কেন্দ্রের করপুলে রাজ্যগুলির দেওয়া অর্থের তুলনায় প্রতিটি রাজ্য আলাদা হারে বরাদ্দ (Central Fund Allocation) পাচ্ছে। একটি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে যে, কেন্দ্রীয় করের প্রত্যেক এক টাকা বিনিময়ে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে বিহার – ৭.২৬ টাকা। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা মাত্র ০.৮৭ টাকা, যা সারা দেশের মধ্যে অন্যতম কম। এমন বৈষম্যের ফলে কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক ভারসাম্যের প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় রাজস্বের পুলে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি করের অংশ হিসাবে অর্থ প্রদান করে থাকে। কেন্দ্রের সিস্টেম অনুযায়ী এই রাজস্ব পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজ্যকে পুনরায় বরাদ্দ করা হয়। তবে, এর বিনিময়ে বিভিন্ন রাজ্য এক একটি আলাদা হারে অর্থ ফিরে পায়।
রাজ্য ভিত্তিক বরাদ্দের বিশ্লেষণ
২০১৯-২৩ অর্থবছরের তথ্য অনুযায়ী, বিহার কেন্দ্রীয় পুলে প্রতি এক টাকা জমা দিলে পরিবর্তে ৭.২৬ টাকা ফেরত পায়, যা ভারতে সর্বোচ্চ। বিহারের পরেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, যেখানে প্রতি এক টাকা বিনিময়ে ২.৪৯ টাকা ফেরত দেওয়া হয়। এছাড়া মধ্যপ্রদেশ, ওডিশা, ও রাজস্থান যথাক্রমে ২.০৯, ১.২৫ এবং ১.২০ টাকা পেয়ে থাকে।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই বরাদ্দের হার মাত্র ০.৮৭ টাকা, যা প্রায় সবার শেষে। পশ্চিমবঙ্গের আগে রয়েছে মহারাষ্ট্র (০.৬৪ টাকা), কর্ণাটক (০.৬২ টাকা), গুজরাট (০.৫২ টাকা) ও তামিলনাড়ু (০.৪৭ টাকা)। এই তথ্যে স্পষ্টই বোঝা যায়, কেন্দ্রীয় বরাদ্দে বৈষম্যের ফলে কিছু রাজ্য অর্থনৈতিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকছে, আবার কিছু রাজ্য বরাদ্দ বণ্টনে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় পুলের কর কীভাবে বণ্টিত হয়?
কেন্দ্রীয় পুলে জমাকৃত অর্থের মধ্যে কিছু কর যেমন আবগারি শুল্ক ও শুল্ক ফি হিসাবের মধ্যে ধরা হয় না। এই অর্থ শুধুমাত্র আয়কর ও করপোরেট করের ভিত্তিতে বণ্টিত হয়। তাই, কেন্দ্রীয় বরাদ্দের পূর্ণ চিত্র নির্ধারণ করতে গেলে আবগারি শুল্ক ও শুল্ক ফি-র বিষয়টিও বিবেচনায় আনা জরুরি। অনেক রাজ্য মনে করে, কেন্দ্রীয় বণ্টন সিস্টেম আরও ভারসাম্যমূলক হওয়া উচিত এবং এই বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাজ্যের আর্থিক প্রয়োজন, জনসংখ্যা এবং আয় ও আর্থিক মান নির্ধারণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
অর্থনৈতিক ভারসাম্যের প্রভাব
এভাবে কেন্দ্রীয় রাজস্ব পুলের বৈষম্যমূলক বণ্টন রাজ্যগুলির আর্থিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলছে। অনেক রাজ্যের মত পশ্চিমবঙ্গও মনে করে, কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আরও স্বচ্ছতা ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বণ্টন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা উচিত। কেন্দ্রীয় পুলে রাজ্যগুলির করের অবদান যত বেশি থাকে, তত বেশি বরাদ্দের দাবিও রাজ্যগুলির থাকে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এই বণ্টনের পিছনে জনসংখ্যা, উন্নয়ন প্রয়োজন, ও সামাজিক সূচকগুলিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
🚨 For every Rs 1 rupee given to the centre, Bihar gets the maximum of Rs 7.26 in return. pic.twitter.com/3XMeWlmcDK
— Indian Tech & Infra (@IndianTechGuide) October 31, 2024
পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক দাবি
পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেন্দ্রের এই বরাদ্দ বণ্টনের বৈষম্যের ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে প্রভাব পড়ছে। সরকারের এক উচ্চপদস্থ অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা বলেন, “প্রতি বছর কেন্দ্রের করপুলে রাজ্য থেকে যে অর্থ গিয়েছে, তার তুলনায় রাজ্যে ফেরত পাওয়া অর্থ অনেক কম। ফলে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিতে প্রভাব পড়ছে, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে।”
অন্যদিকে, কেন্দ্র দাবি করে যে, এই বণ্টন প্রক্রিয়া নির্ধারিত মাপকাঠির উপর নির্ভরশীল এবং রাজ্যের আর্থিক অগ্রগতিতে এটি সহায়ক।