বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের (Nitish Kumar:) বিরুদ্ধে জাতীয় সঙ্গীতের অপমানের অভিযোগ উঠেছে। গত ২০ মার্চ পটনার পাটলিপুত্র ক্রীড়া সংকুলে ‘সেপাক টাকরা বিশ্বকাপ ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন অস্বাভাবিক আচরণ করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে নীতীশ কুমার জাতীয় সঙ্গীতের সময় মঞ্চ থেকে নেমে খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করছেন, হাসছেন এবং পাশে দাঁড়ানো প্রধান সচিব দীপক কুমারের সঙ্গে কথা বলছেন। এই ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলগুলো তীব্র সমালোচনা করেছে এবং তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, জাতীয় সঙ্গীত ‘জন গণ মন’ বাজার সময় নীতীশ কুমার স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পরিবর্তে প্রধান সচিব দীপক কুমারের সঙ্গে কথা বলছেন এবং হাত দিয়ে ইশারা করছেন। দীপক কুমার তাঁকে স্থির থাকার জন্য ইঙ্গিত করলেও তিনি তা উপেক্ষা করেন। এমনকি তিনি হেসে উঠেছেন এবং কিছু লোকের দিকে হাত জোড় করে অভিবাদন জানিয়েছেন।
এই আচরণকে বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি অসম্মান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “জাতীয় সঙ্গীতের অপমান, ভারতবর্ষ এটা সহ্য করবে না। বিহারবাসী, এখনও কি কিছু বাকি আছে?” বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবও নীতীশ কুমারের উপর তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, “কমপক্ষে জাতীয় সঙ্গীতের অপমান করবেন না মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী। আপনি কয়েক সেকেন্ডের জন্যও মানসিক ও শারীরিকভাবে স্থির থাকতে পারেন না। এই অচেতন অবস্থায় আপনার এই পদে থাকা রাজ্যের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিহারকে বারবার অপমান করবেন না।”
राष्ट्रगान बजते समय यह कैसा व्यवहार है?
बार बार @NitishKumar जी के मानसिक स्वास्थ्य को लेकर लोग क्या बेवजह आशंका जता रहे हैं? pic.twitter.com/YJpkqFad0M— Rashtriya Janata Dal (@RJDforIndia) March 20, 2025
এই ঘটনার পর মুজফ্ফরপুরের এসিজেএম পশ্চিম আদালতে নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট সূরজ কুমার নামে এক ব্যক্তি ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ২৯৮, ৩৫২ এবং জাতীয় গৌরব অপমান নিবারণ আইনের ধারা ২ ও ৩-এর অধীনে এই মামলা দায়ের করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে নীতীশ কুমারের এই ক্রিয়াকলাপ শুধু জাতীয় সঙ্গীতের অপমানই নয়, বরং বিহার ও দেশকে লজ্জিত করেছে। জাতীয় গৌরব অপমান নিবারণ আইন, ১৯৭১ অনুসারে, জাতীয় সঙ্গীতের অপমানের জন্য তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
Read Also: ২০২৬ এর মধ্যে ভারতকে মাও-মুক্ত করার বার্তা অমিত শাহের
বিহার বিধানসভায় শুক্রবার এই ইস্যুতে তুমুল হট্টগোল হয়। আরজেডি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো সদনের ভিতরে ও বাইরে প্রতিবাদ করেছে। তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে বিরোধী বিধায়করা প্ল্যাকার্ড হাতে নীতীশ কুমারের পদত্যাগ দাবি করেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী বিধান পরিষদে বলেন, “যদি নীতীশ কুমারের মাথা খারাপ হয়ে যায়, তবে তাঁকে গদি ছেড়ে তাঁর ছেলেকে মুখ্যমন্ত্রী করা উচিত।” এই হট্টগোলের জেরে বিধানসভার কার্যক্রম মাত্র ২২ মিনিট চলার পর সোমবার পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়। নীতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ এই অভিযোগের বিরুদ্ধে তাঁর পক্ষে সাফাই দিয়েছে।
জেডিইউ নেতা ও মন্ত্রী বিজয় চৌধুরী বলেন, “দেশের জনগণ জানে নীতীশ কুমার জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি কতটা সম্মান দেখান। এটি কোনো অপমানের উদ্দেশ্য ছিল না।” তবে বিরোধীরা এই যুক্তি মানতে নারাজ। তেজস্বী যাদব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী জাতীয় সঙ্গীতের অপমান করেছেন, কিন্তু বিজেপি নীরব। এটি তাদের দ্বিচারিতা প্রকাশ করে।”
এই ঘটনা বিহারের রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে নীতীশ কুমারের আচরণকে “শর্মজনক” ও “দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে, তাঁর সমর্থকরা বলছেন, এটি একটি অসাবধানতাবশত ঘটনা, যাকে রাজনৈতিকভাবে বড় করে দেখানো হচ্ছে। এই বিতর্ক নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং বিহারে এনডিএ সরকারের স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিরোধীরা এটিকে একটি বড় ইস্যু করে তাঁর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে চাইছে। আগামী দিনে এই মামলার শুনানি এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।