উত্তর প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অজয় রাই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (Ajay Rai) বিরুদ্ধে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। আরএসএসের তিন সন্তান নীতির প্রস্তাবের সমালোচনা করতে গিয়ে রায় সংঘকে ‘বিধবাদের সংগঠন’ বলে কটাক্ষ করেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, আরএসএস সরকারকে পর্দার আড়াল থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই মন্তব্য ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং আরএসএসের তীব্র ক্ষোভের কারণ হয়েছে, এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে।শুক্রবার, এক সাক্ষাৎকারে অজয় রায় আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত তিন সন্তান নীতির প্রস্তাব করেন।
তার প্রতিক্রিয়ায় রাই বলেন, “আরএসএস এমন রীতি মেনে চলতে বলছে, যা তারা নিজেরা পালন করে না। তারা তিন সন্তানের কথা বলে, কিন্তু আরএসএসে তো মহিলাই নেই। এটি একটি বিধবাদের সংগঠন। প্রথমে তাদের সদস্যদের বিয়ে করে সন্তান উৎপাদনের নির্দেশ দেওয়া উচিত।” এই মন্তব্যকে অত্যন্ত অশোভন এবং আপত্তিকর বলে মনে করা হচ্ছে, যা আরএসএস এবং বিজেপির কাছে ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অজয় রাইয়ের এই মন্তব্যের পটভূমি হলো মোহন ভাগবতের সাম্প্রতিক বক্তব্য, যেখানে তিনি ‘১০০ বর্ষ কী সংঘ যাত্রা’ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে, জাতীয় স্থিতিশীলতা এবং সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রতিটি ভারতীয় পরিবারে তিনটি সন্তান থাকা উচিত।
রাই এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, আরএসএস এমন নীতি প্রচার করছে, যা তারা নিজেরা অনুসরণ করে না। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, আরএসএস সরকারের পিছনে থেকে নীতি নির্ধারণ করছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে।
অজয় রাইয়ের রাজনৈতিক পটভূমিও এই বিতর্কে যুক্ত হয়েছে। তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন আরএসএসের কর্মী হিসেবে এবং পরে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) আহ্বায়ক ছিলেন।
১৯৯৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত তিনি বিজেপির টিকিটে উত্তর প্রদেশের কোলাসলা আসন থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে বিজেপি তাঁকে লোকসভা নির্বাচনের টিকিট না দেওয়ায় তিনি দল ছেড়ে সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেন এবং পরে ২০১২ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন।
কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারাও আরএসএসের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা অভিযোগ করেছেন যে, আরএসএস স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল এবং মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের বিরোধিতা করেছিল। তবে, অজয় রায়ের এই মন্তব্যকে অনেকে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক বলে মনে করছেন, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের সীমা লঙ্ঘন করেছে।
আরএসএসের এক মুখপাত্র বলেছেন, “এই ধরনের মন্তব্য কেবলমাত্র কংগ্রেসের হতাশা প্রকাশ করে। আমরা জাতীয় স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি, এবং এই ধরনের অপমানজনক মন্তব্য আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।” তারা আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করছে বলেও জানিয়েছেন।
শ্রমশ্রীকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে পুরুলিয়া স্টেশনে ভিনরাজ্যের পথে পরিযায়ী যুবকের ঢল
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, অজয় রাইরের এই মন্তব্য কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ চাপ এবং বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণাত্মক কৌশলের ফল। তবে, এই ধরনের ভাষা রাজনৈতিক সংলাপের মান নষ্ট করতে পারে এবং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এই বিতর্ক কীভাবে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করবে, তা দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।