দেশের প্রথম হাইপারলুপ ট্রেন চালু হলে ৩০ মিনিটে পাড়ি দেওয়া যাবে দিল্লি-জয়পুর!

ভারতের যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে চলেছে। মাত্র ৩০ মিনিটে দিল্লি থেকে রাজস্থানের জয়পুর পৌঁছানোর স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। দেশের প্রথম…

India's First Hyperloop Test Track Ready, Announces Rail Ministry

short-samachar

ভারতের যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে চলেছে। মাত্র ৩০ মিনিটে দিল্লি থেকে রাজস্থানের জয়পুর পৌঁছানোর স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। দেশের প্রথম ‘হাইপারলুপ’ ট্রেনের লাইন এখন প্রস্তুত। আইআইটি মাদ্রাজ এবং রেল মন্ত্রকের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে ৪২২ মিটার দীর্ঘ এই লাইন, যা দেশের পরিবহণ ব্যবস্থাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।

   

‘হাইপারলুপ’ একটি সুপারফাস্ট ট্রেন ব্যবস্থা, যা ঘণ্টায় ১১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। এটি বুলেট ট্রেনের থেকেও বেশি গতিসম্পন্ন। একটি বুলেট ট্রেন সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে, তবে হাইপারলুপের গতি তার থেকে দুই গুণ বেশি। ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ‘হাইপারলুপ’ লাইনের ছবি শেয়ার করেছেন এবং জানিয়েছেন যে, এটি পরিবহণের দুনিয়ায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। এই ট্রেনের বিশেষত্ব হল, এটি কোনও সাধারণ রেলপথে চলবে না, বরং একটি লো-প্রেসার টিউবের মধ্যে দিয়ে যাবে, যেখানে বাতাস থাকবে না। এই কারণে ট্রেনটি অত দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম হবে।

এই বিশেষ ট্রেনটি চালানোর জন্য যেটি ব্যবহৃত হবে, সেটি একাধিক কামরার পরিবর্তে একটি একক কামরা থাকবে। ট্রেনটি মূলত বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা চলে, এবং এটি চৌম্বক শক্তির সাহায্যে লাইন থেকে কিছুটা উপরে উঠে গতি বাড়াতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তি বিশ্বের যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাবে।

‘হাইপারলুপ’ সিস্টেমটি একটি লো-প্রেসার টিউবের মধ্যে দিয়ে চলে, যা বায়ুমণ্ডলের কোনও বাধা না থাকায় ট্রেনটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলে। এক্ষেত্রে, বাতাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় না, ফলে ট্রেনটি খুব কম শক্তি ব্যয় করে এবং দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম হয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ট্রেনের গতি এত বেশি যে, এটি ৩০০ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্ব একেবারে সহজেই অতিক্রম করতে পারবে।

এখন প্রশ্ন হল, এই হাইপারলুপ ট্রেনটি ভারতীয় পরিবহণ ব্যবস্থা কীভাবে পরিবর্তন করতে পারে? প্রথমত, এটি যাত্রীদের জন্য আরও দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক ভ্রমণের সুযোগ করে দেবে। দিল্লি থেকে জয়পুরের ৩৫০ কিলোমিটার দূরত্ব মাত্র ৩০ মিনিটে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হবে, যা বর্তমান রেলপথে অন্তত ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। এর ফলে, ভারতের অন্যান্য শহরের মধ্যে দূরত্ব কমে যাবে এবং যাত্রীদের জন্য দৈনন্দিন যাত্রার সময় সাশ্রয়ী হবে।

এই হাইপারলুপ ট্রেনটি চালু হলে, ভারতীয় রেলওয়ের উপর চাপও অনেকটা কমে যাবে, কারণ এটি নতুন রুট এবং যাত্রীদের মধ্যে গতির ব্যাপারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে। যাত্রীদের জন্য এটি এক অভূতপূর্ব সুবিধা এনে দেবে। পরবর্তীতে, এটি দেশীয় অর্থনীতির উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ দ্রুতগতির পরিবহণ ব্যবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন ক্ষেত্রেও দ্রুত বিস্তার লাভ করবে।

এছাড়া, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির কারণে এটি দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। চৌম্বক শক্তি এবং বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার, ইত্যাদি সুবিধার কারণে হাইপারলুপ ট্রেন একটি টেকসই পরিবহণ ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

এই নতুন যুগের যাত্রী পরিবহণ সিস্টেমের মধ্যে যদি ‘হাইপারলুপ’ সফলভাবে চালু হয়, তা হলে ভারতীয় পরিবহণ ব্যবস্থা এক নতুন দিগন্তে পৌঁছে যাবে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।