গত রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপারেশন সিঁদুরে পাক অধিকৃত কাশ্মীর সহ পাকিস্তানের ৯ টি জায়গায় একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি এবং ট্রেনিং ক্যাম্প বিধ্বস্ত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত অপেরেশনে মারা গিয়েছে ১০০ ও বেশি। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জৈশ (jaish) প্রধান মাসুদ আজহারের বাড়ী।
সূত্রের খবর অনুযায়ী মাসুদের মৃত্যুর খবর না থাকলেও অপারেশনে মারা গিয়েছে তার পরিবারের অন্তত ১০ জন। এখন প্রশ্ন এটাই জৈশ (jaish) প্রধানের বাড়ি এবং জঙ্গিদের ট্রেনিং ক্যাম্প পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে । তবে পাকিস্তান কি করে ভারতে বার বার জঙ্গি হামলার দায় এড়ায়। কেন ই বা লস্কর প্রধান হাফিজ সাঈদ কে লুকিয়ে রেখেছে পাকিস্তান।
অপারেশন সিঁদুর বাহাওয়ালপুরে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস (jaish)
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বুধবার ভোররাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে, যাতে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, সিয়ালকোট এবং পিওকে-র মুজাফফরাবাদ, কোটলি, বাঘ-সহ নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়। এই হামলায় জৈশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনের ঘাঁটিগুলো
লক্ষ্য করা হয়। বাহাওয়ালপুর জৈশ-ই-মোহাম্মদের (jaish) প্রধান কার্যালয় মার্কাজ সুভান আল্লাহ, যেখানে মাসুদ আজহার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন, তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। এই কেন্দ্রটি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা সহ একাধিক জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার কেন্দ্র ছিল।
মাসুদ আজহার, যিনি ২০০১ সালের ভারতীয় সংসদ হামলা এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী, তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘ ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাহাওয়ালপুর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সুরক্ষায় বসবাস করছিলেন।
এই হামলায় তাঁর বোন, জামাই, ভাইপো সহ আরো অনেকে এবং পাঁচটি শিশু সহ পরিবারের ১০ জন নিহত হয়েছে। তবে, মাসুদ আজহারের মৃত্যুর বিষয়ে এখনও কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
জাতীয় দলের প্রস্তুতি শিবিরে ডাক পেলেন বাগানের ৭ ফুটবলার
পাকিস্তানের ভূমিকা ও সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়
পাকিস্তান (jaish) দীর্ঘদিন ধরে ভারতে জঙ্গি হামলার দায় অস্বীকার করে আসছে। পহেলগাঁও হামলা, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়েছিল, তার জন্য ভারত পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বাকে দায়ী করেছে। তবে, পাকিস্তান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং দাবি করে যে এই হামলাগুলো “মিথ্যা ফ্ল্যাগ” অপারেশন। রাষ্ট্রসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ সম্প্রতি পাকিস্তানের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পাহালগাম হামলায় ধর্মের ভিত্তিতে পর্যটকদের লক্ষ্য করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের ভাওয়ালপুর এবং মুরিদকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ভাওয়ালপুর জৈশ-ই-মোহাম্মদের (jaish) প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলে মাসুদ আজহারের (jaish) মার্কাজ সুভান আল্লাহ কমপ্লেক্সে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ এবং উগ্রপন্থী প্রচারণা চালানো হতো। একইভাবে, মুরিদকে লস্কর-ই-তৈয়বার সদর দপ্তর, যেখানে হাফিজ সাঈদ ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার মতো ঘটনার পরিকল্পনা করেছিলেন। হাফিজ সাঈদ, যিনি জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী, পাকিস্তানে প্রকাশ্যে বসবাস করেন এবং জামাত-উদ-দাওয়ার মাধ্যমে তাঁর কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
কোথায় লুকিয়ে হাফিজ সাঈদ
লস্কর-ই-তৈয়বার প্রতিষ্ঠাতা ও ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হাফিজ সাঈদ বর্তমানে পাকিস্তানের লাহোরের জোহর টাউনের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছেন। ভারত টুডের স্যাটেলাইট চিত্র ও ভিডিও অনুসারে, তিনি পাকিস্তান সরকারের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছেন, যেখানে তাঁর বাসস্থানকে একটি ‘উপ-কারাগার’ হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
পাকিস্তান দাবি করে, সাঈদ ২০২০ সাল থেকে সন্ত্রাসে অর্থায়নের মামলায় ৭৮ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন (jaish) । তবে, ভারত ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, তিনি প্রকাশ্যে চলাফেরা করেন এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে এখানে প্রশ্ন কারাদণ্ড ভোগ করলে তিনি লস্করের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কিভাবে এবং সেটা কি পাকিস্তান সরকার জানেন না।
ভারতের হাতে কেন তুলে দিচ্ছেনা
পাকিস্তান সাঈদকে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে না, কারণ দুই দেশের মধ্যে কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। এছাড়া, সাঈদের জামাত-উদ-দাওয়া পাকিস্তানে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রভাব বিস্তার করে, যা সরকারের জন্য তাঁকে দমন করা কঠিন করে তোলে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে লস্করের গভীর সম্পর্ক এবং কাশ্মীরে প্রক্সি যুদ্ধের কৌশলগত স্বার্থও এর অন্যতম কারণ। ভারত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সাঈদের প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানালেও পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করেছে।