বাঙালি বিরোধিতায় এবার হিমন্ত-কুনাল রাজনৈতিক তরজা শুরু

Advertisements অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার (Himanta) একটি বিতর্কিত মন্তব্য বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তিনি বলেছেন, “মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা লিখলেই বোঝা যাবে…

Himanta and Kunal clash on bengali language

Advertisements

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার (Himanta) একটি বিতর্কিত মন্তব্য বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তিনি বলেছেন, “মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা লিখলেই বোঝা যাবে আসামে কত বিদেশি আছে।” এই মন্তব্যের পর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুনাল ঘোষ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে বাঙালি ও বাংলা ভাষা বিরোধী মনোভাবের অভিযোগ তুলেছেন।

   

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “বাংলা আমাদের মাতৃভাষা নয়? পশ্চিমবঙ্গবাসী, ভারতবাসী নই? আর যদি ওরা বাংলাদেশের কথা বলে, তাহলে অমিত শাহর বিএসএফ থাকতে বেআইনি অনুপ্রবেশ হয় কী করে?” এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে নতুন দ্বন্দ্বের সূচনা করেছে।

হিমন্তর মন্তব্য (Himanta)

অসমের মুখ্যমন্ত্রী (Himanta) হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি একটি ছাত্র সংগঠনের নেতার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, জনগণনার সময় মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা লিখলে তা রাজ্যে ‘বিদেশি’দের সংখ্যা নির্ধারণে সহায়ক হবে। এই বক্তব্যে আসামের বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার বাসিন্দারা নিজেদের অপমানিত বোধ করছেন।

১৯৬১ সালে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনের সময় শিলচরে ১১ জন ভাষা শহীদ প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁদের স্মরণে শিলচর রেলস্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে ‘শিলচর ভাষা শহীদ স্টেশন’। এমন ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে হিমন্তর মন্তব্য বাঙালি সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত আঘাতকর বলে মনে করা হচ্ছে।

কুনাল ঘোষের তীব্র প্রতিবাদ

তৃণমূল কংগ্রেসের (Himanta)মুখপাত্র কুনাল ঘোষ সামাজিক মাধ্যমে এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “এটা একটা বাঙালি-বাংলা বিরোধী দল বিজেপির ষড়যন্ত্র। বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব, আমাদের পরিচয়। এটা বলার মানে কী যে বাংলা লিখলেই বিদেশি? এটা ভারতের নাগরিকদের প্রতি অপমান।”

তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে বিএসএফ থাকা সত্ত্বেও বেআইনি অনুপ্রবেশ রোধে ব্যর্থতার দায় কার। কুনালের এই বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে।বাঙালি (Himanta)সম্প্রদায়ের ক্ষোভআসামের বাঙালি সম্প্রদায় এই মন্তব্যকে ‘ভাষাগত বৈষম্য’ হিসেবে দেখছে।

সামাজিক মাধ্যমে (Himanta) একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বাংলা ভাষা আমাদের পরিচয়। এটা বলা যে বাংলা লিখলেই বিদেশি, এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।” আসামের বরাক উপত্যকায় বাঙালিরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য লড়াই করে আসছেন। ১৯৬০ সালে অসমিয়া ভাষাকে রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে হিমন্তর মন্তব্যকে বাঙালি সম্প্রদায় ‘ভাষাগত বিদ্বেষ’ হিসেবে দেখছে।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নতুন মোড়

এই ঘটনা অসম ও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন দ্বন্দ্বের সূচনা করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে বাঙালি-বিরোধী অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গে জনমত গঠনের চেষ্টা করছে। তৃণমূল সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আসামে ভাষাগত বিবাদ (Himanta) মাথাচাড়া দিয়েছে।” অন্যদিকে, বিজেপির সমর্থকরা হিমন্তর মন্তব্যকে বেআইনি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান হিসেবে দেখছেন। তবে এই বিষয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

অ্যান্ডি রদ্রিগেজকে দলে টানার পথে গতবারের ডুরান্ড জয়ীরা ‌

বেআইনি অনুপ্রবেশ কার দায়?

কুনাল ঘোষের (Himanta) প্রশ্নে উঠে এসেছে বেআইনি অনুপ্রবেশের বিষয়। তিনি বলেন, “অমিত শাহের বিএসএফ থাকতে কীভাবে বেআইনি অনুপ্রবেশ হচ্ছে? এর দায় কার?” আসামে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠে আসছে।

বিজেপি সরকার এনআরসি এবং সিএএ-র মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও, বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, হিমন্তর মন্তব্য বাঙালি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে করা হয়েছে, যা ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আঘাত।

হিমন্ত বিশ্ব শর্মার (Himanta) মন্তব্য এবং কুনাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সূচনা করেছে। বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয় নিয়ে এই বিতর্ক শুধু আসামের বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যেও ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। আগামী দিনে এই ইস্যু কীভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক মাত্রা নেয়, তা নিয়ে সকলের নজর রয়েছে।