দিল্লি: দেশে প্রথমবার নাগরিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় আসতে চলেছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনা, ড্রোন-ভিত্তিক হামলা এবং সাম্প্রতিক অপারেশন ‘সিন্দূর’-এ ড্রোন প্রযুক্তির সক্রিয় ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার বড় সিদ্ধান্ত নিল। জানা গিয়েছে, দিল্লি, মুম্বই, শ্রীনগর, জম্মুসহ দেশের প্রধান বিমানবন্দরগুলিতে অত্যাধুনিক অ্যান্টি-ড্রোন প্রতিরক্ষা (Airport anti-drone system) ব্যবস্থা বসানো হবে। নাগরিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনও বিমানবন্দরে এত উচ্চমানের ড্রোন প্রতিরোধ প্রযুক্তি স্থাপিত হতে চলেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর এই প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। গোটা প্রক্রিয়াটির তদারকি করছে মন্ত্রক নিজেই, পাশাপাশি ব্যুরো অব সিভিল অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (BCAS) ইতিমধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিতে রয়েছে ডিজিসিএ, সিআইএসএফ এবং বিমান নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রতিনিধিরা।
মন্ত্রকের এক জ্যেষ্ঠ কর্তা জানান, “অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমের স্পেসিফিকেশন নিয়ে কাজ চলছে। তা চূড়ান্ত হলেই ক্রয় ও স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হবে।” তাঁর দাবি, প্রকল্পটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম পর্যায়ে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, জম্মু এবং শ্রীনগর বিমানবন্দরে এই ব্যবস্থা বসানো হবে। পরে ধীরে ধীরে অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও ব্যস্ত বিমানবন্দরেও প্রযুক্তিটি সম্প্রসারিত হবে।
অন্য এক কর্তা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তির মডেলগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন মডেল ভারতের নিরাপত্তা কাঠামোর সঙ্গে সবচেয়ে ভালভাবে খাপ খাবে তা পর্যালোচনা চলছে। মডেল নির্বাচন চূড়ান্ত হওয়ার পরই স্থাপনার সময়সীমা নির্ধারিত হবে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৫ সালের এপ্রিলে পাহালগামে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার পর ভারত–পাকিস্তান সীমান্তে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। সেই সময় পাকিস্তানি ড্রোন একাধিকবার ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশ করে, যাদের মধ্যে অনেককেই ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করে নামাতে সক্ষম হয়। এই সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা ভারত সরকারের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ড্রোন এখন শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অবকাঠামোকেও বিপদের মুখে ফেলতে পারে।
বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত শ্রীনগর, জম্মুর মতো বিমানবন্দরগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই প্রথম পর্যায়েই সেগুলিকে এই অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে।
অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম সাধারণত তিনটি ধাপে কাজ করে ডিটেকশন: রাডার, আরএফ সেন্সর, ক্যামেরায় ড্রোন চিহ্নিত করা, ট্র্যাকিং: ড্রোনের দিক, উচ্চতা ও গতি পর্যবেক্ষণ, নিউট্রালাইজেশন: জ্যামার, লেজার বা কাইনেটিক ইন্টারসেপ্টরের সাহায্যে ড্রোন নিষ্ক্রিয় করা। ভারতীয় বিমানবন্দরে বসানো সিস্টেমগুলো এই তিনটি ক্ষমতাই ধারণ করবে। ফলে কোনও অনুমতিহীন ড্রোন আকাশসীমায় ঢুকলে তা সঙ্গে সঙ্গেই থামানো যাবে।
