নির্বাচন প্রতিদ্বিন্দ্বিতায় সংশয়, ব্যাকফুটে ‘বহিরাগত’ তেজস্বী

বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচন কমিশন (ECI) কর্তৃক (Tejashwi)প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (RJD) নেতা তেজস্বী যাদব তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি…

Tejashwi alleges ECI

বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচন কমিশন (ECI) কর্তৃক (Tejashwi)প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (RJD) নেতা তেজস্বী যাদব তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে ভোটারদের ঠিকানা, বুথ নম্বর এবং ইপিক (EPIC) নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেনি, যার ফলে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনা তেজস্বী যাদবের নিজের নাম তালিকায় না থাকায় তাঁর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশনের এই সংশোধনে এই মুহূর্তে কার্যত বহিরাহত তিনি। এই অভিযোগ তাঁকে রাজনৈতিকভাবে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে এবং বিহারের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আসন্ন বিহার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কার্যত সংশয়ের মুখে তার। ২ আগস্ট পাটনায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তেজস্বী যাদব বলেন, “নির্বাচন কমিশন চতুরতার সঙ্গে ভোটারদের ঠিকানা, বুথ নম্বর বা ইপিক নম্বর উল্লেখ করেনি।

   

প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যা মোট ভোটারের ৮.৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৬৫ লক্ষ। এটি গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।” তিনি আরও জানান, তিনি নিজে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার সময় গণনা ফর্ম পূরণ করেছিলেন এবং বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) তার কাছ থেকে ফর্ম সংগ্রহ করেছিলেন।

তবুও, তাঁর নাম খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “আমার নাম যদি ভোটার তালিকায় না থাকে, তাহলে আমি কীভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব?”এই ঘটনা তেজস্বী যাদবের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিহারের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তিনি আসন্ন নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য প্রধান প্রার্থীদের একজন। তবে, তাঁর নাম ভোটার তালিকায় না থাকায় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে, যা আরজেডিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন তেজস্বী যাদবের অভিযোগের জবাবে বলেছে, খসড়া তালিকা থেকে কোনো নাম বিনা কারণে বাদ দেওয়া হয়নি। কমিশন জানিয়েছে, বিহারে ৭.২৪ কোটিরও বেশি ভোটার গণনা ফর্ম পূরণ করেছেন, যা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

নাম বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে মৃত্যু (২২.৩৪ লক্ষ), স্থায়ীভাবে স্থানান্তর বা অনুপস্থিতি (৩৬.২৮ লক্ষ) এবং দ্বৈত নথিভুক্তি (৭.০১ লক্ষ)। ১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাবি ও আপত্তি দাখিলের সময় দেওয়া হয়েছে, যেখানে ভোটাররা তাদের নাম যুক্ত করতে বা অযোগ্য নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

তবে, তেজস্বী যাদব এই ব্যাখ্যার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, বিস্তারিত তথ্যের অভাবে কোন ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে তা যাচাই করা সম্ভব নয়। তিনি নির্বাচন কমিশনের উপর রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ তুলে বলেন, এটি বিরোধী দলের ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার একটি ষড়যন্ত্র।

তেজস্বী যাদবের এই অভিযোগ বিহারের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তিনি দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশন বিজেপির পক্ষে কাজ করছে এবং এই প্রক্রিয়া বিরোধী দলের ভোটারদের দমিয়ে রাখার জন্য পরিকল্পিত। তবে, এই অভিযোগ তাঁর দলকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে নিয়ে গেছে।

Advertisements

তাঁর নিজের নাম তালিকায় না থাকায় আরজেডির নির্বাচনী প্রচারে ধাক্কা লেগেছে, এবং বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ব্লকের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।বিজেপি নেতা নরেশ বনসল এই অভিযোগের জবাবে বলেন, “এসআইআর প্রক্রিয়া নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য। অবৈধ ভোটার, যেমন বাংলাদেশ বা নেপাল থেকে আগত ব্যক্তিদের, তালিকা থেকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন।”

তিনি তেজস্বী যাদবের অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রচারণা হিসেবে অভিহিত করেছেন।বিরোধী দলের সমর্থন ও আইনি পদক্ষেপইন্ডিয়া ব্লকের অন্যান্য নেতারা তেজস্বী যাদবের অভিযোগের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, “বিজেপির চাপে নির্বাচন কমিশন এই প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।”

সিপিআই(এমএল) মহাসচিব দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও এই প্রক্রিয়াকে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর), যোগেন্দ্র যাদব, মনোজ ঝা এবং মহুয়া মৈত্র সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন।

তারা দাবি করেছেন, এই প্রক্রিয়া সংবিধানের ১৪, ১৯ এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদের অধিকার লঙ্ঘন করছে। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, এই প্রক্রিয়া “ব্যাপক বর্জনের” পরিবর্তে “ব্যাপক অন্তর্ভুক্তির” দিকে পরিচালিত হওয়া উচিত।

তেজস্বী যাদব দুটি ভিডিও প্রকাশ করে তাঁর অভিযোগের সমর্থন করেছেন। একটি ভিডিওতে ঝাড়খণ্ডের এক জিলেবি বিক্রেতার কাছে হাজার হাজার গণনা ফর্ম পাওয়া গেছে, এবং অন্যটিতে পাটনার গান্ধী ময়দানের কাছে ফ্লাইওভারে ফেলে দেওয়া ফর্ম দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির সম্ভাবনা রয়েছে, এবং এটি ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র।”

তেজস্বী যাদবের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় না থাকা এবং ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ বিহারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনা তাঁর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনাকে সংশয়ের মুখে ফেলেছে এবং আরজেডিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে।

শ্রমিক-কৃষকদের বিজেপি প্রীতি দেখে ক্ষুব্ধ বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক

নির্বাচন কমিশনের উপর এখন দায়িত্ব রয়েছে যে, দাবি ও আপত্তি পর্বে এই অভিযোগগুলোর সমাধান করা হয় এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হয়। এই ঘটনা বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং আসন্ন নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।