ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে দরগার অশোক স্তম্ভ ধ্বংস করল কট্টরপন্থীরা

শ্রীনগরের ঐতিহাসিক হাজরতবল দরগায় (Hazratbal Shrine) এক বিরল ও বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে, যা মুহূর্তেই জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, কিছু কট্টরপন্থী ব্যক্তিরা সেখানে…

Extremists Vandalize Ashoka Emblem in Srinagar, Sparking National Outrage

শ্রীনগরের ঐতিহাসিক হাজরতবল দরগায় (Hazratbal Shrine) এক বিরল ও বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে, যা মুহূর্তেই জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, কিছু কট্টরপন্থী ব্যক্তিরা সেখানে জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভ খোদাই করা একটি মার্বেল ফলক ভেঙে ফেলে। এই ফলকটি সম্প্রতি দরগার সংস্কার শেষ হওয়ার পর জম্মু ও কাশ্মীর ওয়াকফ বোর্ডের উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছিল।

Hazratbal Shrine: অশোক স্তম্ভ ধ্বংস করল কট্টরপন্থীরা

ঘটনাটির ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন ব্যক্তি ধর্মীয় স্লোগান— “নারা-ই-তাকবীর, আল্লাহু আকবর”— উচ্চারণ করতে করতে সেই ফলক ভেঙে ফেলছে। কেবল একটি পাথর নয়, বরং জাতীয় প্রতীকের উপর এই আঘাতকে দেশজুড়ে অনেকেই দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অপমান হিসেবেই দেখছেন।

   

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফলকটি সংস্কার কাজের স্মারক হিসেবে স্থাপিত হয়েছিল এবং তাতে অশোক স্তম্ভের প্রতীক খোদাই ছিল। কিন্তু অভিযুক্তরা একে “অ-ইসলামিক” বলে দাবি করে ধ্বংস করে দেয়।

জম্মু ও কাশ্মীর ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারপার্সন ডা. দারখশান আন্দ্রাবি ঘটনাটিকে সরাসরি “আতঙ্কবাদী আক্রমণ” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানান, “এটি কেবল একটি মার্বেল ফলক ভাঙার ঘটনা নয়। এটি ভক্তদের অনুভূতির উপর আঘাত এবং জাতীয় সংবিধানের অবমাননা।” একইসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে এবং তাদের উপর দরগায় প্রবেশের আজীবন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

এই ঘটনা এমন সময় ঘটেছে, যখন হাজরতবল দরগার (Hazratbal Shrine) সংস্কারে সরকারি তহবিল থেকে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। করদাতাদের অর্থ দিয়ে সংস্কারের পর উদ্বোধিত পবিত্র স্থানের এমন অবমাননা নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

ডা. আন্দ্রাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য— “এই ধরনের কাজ কখনও সহ্য করা হবে না। এটি শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট করার একটি পরিকল্পিত চেষ্টা।”

Advertisements

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া তীব্র। অনেকেই বলছেন, এটি দেশের সার্বভৌমত্বের উপর সরাসরি আঘাত। অন্যদিকে, কেউ কেউ ধর্মীয় আবেগ ও জাতীয় প্রতীকের সংঘাতকে আরও জটিল আকার ধারণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জম্মু ও কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে জাতীয় প্রতীকের প্রদর্শন এবং ধর্মীয় স্থানগুলির সংস্কারের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ঘটনাটি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে গেল— জাতীয় ঐক্য ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রাখা ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট এড়ানো সম্ভব নয়।

সংক্ষেপে, হাজরতবল দরগায় (Hazratbal Shrine) অশোক স্তম্ভ ধ্বংসের ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, বরং গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এটি জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় আবেগ ও সহিষ্ণুতার সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষার অপরিহার্যতাকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।