রাজধানীর পুলিশ শুক্রবার দিল্লি-জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (এনসিআর)-এ একটি আন্তঃরাজ্য অবৈধ অস্ত্র পাচার চক্রের (Arms Smuggling) পর্দাফাঁস করেছে এবং এই চক্রের তিনজন মূল সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এই চক্রটি পাঞ্জাবের পটিয়ালার নবা জেল থেকে পরিচালিত হচ্ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রটি মধ্যপ্রদেশ এবং বিহার থেকে দিল্লি ও এনসিআর-এ অবৈধ অস্ত্র সরবরাহে জড়িত ছিল।
এই অভিযানটি পরিচালনা করেছেন ইন্সপেক্টর রাহুল কুমার এবং ইন্সপেক্টর বিনীত কুমার তেওয়াতিয়া। তাদের এই কাজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসিপি) কৈলাশ সিং বিষ্ট। গ্রেফতারকৃত তিন প্রধান অভিযুক্তের নাম হল অনিকেত, সৌরভ এবং আনন্দ কুমার। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি “কার্যকরী অবৈধ” পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
দিল্লি পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “স্পেশাল সেল, ট্রান্স যমুনা রেঞ্জ, দিল্লি পুলিশের একটি নিবেদিত দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন ইন্সপেক্টর রাহুল কুমার এবং ইন্সপেক্টর বিনীত কুমার তেওয়াতিয়া এবং এসিপি কৈলাশ সিং বিষ্টের তত্ত্বাবধানে, একটি আন্তঃরাজ্য অবৈধ অস্ত্র পাচার চক্র ভেঙে দিয়েছে। এই চক্রটি মধ্যপ্রদেশ এবং বিহার থেকে দিল্লি ও এনসিআর-এ অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ করত এবং পাঞ্জাবের পটিয়ালার নবা জেল থেকে পরিচালিত হত।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। জেলের ভিতর থেকে এই অপরাধমূলক কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য তারা একটি জটিল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুলিশ এই চক্রের আরও সদস্য এবং তাদের সরবরাহ চ্যানেল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
এর আগে, চলতি মাসের শুরুতে দিল্লি পুলিশ আরেকটি বড় সাফল্য অর্জন করেছিল। তারা একটি চোর চক্র ভেঙে দিয়েছিল, যারা মেট্রো স্টেশন, বাস এবং ভিড়ের বাজারে যাত্রীদের লক্ষ্য করে চুরি করত এবং চুরি করা ডিভাইসগুলো বাংলাদেশ এবং নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশে পাচার করত। দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল এবং ক্রাইম ব্রাঞ্চ এই আন্তর্জাতিক চোর সিন্ডিকেটের পর্দাফাঁস করে এবং পশ্চিমবঙ্গের একজন পাচারকারীকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত এই পাচারকারীকে দিল্লির কোতোয়ালি এলাকার সেলিমগড় বাইপাস থেকে আটক করা হয়, যখন সে পশ্চিমবঙ্গের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তার কাছ থেকে ৪৮টি উচ্চমানের চুরি করা মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম আব্দুস (বয়স ২৪ বছর), যিনি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা।
দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডিসিপি আদিত্য গৌতম জানিয়েছেন, “আগের তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে দিল্লি/এনসিআর-এ একাধিক মোবাইল ফোন চোর সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। এরা চুরি করা মোবাইল ফোনগুলো বাংলাদেশ এবং নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশে বড় আকারে পাচার করে। এই ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলা করতে সাইবার সেল, ক্রাইম ব্রাঞ্চ একটি নিবিড় অভিযান শুরু করেছে। এই সিন্ডিকেটগুলোকে চিহ্নিত করতে এবং ধ্বংস করতে একটি নিবেদিত দল গঠন করা হয়েছে। মেট্রো স্টেশন, বাস এবং ভিড়ের বাজারের মতো চুরি-প্রবণ এলাকাগুলোতে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যেখানে পকেটমার এবং পেশাদার চোররা অসতর্ক যাত্রীদের লক্ষ্য করে।”
দিল্লি পুলিশের এই দুটি সফল অভিযান প্রমাণ করে যে তারা অপরাধ দমনে কতটা সক্রিয় এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একদিকে যেমন অবৈধ অস্ত্র পাচারের মতো গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে এমন চুরির ঘটনা রোধেও তারা সমানভাবে মনোযোগ দিচ্ছে।
নবা জেল থেকে অস্ত্র পাচার চক্র পরিচালনার ঘটনা উদ্বেগজনক হলেও এটি পুলিশের গোয়েন্দা ক্ষমতা এবং দক্ষতার প্রমাণ দেয়। জেলের ভিতরে এমন অপরাধমূলক কার্যকলাপ কীভাবে পরিচালিত হচ্ছিল, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এই ঘটনা জেল সংস্কার এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছে।
অন্যদিকে, মোবাইল ফোন চুরি এবং তা আন্তর্জাতিকভাবে পাচারের ঘটনা দিল্লির মতো মহানগরীতে অপরাধের নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে আসা আব্দুসের গ্রেফতারি এই পাচার চক্রে বাংলার সম্পৃক্ততার বিষয়টিও সামনে এনেছে। এটি আঞ্চলিক সমন্বয়ের মাধ্যমে অপরাধ দমনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
দিল্লি পুলিশের এই অভিযানগুলো শুধু অপরাধীদের গ্রেফতারই নয়, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার ভাব ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, এই ধরনের অপরাধের মূল উৎস এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে আরও গভীর তদন্ত এবং কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।