিবেশ-পরবর্তী যুগে নতুন ধরনের বিশ্ব আধিপত্যের উত্থান নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “উপনিবেশের যুগ শেষ হলেও, বিশ্বায়নের সুযোগকে অপব্যবহার করে নতুন ধরনের আধিপত্যের উত্থান ঘটছে।” তিনি কিছু শক্তিশালী দেশের অন্যায্য বিচারের সমালোচনা করে বলেন, “কিছু মহলে অন্য দেশের সঙ্গে লেনদেনে প্রকাশ্যে লেনদেনমূলক মনোভাব গ্রহণ করা এখন ফ্যাশন হয়ে গেছে।” তিনি মনে করেন, কূটনীতি পারস্পরিক সম্মান এবং সুবিধার ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত।
জয়শঙ্কর (jaishankar) বলেন, ভারত মূল্যবোধ এবং সহানুভূতি দ্বারা পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, “আমাদের সম্পদ সীমিত হতে পারে, কিন্তু ভারতের হৃদয় বড়।” তিনি দেশগুলোর মধ্যে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি আরও সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, “প্রায় ২০০টি দেশের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে আমাদের জাতীয় স্বার্থ রয়েছে এবং আমরা সেগুলো এগিয়ে নিতে চাই, তবে এটি পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সুবিধার নীতির ভিত্তিতে করা উচিত।”
ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী নীতি
জয়শঙ্কর (jaishankar) ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতির উপর জোর দেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা বা এর ব্যবহার যারা করে, তাদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। পহেলগাঁওয়ে হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই হামলা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষতি করার লক্ষ্যেই নয়, ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টিরও উদ্দেশ্য ছিল। তবে, ভারত এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নেবে।
তিনি জানান, ভারতের এই অবস্থান অনেক দেশ সমর্থন করেছে, যা ভারতের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। তিনি বলেন, “আমাদের আত্মরক্ষার অধিকারকে অনেক দেশ বুঝতে পেরেছে এবং সমর্থন করেছে।” এটি ভারতের কূটনৈতিক শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতিফলন।
ভারতের কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
জয়শঙ্কর(jaishankar) ভারতের কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ভারত জাতীয় স্বার্থকে এগিয়ে নিতে চায়, তবে এটি হতে হবে পারস্পরিক সম্মান ও সুবিধার ভিত্তিতে। তিনি কিছু দেশের প্রকাশ্য লেনদেনমূলক কূটনীতির সমালোচনা করে বলেন, এটি দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তিনি ভারতের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির উপরও জোর দেন। তিনি বলেন, ভারত সবসময় দরিদ্র ও প্রয়োজনী দেশগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে, এমনকি নিজের সম্পদ সীমিত থাকলেও। এটি ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভবিষ্যৎ পথ
জয়শঙ্কর বলেন, ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার শক্ত অবস্থান অব্যাহত রাখবে। তিনি জানান, ভারত কখনোই হুমকির কাছে মাথা নত করবে না এবং জাতীয় স্বার্থের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার আহ্বান জানান।