মণিপুরে নগ্ন মহিলাদের হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ঘিকে তীব্র বিতর্কে সে রাজ্যের বিজেপি ও কেন্দ্রের মোদী সরকার। সংসদে চলছে বাকযুদ্ধ। এর মাঝে এলো হাড়হিম করা পরিসংখ্যান।
উপজাতি ছাত্র ফেডারেশন আরও দাবি করেছে যে ৩ মে থেকে জাতিগত সংঘর্ষের সময় ২৭ জন মহিলার মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭ জন, ৮ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, ২ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, বাকিদের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।
২৩ জুলাই ভাইপেই পিপলস কাউন্সিল (Vaipei People’s Council), ইয়ং ভাইপেই অ্যাসোসিয়েশন (Young Vaipei Association), জোমি স্টুডেন্টস ফেডারেশন (Zomi Students Federation) এবং কুকি স্টুডেন্টস ফেডারেশন (Kuki Students Federation) দাবি করেছে যে মণিপুরে হিংসার শুরুর পর থেকে ৭ কুকি-জোমি মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সংগঠনগুলি জানিয়েছে, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের। প্রত্যেক কণ্ঠে গর্জে ওঠার সুর। প্রত্যেক হৃদয়ে নির্যাতিতা দুই মহিলার পাশে থাকার অঙ্গিকার হোক।
মণিপুরের ঘটনা (Manipur Violence) নাড়িয়ে দিয়েছে সমগ্র ভারতকে। প্রতিবাদে কলম (টুইট) ধরেছেন দেশের সব স্তরের মানুষ। বিজেপি শাসিত মণিপুরে রক্তাক্ত সংঘর্ষে শতাধিক নিহত। সংঘর্ষের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi) নীরব ছিলেন। দুই মহিলা নগ্ন করার ভিডিও বিতর্কে মুখ খুলেছেন তিনি। প্রতিক্রিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হৃদয় কাঁদার’ বার্তা, সকলেই দাঁড়িয়েছেন দুই মহিলার পাশে।
সেই ভাইরাল ভিডিও তে দেখা গিয়েছে দুই মহিলাকে নগ্ন করে এলাকায় ঘোরানো হচ্ছে। প্রায় ৩০-৪০ জন জড়িত এই কাজে। ঘোরানোর সময় মহিলাদের শ্লীলতাহানি করতে দেখা যাচ্ছে যুবকদের। ঘোরানোর পর দুজনের মধ্যে এক নির্যাতিতাকে গণধর্ষণও করা হয় বলে অভিযোগ। তার ১৯ বছরের ভাই বাধা দিতে গেলে তাকে হত্যা করা হয়।
ঘটনার আড়াই মাস পর বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম গ্রেফতার হয়। ঘটনার মূল অভিযুক্ত ৩২ বছরের হুরেম হেরাদাস সিং কে গ্রেফতার করা হয়। সবুজ রঙের টি-শার্ট পড়া হুরেম কে ভিডিওতে দেখা যায় দুজনের মধ্যে এক নির্যাতিতাকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে। গ্রেফতার হওয়ার পরই ক্ষিপ্ত জনতা-মহিলারা তার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। কেন্দ্র থেকে টুইটার এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মদের ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এই বিষয় মুখ খুললেন দুজনের মধ্যে এক নির্যাতিতার স্বামী। নির্যাতিতার স্বামী একজন কার্গিল যুদ্ধের সৈনিক। বিষণ্নতার সঙ্গে জানিয়েছেন যে দেশকে রক্ষা করতে পারলেও পারেননি তার স্ত্রীর সম্মান বাঁচাতে। নির্যাতিতার স্বামী অসম রেজিমেন্টের সুবেদার হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন।
তিনি জানান, “আমি কার্গিল যুদ্ধে দেশের জন্য লড়াই করেছি এবং ভারতীয় শান্তি রক্ষা বাহিনীর (Indian Peace Keeping Force)অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কায়ও ছিলাম। আমি দেশকে রক্ষা করেছি কিন্তু আমি হতাশ যে আমার অবসর গ্রহণের পর আমি আমার বাড়ি, আমার স্ত্রী এবং গ্রামবাসীদের রক্ষা করতে পারিনি। আমি দুঃখিত, বিষণ্ণ।“ এক হিন্দী সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে নির্যাতিতার স্বামী ওই হিন্দি সংবাদমাধ্যমকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
নির্যাতিতার স্বামী জানান ৪ মে সকালে উত্তেজিত জনতা এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং ওই দুই নারীর পোশাক খুলে গ্রামের রাস্তায় লোকের সামনে হাঁটায়। তিনি অভিযোগ করেন, “পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যারা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, নারীদের অপমান করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।“
মণিপুরের ভয়ঙ্কর ভিডিও সামনে আসার পর থেকে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ভিডিওতে দেখা যায় দু’জন মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানো হচ্ছে। ভিডিও দেখে শিহরিত গোটা দেশ। মণিপুরের ঘটনায় ইতিমধ্যেই স্বতঃপ্রণদিত মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার দু-মাস পর গ্রেফতার হয়েছে মূল অভিযুক্ত। ঘটনার নিন্দা এবং শোকপ্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘মণিপুরে যা হচ্ছে তার জন্য আমি ব্যথিত। আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত।’