কড়া বাম শাসনে শীতঘুমে যাওয়া দুই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে মোদী সরকারের শান্তি চুক্তি!

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: লক্ষ্য স্বাধীন ত্রিপুরা (Tripura)! এই লক্ষ্য নিয়ে একাধিক গণহত্যায় জড়িত দুই জঙ্গি সংগঠন NLFT এবং ATTF নব্বই দশকে বিশ্ব জুড়ে বারবার চর্চিত হয়েছিল।…

Government Signs Historic Peace Pact with Two Tripura Insurgent Groups

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: লক্ষ্য স্বাধীন ত্রিপুরা (Tripura)! এই লক্ষ্য নিয়ে একাধিক গণহত্যায় জড়িত দুই জঙ্গি সংগঠন NLFT এবং ATTF নব্বই দশকে বিশ্ব জুড়ে বারবার চর্চিত হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থাগুলির প্রতিবেদন বলছে, পড়শি বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করে ভারতের অভ্যন্তরে রক্তনদী বইয়ে দেওয়া ত্রিপুরার এই দুটি জঙ্গি-বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী গত দু দশকের বেশি সময় ধরে কোনও নাশকতা ঘটায়নি। কড়া হাতে তাদের বিষদাঁত ভেঙে শীতঘুমে পাঠিয়েছিল ত্রিপুরার বিগত বামফ্রন্ট সরকার। সেই দুই সংগঠনের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে শান্তি চুক্তি করল বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার।

বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার উপস্থিতিতে অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (ATTF) এবং ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ তুইপ্রা (NLFT) সংগঠনের নেতারা শান্তি চুক্তি মেনে নিয়েছেন।

   

এই শান্তিচুক্তিতে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবদেব, তিপ্রা মথার প্রাক্তন মহারাজ প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন, আইবি প্রধান তপন ডেকা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ছিলেন না ত্রিপুরায় শান্তি ফেরানো ও জঙ্গিদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিআইএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার!

বাংলাভাষী প্রধান ত্রিপুরার পার্বত্য এলাকায় উপজাতিদের আবেগ উস্কে বাঙালি-উপজাতি দ্বন্দ্বের জেরে গণহত্যার একটার পর একটা নজির তৈরি করেছিল এটিটিএফ ও এনএলএফটি। এমনই জানাচ্ছে ভারতের ও দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া ভারতের অন্যতম সংস্থা সাউথ এশিয়ান টেরোরিজম পোর্টাল (SATP)। এই সংস্থার তথ্য কেন্দ্রীয় সরকার যথেষ্ঠ মান্যতা দেয়। তাদেরই তথ্য, ATTF হিন্দু সদস্য গরিষ্ঠ আর NLFT খ্রিষ্টান সদস্য গরিষ্ঠ। দুটি সংগঠনের লক্ষ্য স্বাধীন ত্রিপুরা হলেও এরা পরস্পরের বিরুদ্ধে গুলি চালিয়ে বারবার নিজেদের রক্তাক্ত করেছে।

দেশের অভ্যন্তরীন সন্ত্রাসবাদের তথ্যে কাশ্মীরের মত উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি প্রবল সন্ত্রাস কবলিত। এর মধ্যে ত্রিপুরা ছিল গণহত্যার অন্যতম কেন্দ্র। ১৯৯০ দশকের সেই রক্তাক্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎকালীন ত্রিপুরার বামফ্রন্ট সরকারের মূল শরিক সিপিআইএমের শতাধিক কর্মী-সমর্থক নিহত হন। গোয়েন্দা রিপোর্টেই স্পষ্ট, একটানা কুড়ি বছর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মানিক সরকারের কড়া প্রশাসনে জঙ্গিরা গুটিয়ে গেছিল। তাৎপর্যপূর্ণ, ২০১৮ সালে এ রাজ্যে বাম জমানার পতনের পর NLFT ফের কিছুটা সক্রিয় হয়। উপজাতি দলের প্রার্থী হয়ে ভোটে জিতে বিধানসভার সদস্য ‘ত্রিপুরার টাইগার’ বলে চর্চিত ATTF সংগঠনের নেতা রণজিৎ দেববর্মা। তার দল তিপ্রা মথা রাজ্য সরকারের শরিক!

ATTF ও NLFT জঙ্গি সংগঠনের নেতারা শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, আমরা শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌভাতৃত্বের মাধ্যমে সকলের উন্নয়ন চাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অষ্টলক্ষ্মী (উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্য) এবং পূর্বোদয় এর ধারনাকে স্বাগত জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বলেন এখন পর্যন্ত উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে মোট ১২টি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জীবনের মূল ধারায় পুনরায় যোগদানের জন্য প্রায় ১০ হাজার জঙ্গি আত্মসমর্পন করেছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে ২৫০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ করা হয়েছে।