নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথিত ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’ কতটা মূল্যবান হয়ে উঠেছে ভারতের জন্য? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক হুঁশিয়ারির প্রেক্ষিতে এমনই প্রশ্ন তুললেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি এবং ভারতের বিরুদ্ধে শুল্ক বৃদ্ধির হুমকিকে ঘিরেই বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তিনি (Congress mocks Modi-Trump special bond)।
এক সাংবাদিক সম্মেলনে জয়রাম রমেশ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই গানটা জানেন, ‘দোস্ত দোস্ত না রাহা, ট্রাম্প ইয়ার হামেঁ তেরা অ্যায়তবার না রাহা।’ বন্ধুত্বের নামে এত লোকদেখানো অনুষ্ঠান হল, ‘হাউডি মোদী’, ‘নমস্তে ট্রাম্প’, এমনকি বলা হল ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’, আর তার ফল কী হল? আমেরিকা ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপাল, আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিল। এতেই স্পষ্ট, এই বন্ধুত্ব ভারতকে কতটা দাম চোকাতে বাধ্য করছে।”
জয়রাম রমেশের দাবি, বিদেশ মন্ত্রক (MEA) এখন বাধ্য হয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, কিন্তু এতদিন সরকার নীরবই ছিল। তিনি বলেন, “আমাদের আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক স্পষ্ট ভাবেই অবনমনের পথে।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি প্রচারসভায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে। সেই তেলের অনেকটাই আবার খোলা বাজারে বিক্রি করে মোটা লাভ করছে। ওরা কোনওদিন ভাবছে না, রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্র কতজন ইউক্রেনবাসীকে হত্যা করছে। এর ফলেই আমি ভারতের উপর শুল্ক বহুলাংশে বাড়িয়ে দেব।”
শুধু তাই নয়, ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন, ভারতের অর্থনীতি ‘মৃতপ্রায়’, এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার মাধ্যমে ভারত পরোক্ষভাবে ইউক্রেন যুদ্ধকে অর্থ জোগান দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষিতে ভারত সরকার জানিয়ে দেয়, আমেরিকার এই অবস্থান “অযৌক্তিক ও স্ববিরোধী”। অথচ মোদী সরকারের তরফে দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকার সঙ্গে ‘অবিশ্বাস্য কূটনৈতিক বোঝাপড়া’-র ছবি তুলে ধরা হয়েছিল।
জয়রাম রমেশ তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, “আজ CAP- চিন, আমেরিকা, পাকিস্তান-এই তিন শক্তি ভারতের জন্য নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। অথচ আমাদের বিদেশ নীতিতে সেই বাস্তবতা বোধহয় নেই। মোদী সরকার শুধু শো-অফে ব্যস্ত।”
তিনি আরও কটাক্ষ করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৩২-৩৩ বার ইউক্রেন যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ‘মধ্যস্থতার’ কথা বললেও প্রধানমন্ত্রী মোদী কখনও এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
কংগ্রেস নেতা মনে করিয়ে দেন, বন্ধুত্ব তখনই কাজ করে, যখন তা সম্মান এবং সমতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। শুধুমাত্র ‘ভোটবাজি’ বা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছবির জন্য বন্ধুত্ব দেখানো হলে, তার মূল্য চোকাতে হয় দেশবাসীকেই।