Tripura: নীরবে সন্ত্রাসবাদের বিষদাঁত ভাঙা মানিক সরকার রাজনৈতিক ডামাডোলে চুপ, ঝড়ের ইঙ্গিত

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: আশ্চর্যরকম নীরবতা। ত্রিপুরার (Tripura) প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নীরব। শনিবার যে রাজনৈতিক ডামাডোল ঘটতে চলেছে সেটি বিরোধী দলনেতা হিসেবে আগেই জানতেন এমনই গুঞ্জন…

Manik Sarkar

প্রসেনজিৎ চৌধুরী:

আশ্চর্যরকম নীরবতা। ত্রিপুরার (Tripura) প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নীরব। শনিবার যে রাজনৈতিক ডামাডোল ঘটতে চলেছে সেটি বিরোধী দলনেতা হিসেবে আগেই জানতেন এমনই গুঞ্জন শাসক বিজেপি ও বিরোধী দল সিপিআইএমের মধ্যে। তবুও মুখ্যমন্ত্রী বদলের পর রাজনৈতিক ঝঞ্ঝাময় পরিস্থিতিতে বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের মুখে টুঁ শব্দটি নেই।

   

এই নীরবতা শাসক বিজেপি দলের কাছেও অসহনীয় ঠেকছে! কেন মানিকবাবু নীরব? বিজেপির ত্রিপুরা রাজ্য নেতৃত্ব ও দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতারা তাতেই আশ্চর্য। দীর্ঘ আড়াই দশক মানিকবাবুর বিরোধী কংগ্রেস নেতারা এখন বিজেপির মন্ত্রী, বিধায়ক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলছেন, উনি যেরকম ব্যক্তি তেমনই আচরণ করেছেন। তবে এতটা নীরবতা সত্যিই আশ্চর্যের।

যদিও মুখ্যমন্ত্রী বদলের পর ত্রিপুরার প্রধান বিরোধী দল সিপিআইএম প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। দলটির ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেছেন, সরকারের দূর্বলতা ঢাকতে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বদল রাজনৈতিক নাটক। এই জোট সরকার পতনের মুখে। কিন্তু বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার শনিবার সবকিছু থেকে যেন দূরে। তিনি কী বলবেন? বিধানসভায় নতুন মুখ্যমন্ত্রী ড.মানিক সাহার মুখোমুখিয়ে হবেন নিশ্চিত। ত্রিপুরা বিধানসভায় জোড়া মানিক দেখা যাবে। এমনই জল্পনা পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে। আগরতলা থেকে নয়াদিল্লি এমনকি প্রতিবেশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলেও চলেছে চর্চা।

তিনদিকে বাংলাদেশের সীমাম্ত ও একদিকে মিজোরাম ও অসমের আন্ত:রাজ্য সীমানা দিয়ে ঘেরা ত্রিপুরা। কূটনৈতিক মহলের বরাবরের গুঞ্জন, আগরতলায় ফিসফিস করে কিছু বললে ঢাকায় নাকি বেশ জোরে শুনতে পাওয়া যায়! দীর্ঘ সময় মুখ্যমন্ত্রী থাকায় মানিক সরকার এই প্রক্রিয়ায় বিশেষ রপ্ত। তিনি মেপে কথা বলবেন।

Manik Sarkar

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে টানা কুড়ি বছর ছিলেন সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। আর বামফ্রন্ট সরকারের টানা মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ‘অত্যন্ত সাধারণ’ মানিক সরকার তেমন পরিচিত ছিলেন না দেশ জুড়ে। তবে সিপিআইএমের শীর্ষ নেতা হিসেবে দলীয় স্তরে তিনি একরকম ফেরেস্তা!

সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও বিশেষ ক্ষেত্রে গলায় লাল স্কার্ফ এই পোশাকে ত্রিপুরার ‘ফেরেস্তা’ আচমকা দেশজুড়ে আলোচিত হন ২০১৮ সালে বিধানসভা ভোটের আগে। সর্বভারতীয়স্তরে মানিক সরকারের বিষয়ে দুটি কথা গুরুত্বপূর্ণ হয়েছিল, তিনি দেশের ‘গরীব মুখ্যমন্ত্রী’, যাঁর নিজের বাসস্থান নেই। দলীয় ভাতায় জীবন চালান। দ্বিতীয়টি হলো, ভয়ঙ্কর উপজাতি সন্ত্রাসবাদের বিষদাঁত তিনিই নীরবে ভেঙে দেন।

দশকের পর দশক ত্রিপুরা গণহত্যা, উপজাতি সন্ত্রাসবাদে রক্তাক্ত হয়েছিল। উপজাতি উগ্র আবেগ ঠাণ্ডা করতে ত্রিপুরার প্রথম কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী উপজাতি স্বশাসিত অঞ্চল গঠন করেন (Tripura Tribal Autonomous District Council) বা এডিসি। কিন্তু নৃপেন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সেই বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পর ত্রিপুরায় ফের কংগ্রেস সরকার গঠন করেছিল।

কংগ্রেসের এই আমলে গোষ্ঠিদ্বন্দ্বে পরপর দুজন মুখ্যমন্ত্রী হন। সেই পুরো আশি ও নব্বই দশকে ত্রিপুরা ছিল ভয়াবহ উপজাতি সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র। ক্ষমতার পরিবর্তন হয় ১৯৯৩ সালে। ফের বামফ্রন্ট সরকার গঠন করে। মু়খ্যমন্ত্রী হন উপজাতি ও ত্রিপুরাবাসীর মধ্যে জনপ্রিয় কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা দশরথ দেব। কিন্তু উপজাতি সন্ত্রাসবাদ থামেনি। দশরথ দেবের পর ১৯৯৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী হন মানিক সরকার।

Manik Sarkar

ক্ষমতায় আসার পর শীর্ণকায় মানিক সরকার প্রশাসনিকভাবে উপজাতি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করেছিলেন নীরবে। আবার সিপিআইএম দলগতভাবে দুটি উপজাতি জঙ্গি সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (NLFT) ও অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (ATTF) এর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে নামে। বস্তুতপক্ষে ভারতে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে গবেষকদের বেশিরভাগই মনে করেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘাতে যাওয়া দল হলো সিপিআইএম। তারা পাঞ্জাবে যেমন খালিস্তানিদের বিরুদ্ধে ক্যাডার নামিয়েছিল তেমনই ত্রিপুরায় সংগঠনের ভিত মজবুত থাকায় প্রতিরোধ ছিল প্রবল।প্রশাসনিক ও দলগতভাবে ত্রিপুরার মানিক সরকার সন্ত্রাসবাদের বিষদাঁত উপড়ে নিয়েছিলেন। সবই তিনি নীরবে করেন।

এমন মানিক নীরবে থাকবেন নাকি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বদল নিয়ে আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক মন্তব্য করবেন তাও চর্চিত।