Helicopter Crashed: রাওয়াতের মৃত্যুর তদন্ত রিপোর্ট যেন সরকার গোপন না করে: প্রাক্তন সেনাপ্রধান

News Desk: বুধবার দুপুরে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতকে নিয়ে ওড়া একটি এমআই-১৭ভি ৫ হেলিকপ্টার (Helicopter Crashed) ভেঙে পড়ে। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা…

General bipin rawat's death investigation

News Desk: বুধবার দুপুরে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতকে নিয়ে ওড়া একটি এমআই-১৭ভি ৫ হেলিকপ্টার (Helicopter Crashed) ভেঙে পড়ে। কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা নিয়ে প্রাক্তন সেনা কর্তারা মতামত ব্যক্ত করেছেন।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তা কর্নেল রাজেন্দ্র ভাদুড়ি বলেছেন, এমআই-১৭ভি হেলিকপ্টারটি যথেষ্ট অত্যাধুনিক ও উন্নতমানের তারপরেও এই কপ্টার কীভাবে ভেঙে পড়ল তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। সাধারণত ওড়ার আগে প্রতিটি কপ্টারের সবকিছু পরীক্ষা করে দেখা হয়। তার উপর যদি কোনও ভিআইপি ব্যক্তি কপ্টারে সফর করেন তাহলে সেই পরীক্ষা আরও বেশি সতর্কতার সঙ্গে করা হয়। কিন্তু তারপরেও কীভাবে রাওয়াতকে নিয়ে ওড়া কপ্টারটি ভেঙে পড়ল তা জানা দরকার।

তিনি বলেন, সাধারণত নানা কারণে একটি বিমান বা কপ্টার দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারে। যার মধ্যে রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটি, দৃশ্যমানতা অভাব, আবহাওয়ার পরিবর্তন প্রভৃতি। তবে ওড়ার আগে পাইলটদের আবহাওয়া সম্পর্কে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানো হয়। এদিন তামিলনাড়ুর আবহাওয়া আদৌ খারাপ ছিল না। তাই কী কারণে রাওয়াতকে নিয়ে ওড়া কপ্টারটি ভেঙে পড়ল তা জানতে উপযুক্ত তদন্ত হওয়া দরকার।

নাশকতার গন্ধ
প্রাক্তন সেনা কর্তা কর্নেল সব্যসাচী বাগচি এদিন দুর্ঘটনা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার তৈরি এই এমআই-১৭ কপ্টারটি অত্যন্ত উন্নতমানের। যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও এই কপ্টার উড়তে পারে। তাই কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা বোঝা যাচ্ছে না। যতক্ষণ না তদন্ত শেষ হয় ততক্ষণ জানা যাবে না দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এই ধরনের দুর্ঘটনার পিছনে নাশকতার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ভারত পাক সীমান্তের অভ্যন্তরে ড্রোনের মাধ্যমে অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর ঘটনা বেড়েছে। এক্ষেত্রে ড্রোনের মাধ্যমে এই কপ্টারটির উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা দরকার। এদিনের দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন কর্নেল বাগচি।

তদন্তের অপেক্ষা
চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতের কপ্টার দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন গ্রুপ ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তা আর কে দাস। ক্যাপ্টেন দাস বলেছেন, দুর্ঘটনা কখনও বলেকয়ে আসে না এটা ঠিক। যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের কোন ত্রুটি যে কোনও কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে প্রাকৃতিক কারণেও। সাধারণত যখন কোনও কপ্টার আকাশে ওড়ে তখন সব পরিস্থিতির উপর পাইলটরা কড়া নজর রাখেন। যদি আবহওয়া প্রতিকূল থাকতো তাহলে পাইলট কোনওভাবেই একজন ভিআইপি ব্যক্তিকে নিয়ে ওড়ার ঝুঁকি নিতেন না। তাই আজকের দুর্ঘটনা কী কারনে সেটা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। যদি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তবে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। খুবই আশ্চর্যের। কারণ ওড়ার অনুমতি দেওয়ার আগে বিমান বা কপ্টার সম্পূর্ণ পরীক্ষা করে দেখা হয়। বিশেষ করে ভিআইপি থাকলে তো কথাই নেই। তাই কি কারণে এই দুর্ঘটনা তা জানতে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

টাকার অভাব বললে হবে না
দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার প্রবীর সান্যাল বলেছেন, রাশিয়ার তৈরি এই এমআই-১৭ কপ্টারটি যথেষ্ট আধুনিক মানের। তবে সময় আরও অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আরও অত্যাধুনিক ও উন্নত মানের কপ্টার বাজারে এসেছে। সেনাবাহিনীর উচিত এ ধরনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিমান বা কপ্টার ব্যবহার করা। এটা মনে রাখতে হবে যে, সেনাবাহিনীর সদস্যদের সব সময় অনেক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে হয়। তাই তাঁরা যাতে সর্বাধুনিক জিনিসপত্র পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। কিন্তু যখনই কোনও অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র বা বিমান কেনার কথা ওঠে তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় টাকা নেই। অথচ বিভিন্ন সরকারি ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে খোলামকুচির টাকা খরচ করা হয়। এটা ঠিক নয়। যারা দেশের প্রতিরক্ষার কাজ করছেন সবার আগে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার।

কেন আগুন ?
কপ্টার দুর্ঘটনা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ব্রিগেডিয়ার পৃথ্বীরঞ্জন দাস বলেছেন, এমআই-১৭-এর মত অত্যাধুনিক কপ্টার কেন দুর্ঘটনার মুখে পড়ল সবার আগে সেটা তদন্ত করে দেখা দরকার। কারণ এই অত্যাধুনিক কপ্টারটি মরুঝড় বা সমুদ্র উপকূলের ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে অনায়াসে উড়তে পারে। এমনকি, আলো কমে এলেও এই কপ্টারের উড়তে কোনও সমস্যা হয় না। এদিনের কপ্টার দুর্ঘটনার পিছনে নিরাপত্তায় কোনও গাফিলতি ছিল একথা মানতে রাজি নন পৃথ্বীরঞ্জন।

তিনি বলেন, সুলুর থেকে ওয়েলিংটন মাত্র ২০ মিনিটের যাত্রাপথ। তাই চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফের কপ্টারের সঙ্গে আর কোনও কপ্টার ওড়েনি। দ্বিতীয় কোনও কপ্টার না থাকার বিষয়টিকে নিরাপত্তার গাফিলতি বলে মানতে রাজি নন তিনি। বরং তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, বিমানটিতে কেন আগুন ধরল তা জানা দরকার। আগুন এর পিছনে কোনও নাশকতা আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পৃথ্বীরঞ্জন।

রিপোর্ট প্রকাশ করুক সরকার
বিপিন রাওয়াতের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ঠিক কোথায় ভুল বা ত্রুটি হয়েছিল, কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটল সবকিছুই প্রকাশ্যে আনা উচিত। কারণ চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফের মত একজন ব্যক্তির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কারণ যদি প্রকাশ করা না হয় তাহলে হাজারো প্রশ্ন উঠবে। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়াবেন। সেটা কখনওই কাম্য নয়। সেনার পক্ষেও সেটা ভাল হবে না। সরকার যদি এই দুর্ঘটনার কারণ গোপন রাখে তবে মানুষের মনে সন্দেহের উদ্রেক হবে। তাই আমি মনে করি, সেনার সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের উচিত যত শীঘ্র সম্ভব এই দুর্ঘটনার রিপোর্ট প্রকাশ করা। যত শীঘ্র সম্ভব বললেও প্রাক্তন সেনাপ্রধান নির্দিষ্ট করে কোনও সময়সীমার কথা বলতে চাননি। তবে প্রাক্তন সেনা প্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরী আশা করছেন, কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটল তা সহজেই জানা যাবে।