বাংলাদেশের(Bangladesh) আদালত সম্প্রতি দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এ পরোয়ানা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে জারি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইনের ভিত্তিতে কার্যকর হতে পারে। তবে, বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এই গ্রেফতারি পরোয়ানা ভারতীয় মাটিতে কার্যকর করা খুবই কঠিন এবং এটি বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
ভারতের প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বিকাশ সিং এই বিষয়ে একটি বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হলো একটি ট্রাইব্যুনাল যা বাংলাদেশে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে তারা কিছু নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধকে স্বীকৃতি দেয়। এই গ্রেফতারি পরোয়ানা বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ আদালত দ্বারা জারি করা হয়েছে।”
বিকাশ সিং আরও বলেন, “এই গ্রেফতারি পরোয়ানাটি কার্যকর করার জন্য ভারতের কাছ থেকে প্রত্যর্পণ (extradition) প্রয়োজন। ভারতের কাছ থেকে প্রত্যর্পণ ছাড়া এই পরোয়ানা কার্যকর করা সম্ভব নয়।” তিনি উল্লেখ করেন যে, প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে যা অপরাধীর অধিকার রক্ষা করে। “একটি সুরক্ষা হলো, রাজনৈতিক অপরাধের জন্য কাউকে প্রত্যর্পণ করা যাবে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা হলো, যদি কোনো দেশ প্রত্যর্পণ চায়, তবে সেখানে যে শাস্তি প্রদান করা হবে, তা ভারতের আইন অনুযায়ী একই অপরাধের জন্য দেওয়া শাস্তির চেয়ে বেশি হতে পারবে না।”
এইসব সুরক্ষাগুলি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বাধা হতে পারে, কারণ বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ভারতের আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। বিকাশ সিং এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, “যেহেতু এই শাস্তি ভারতের আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং এটি একটি রাজনৈতিক অপরাধের অংশ হতে পারে, তাই ভারতের আদালত এই প্রত্যর্পণ আবেদন নাকচ করে দিতে পারে।”
তবে, ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন যে, যদিও বাংলাদেশ এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, তা ভারতীয় আদালতের মাধ্যমে কার্যকর হবে না। কারণ, ভারতের সাংবিধানিক আইনে রাজনৈতিক অপরাধের জন্য কোনো প্রত্যর্পণ কার্যকর করা সম্ভব নয়। এছাড়া, ভারতের আইনের আওতায় বাংলাদেশি আদালতের দেয়া কোনো আদেশের জন্য ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার অনুমোদন প্রয়োজন।
এছাড়া, প্রত্যর্পণের আইনগত প্রক্রিয়া অনেক সময়সাপেক্ষ এবং জটিল। এক্ষেত্রে, ভারতের আদালত যদি এই গ্রেফতারি পরোয়ানা সম্পর্কিত আবেদন গ্রহণ করে, তবে তা দীর্ঘ সময় নিতে পারে এবং বিভিন্ন আইনি বাধার সম্মুখীন হতে পারে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, এটি বাস্তবে খুব একটা কার্যকর হবে না। এর বাস্তবায়ন একটি কঠিন প্রক্রিয়া, এবং রাজনৈতিক কারণেও এটি আর্থিক ও আইনি জটিলতার মধ্যে পড়ে যাবে।
এর ফলে, ভারতের আদালত কোন সিদ্ধান্ত নেবে, তা আরও সময়ের অপেক্ষা। তবে, ভারতীয় আইনজ্ঞরা সাফ জানিয়েছেন যে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশী আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা ভারতের মধ্যে কার্যকর হওয়া প্রায় অসম্ভব।
এখন দেখার বিষয় হলো, বাংলাদেশ সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী ধরনের কৌশল গ্রহণ করবে এবং ভারতীয় আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয় সে বিষয়েও অদূর ভবিষ্যতে নির্ধারিত হবে।