খরচ কমাতে বিপুল কর্মী ছাঁটাই করছে BSNL

সরকারি টেলিকম সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL) খরচ কমাতে এবং আর্থিক স্থিতি মজবুত করতে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। BSNL বোর্ড সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে,…

BSNL

short-samachar

সরকারি টেলিকম সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL) খরচ কমাতে এবং আর্থিক স্থিতি মজবুত করতে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। BSNL বোর্ড সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা প্রায় ১৮,০০০ থেকে ১৯,০০০ কর্মী ছাঁটাই করবে। সংস্থার আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা কর্মী সংকোচন নীতির একটি অংশ।

   

কেন এই সিদ্ধান্ত?

BSNL দীর্ঘদিন ধরেই আর্থিক চাপে রয়েছে। বাজারে বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলির প্রতিযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে পিছিয়ে পড়ার কারণে BSNL-এর আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। পাশাপাশি, সংস্থার পরিচালন খরচ দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশেষত, কর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধার ব্যয় BSNL-এর জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কর্মী সংকোচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কতজন কর্মীকে ছাঁটাই করা হবে?

BSNL বোর্ডের অনুমোদন অনুযায়ী, প্রায় ১৮,০০০ থেকে ১৯,০০০ কর্মীকে সংস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এই কর্মীরা মূলত অতিরিক্ত কর্মী হিসেবে বিবেচিত এবং তাদের কাজ সংস্থার বর্তমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে BSNL বছরে প্রায় ₹৮০০ থেকে ₹১,০০০ কোটি পর্যন্ত খরচ সাশ্রয় করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কর্মীদের প্রতিক্রিয়া

এই পদক্ষেপ BSNL-এর কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেক কর্মী এই সিদ্ধান্তকে অমানবিক বলে সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য পাওয়া গেলে এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ এড়ানো যেত। তবে, BSNL কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, কর্মীদের জন্য একটি স্বেচ্ছা অবসর স্কিম (VRS) চালু করা হবে, যাতে তারা আর্থিক ক্ষতি থেকে কিছুটা সুরাহা পেতে পারেন।

সংস্থার আর্থিক পরিস্থিতি

বর্তমানে BSNL বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা নিয়ে চলছে। সংস্থার ব্যালান্স শিট শক্তিশালী করতে এবং বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে এই পদক্ষেপকে অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে। BSNL-এর লক্ষ্য হলো খরচ কমিয়ে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠা এবং ৫জি পরিষেবা চালুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

সরকারের ভূমিকা

সরকার BSNL-এর আর্থিক পুনরুজ্জীবনের জন্য ইতিমধ্যেই একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ২০২৩ সালে BSNL-কে ₹১.৬৪ লক্ষ কোটির একটি পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। তবে, শুধুমাত্র সরকারের সাহায্যের উপর নির্ভর না করে সংস্থাকে নিজেদের খরচ এবং অপচয় কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

টেলিকম শিল্পের প্রতিযোগিতা

ভারতের টেলিকম শিল্প বর্তমানে জিও, এয়ারটেল এবং ভোডাফোন আইডিয়ার মতো বড় বেসরকারি সংস্থাগুলির দখলে। এই সংস্থাগুলি উন্নত প্রযুক্তি, সাশ্রয়ী পরিষেবা এবং বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে। BSNL, একসময় দেশের শীর্ষ টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী, এখন বাজারের একটি ক্ষুদ্র অংশ ধরে রেখেছে। এই পরিস্থিতি BSNL-এর ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

BSNL কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, কর্মী সংকোচনের মাধ্যমে সাশ্রয় করা অর্থকে প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং নতুন পরিষেবা চালুর জন্য ব্যবহার করা হবে। সংস্থা ৫জি পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা করছে, যা তাদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। এছাড়াও, গ্রামীণ এলাকায় পরিষেবা সম্প্রসারণের ওপর জোর দেওয়া হবে।

সমালোচনা ও বিতর্ক

BSNL-এর কর্মী সংকোচনের সিদ্ধান্ত বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সমালোচকরা বলছেন, সরকারের উচিত BSNL-এর জন্য আরও কার্যকর পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ ঘোষণা করা। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, BSNL-এর দীর্ঘমেয়াদী টিকে থাকার জন্য এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজনীয়।

BSNL-এর কর্মী সংকোচনের সিদ্ধান্ত একদিকে সংস্থার আর্থিক পুনরুজ্জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, অন্যদিকে এটি হাজার হাজার কর্মীর জীবনে এক বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার এবং BSNL কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে যে, এই কর্মীদের জন্য যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যদি BSNL এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের আর্থিক পরিস্থিতি উন্নত করতে পারে, তবে এটি সংস্থার জন্য একটি নতুন সূচনা হতে পারে।