নয়াদিল্লি: ভারত ও কানাডার (India and Canada) মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নতুন মোড়ে পৌঁছেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, দুই দেশ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পারমাণবিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটাতে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী রোডম্যাপ তৈরি করেছে। সোমবার নয়াদিল্লিতে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এই ঘোষণা করেন।
জয়শঙ্কর বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। আমরা পারস্পরিক অংশীদারিত্ব এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা পুনরায় সক্রিয় করছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির মধ্যে কানানাসকিসে হওয়া বৈঠকে যে ইতিবাচক ভাবনার কথা উঠে এসেছে, আমরা সেই মনোভাবেই কাজ করছি।”
২০২৩ সালে কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর করা অভিযোগের জেরে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। তিনি দাবি করেছিলেন, খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিঝ্জারের হত্যায় ভারতের ভূমিকা থাকতে পারে। সেই সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
কিন্তু ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কানাডার সংসদীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। তাঁর জয়ের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। জুন মাসে কানানাসকিসে অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মোদী-কার্নির বৈঠক সেই পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দ বর্তমানে তিন দেশ সফরে রয়েছেন, যার প্রথম গন্তব্য ভারত। তিনি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর তিনি চীন ও সিঙ্গাপুর সফর করবেন।
জয়শঙ্কর বলেন, “ভারত কানাডাকে দেখে এক পরিপূরক অর্থনীতি হিসেবে, যেখানে বহুত্ববাদ ও উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করেই আমরা একটি টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার কাঠামো তৈরি করতে চাই।”
তিনি আরও জানান, “আজকের বৈঠকের জন্য উভয় পক্ষই কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পারমাণবিক শক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), জ্বালানি এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ তৈরি করেছে।”
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এই রোডম্যাপ বাস্তবায়িত হলে ভারত ও কানাডার সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত ক্ষেত্রেও নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। বিশেষত, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের পথ খুলে দেবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈঠকের ফলাফল ইতিবাচক। উভয় দেশ ভবিষ্যতে বিনিয়োগ ও গবেষণা সহযোগিতা বাড়ানোর দিকেও গুরুত্ব দেবে। ভারতের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি এবং কানাডার প্রযুক্তি ও খনিজ সম্পদের শক্তি—এই দুই মিলেই তৈরি হতে পারে এক নতুন অংশীদারিত্বের অধ্যায়।