মিউজিক জগতের বিশাল ক্ষতি হলো সারদা সিনহার (Sharda Sinha) মৃত্যুতে। বিহারের লোকসংস্কৃতির প্রকৃত রূপ তুলে ধরে নিজের শক্তিশালী কণ্ঠ ও আবেগপূর্ণ সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। বিখ্যাত এই গায়িকা এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারপ্রাপ্ত সারদা সিনহা ৭২ বছর বয়সে দিল্লির এইমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর পুত্র, অংকুশ সিনহা কয়েকদিন আগেই মা’র সংকটজনক অবস্থার কথা জানিয়ে সকলের প্রার্থনা কামনা করেছিলেন। সারদা সিনহার অবদান শুধুমাত্র তাঁর পুরস্কারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাঁর গান ভারতীয় লোকসংগীতকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে গিয়েছে এবং বহু প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে।
২০১৭ সাল থেকে সারদা সিনহা একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সেই সময় তাঁর ম্যালিগন্যান্ট মেলোমা নামে একটি বিশেষ ধরনের ক্যান্সার ধরা পড়ে যা মূলত অস্থিমজ্জাকে প্রভাবিত করে। এছাড়া, গত সেপ্টেম্বর মাসে ব্রেন হেমারেজে তাঁর স্বামী ব্রজ কিশোর সিনহার মৃত্যু তাঁর জীবনে আরও শোকের ছায়া এনে দিয়েছিল। জীবনের শেষ দিকে তিনি অনেক চড়াই-উতরাই পার করলেও তাঁর সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা কখনো কমেনি। সারদা সিনহা পুত্র অংকুশ এবং কন্যা বন্দনাকে রেখে গেছেন।
সারদা সিনহার জন্ম ১৯৫২ সালের ১ অক্টোবর বিহারে। তাঁর গানের শুরু ছোটো থেকেই এবং খুব অল্প বয়সেই তিনি তাঁর গানের মাধ্যমে বিহারের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ‘বিহার কোকিলা’ নামে সম্বোধন করা হতো তাঁকে, যা তাঁর প্রতি মানুষের গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন। তিনি প্রধানত মৈথিলী এবং ভোজপুরী ভাষায় গান গাইতেন এবং তাঁর গান বিহারের সীমানা ছাড়িয়ে দেশের নানা প্রান্তে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তাঁর ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত গীত ‘পহেল পহেল হম কাইনি ছাঠ’ গভীর আবেগের সৃষ্টি করেছিল এবং বহু মানুষের হৃদয়ে আত্মীয়তা ও ভালোবাসার অনুভূতি জাগ্রত করেছিল।
লোকসংগীতের প্রতি তাঁর এই অমোঘ আকর্ষণ ছাড়াও, সারদা সিনহা বলিউডেও তাঁর অবদান রেখেছেন। ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ ছবির জন্য ‘কাহে তোহ সে সাজনা’ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি, যা বলিউডের অন্যতম হিট গান হিসেবে পরিচিত। তাঁর এই অনন্য লোকসুর ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ ছবিতেও দেখা গেছে, যেখানে ‘তার বিজলি’ গানটির মাধ্যমে সারদা সিনহার কণ্ঠস্বর সকলের মন ছুঁয়েছে। এছাড়া, ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিতে ‘বাবুল জো তুম নে শিখায়া’ গানের তাঁর পরিবেশনা দর্শকদের মধ্যে আবেগের ঝড় তুলে দেয়।
সারদা সিনহার প্রয়াণে বিহার তথা সারা দেশের সংগীতপ্রেমী মানুষ শোকস্তব্ধ। তাঁর অবদান শুধু সঙ্গীত জগতে নয়, বরং ভারতীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন স্তরে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে।