জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ (abdullah) সোমবার বলেছেন, সম্প্রতি পাকিস্তানের গোলাগুলির কারণে রাজ্যে একটি ‘যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি’ সৃষ্টি হয়েছিল, যার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পুঞ্চ জেলায়। তিনি জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি সামরিক বোঝাপড়া কার্যকর হওয়ায় যারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তারা এখন ফিরে আসতে পারেন।
আবদুল্লাহ বলেছেন (abdullah)
আবদুল্লাহ (abdullah) পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর চলমান প্রচারণাকেও উড়িয়ে দিয়েছেন, বলেছেন যে প্রতিবেশী দেশটি তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাবে, কিন্তু বিশ্ব বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত। এখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আবদুল্লাহ বলেন, “সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের এখন তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
পুঞ্চ শহরের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ এখন খালি। গোলাগুলির সময় তারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এখন যেহেতু গোলাগুলি বন্ধ হয়েছে, তারা তাদের বাড়িতে ফিরে আসতে পারেন।” সাম্প্রতিক পাকিস্তানি গোলাগুলি জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ-রাজৌরি সেক্টরে তীব্র আকার ধারণ করেছিল, যার ফলে স্থানীয় সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পুঞ্চ জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অনেকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এই গোলাগুলির প্রেক্ষিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী দৃঢ়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, জঙ্গি বাঙ্কার এবং পাকিস্তানি সামরিক অবস্থান ধ্বংস করে।
অপারেশন সিঁদুর
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর ’-এর অংশ হিসেবে পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটি এবং জঙ্গি শিবিরগুলোতে হামলা চালানো হয়, যা পহেলগাঁওয়ে গত মাসে ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়েছিল।
ভারতীয় ক্রিকেট বিপদে? সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে দুটি বড় স্টেডিয়ামে বোমা হামলার হুমকি
মুখ্যমন্ত্রী আবদুল্লাহ জানান
মুখ্যমন্ত্রী আবদুল্লাহ (abdullah) জানান, ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ১০ মে বিকেল ৫টা থেকে সীমান্তবর্তী গোলাগুলি এবং বিমান অনুপ্রবেশ বন্ধ করার বিষয়ে একটি বোঝাপড়া হয়েছিল। তবে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই চুক্তি লঙ্ঘন করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার গোলাগুলি এবং ড্রোন অনুপ্রবেশ শুরু করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এই লঙ্ঘনের জবাবে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেছে যে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে তারা আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
আবদুল্লাহ (abdullah) পাকিস্তানের প্রচারণাকে ‘মিথ্যাচার’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “পাকিস্তান তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাবে। তারা এটি করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু বিশ্ব জানে বাস্তবতা কী। তারা জঙ্গিদের আশ্রয় দেয় এবং তাদের সমর্থন করে।”
তিনি (abdullah) আরও বলেন, পুঞ্চের বাসিন্দাদের এখন নিরাপদে ফিরে আসার জন্য প্রশাসন সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে। তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্বাসন এবং পুনর্গঠন কার্যক্রম দ্রুত শুরু করে।
পুঞ্চ জেলায় গোলাগুলির ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়িঘর এবং পরিকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, এবং স্থানীয় অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবদুল্লাহ (abdullah) বলেন, “আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে আছি। তাদের জন্য ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের চলমান উত্তেজনা
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আরও তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন এবং সীমান্তবর্তী গোলাগুলি অঞ্চলের শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমরা দুর্বল। পাকিস্তান যদি এই ধরনের উসকানি চালিয়ে যায়, তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী যথাযথ জবাব দেবে।”
‘অপারেশন সিঁদুর ’-এর অধীনে ভারত পাকিস্তানের ১১টি বিমান ঘাঁটি এবং নয়টি জঙ্গি শিবির ধ্বংস করেছে, যা পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর নির্ভুল হামলা এবং ‘আকাশতীর’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাকিস্তানের আগ্রাসন প্রতিহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই অভিযানে ১০০ জনেরও বেশি জঙ্গি নিহত হয় এবং পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর ২০ শতাংশ পরিকাঠামো ধ্বংস হয়।
জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ শান্তি চায়
মুখ্যমন্ত্রী আবদুল্লাহ (abdullah) জোর দিয়ে বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ শান্তি চায়, এবং রাজ্য সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের জনগণের পাশে আছি। পুঞ্চের মানুষ যে কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছে, তা থেকে তাদের পুনরুদ্ধারে আমরা সব ধরনের সহায়তা দেব।” তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না হয়ে সরকারের উপর ভরসা রাখার আহ্বান জানান।
এই ঘটনা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন এবং সীমান্তবর্তী অস্থিরতার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। ভারতের কঠোর পদক্ষেপ এবং সামরিক সক্ষমতা পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে এই ধরনের উসকানি সহ্য করা হবে না। পুঞ্চের বাসিন্দাদের ফিরে আসার প্রক্রিয়া শুরু হলেও, অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টার প্রয়োজন।