দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। অবশেষে পদ্মা-মেঘনার রূপালি ইলিশ (Hilsa) আবারও আসছে এ বাংলার বাজারে। দুর্গাপুজোর আগে ভোজনরসিক বাঙালির রসনাতৃপ্তির জন্য সুখবর শোনাল বাংলাদেশ সরকার। প্রতিবেশী দেশটি এ বছরও সীমিত পরিমাণে ভারতে ইলিশ (Hilsa) রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে আবারও পদ্মার ইলিশের চাহিদা পূরণ হবে বলে আশা করছেন পাইকার ও খুচরো ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ। সোমবার বিকেলে তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “বাংলাদেশ সরকার দুর্গাপূজোর আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আশা করি, এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং এ বাংলার মানুষের উৎসবের আনন্দ বাড়িয়ে দেবে।”*
ইলিশপ্রেমীদের মুখে হাসি
প্রতিবছরের মতো এ বছরও দুর্গাপুজোর আগে ইলিশ(Hilsa) নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, এ বছর হয়তো পদ্মার ইলিশ আর আসবে না। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারের এই সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত রাজ্যের ইলিশপ্রেমীরা। কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও নদিয়ার বাজারে ইতিমধ্যেই খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
শুধু ভোক্তারাই নন, রাজ্যের পাইকারি মাছ (Hilsa) ব্যবসায়ীরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। তাঁরা মনে করছেন, বাংলাদেশি ইলিশ এলে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে, ফলে দামও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কলকাতার চাঁদনি বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, “প্রতি বছরই দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এলে বাজার জমে ওঠে। এ বছরও আশা করছি, পদ্মার রূপালি আমাদের ব্যবসায় রঙ আনবে।”
রপ্তানির সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কৌশল
বাংলাদেশ সরকার সাধারণত বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে, বিশেষত দুর্গাপুজোর আগে সীমিত পরিমাণে ভারতে ইলিশ (Hilsa) রপ্তানির অনুমতি দেয়। এর মাধ্যমে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হয় বাংলাদেশ।
জানা গেছে, এবারও প্রায় ৩,০০০ মেট্রিক টন ইলিশরপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ঢাকা।
দামের সম্ভাবনা কেমন
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ (Hilsa) রপ্তানির ঘোষণা হতেই অনেকেই ভাবছেন, দাম কি কিছুটা কমবে? বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশি ইলিশ আসলেও প্রাথমিক পর্যায়ে দাম খুব একটা কমবে না। কারণ চাহিদা বেশি, যোগান সীমিত। তবে দ্বিতীয় চালানে ইলিশ এলে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন ক্রেতারা।
কলকাতার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির এক পদস্থ কর্তা জানান, *“বাংলাদেশি ইলিশের স্বাদ অন্যরকম। তাই দাম কিছুটা বেশি হলেও ক্রেতাদের চাহিদা সবসময়ই থাকে। আমরা আশা করছি, এবার ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১,৫০০ থেকে ১,৭০০ টাকার মধ্যে থাকবে। ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশের চাহিদাই সবথেকে বেশি।”*
বাঙালির আবেগে ইলিশ
ইলিশ বাঙালির জীবনে শুধু মাছ নয়, এক আবেগ। দুর্গাপুজোর আগে ইলিশের পদ যেন বাঙালির খাওয়াদাওয়ার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পুজোর কেনাকাটা, সাজগোজের পাশাপাশি মেনুতে ইলিশ থাকলে উৎসবের আনন্দ যেন আরও বেড়ে যায়। আর পদ্মা-মেঘনার ইলিশের স্বাদ যে একেবারে অনন্য, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই
বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তে শুধু বাজারই জমে উঠবে না, দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনও আরও দৃঢ় হবে। সীমান্ত পেরিয়ে পদ্মার রূপালি ইলিশ এলে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে উৎসবের আমেজ আরও বাড়বে। দুর্গাপুজোর আগে রূপালি সুখবর বাঙালির মন ভালো করে দিয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা—কবে বাজারে ভেসে উঠবে সেই প্রতীক্ষিত পদ্মার ইলিশ।