স্কুল-প্রেম-ভালোলাগা-বন্ধুত্বমাখা কেমন ছিল ছোটবেলায় তারকাদের সরস্বতী পুজো

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়: আমাদের সময় সরস্বতীপুজো মানে ছিল ভ্যালেন্টাইন ডে। তিনদিনের প্রেম আর অনেকটা ভালোলাগা। তবে হ্যাঁ সেই প্রেম আমার সঙ্গে হয়েছে এমনটা নয়, বন্ধুদের হত।…

tollywood-star-shared-childhood-memory-of-saraswati-puja

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়: আমাদের সময় সরস্বতীপুজো মানে ছিল ভ্যালেন্টাইন ডে। তিনদিনের প্রেম আর অনেকটা ভালোলাগা। তবে হ্যাঁ সেই প্রেম আমার সঙ্গে হয়েছে এমনটা নয়, বন্ধুদের হত। আর এখন তো আবার প্রেমের জন্যও আলাদা দিন আছে। মনে আছে আগে বাড়িতে পুজো দিতাম তারপর স্কুলে যেতাম। দুপুরের পর সেখানে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানও হত। আর যেদিকে তাকাই ছোট থেকে বড় সব মেয়েরা হলুদ শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

যীশু সেনগুপ্ত: আমাদের বাড়িতে খুব বড় করে পুজো হত। তাছাড়া সারা বছরের ইউনিফর্ম থেকে একটা দিনের মুক্তি মিলত। পুজোর দিন শাড়ি-পাঞ্জাবিতে সবাইকেই অন্যরকম লাগে। মনে হয়, একে এরকম দেখতে নাকি! এই বয়সে এসে সেটা বুঝতে পারি। তখন না বুঝে ভালো লাগত, এখন বুঝে ভালো লাগে।যাই হোক এখন বাড়িতে দুই মেয়ে পুজোর আয়োজন করে। জোগাড় থেকে শুরু করে পুজো, ওরাই একা হাতে আয়োজন করে সব। মা-বাবা হিসেবে পিছনে দাঁড়িয়ে সেই পুজো দেখতে আমাদের দারুণ লাগে।

   

ঋতুপর্না সেনগুপ্ত: সরস্বতী পুজো মানেই তাড়াতাড়ি স্নান করে, বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে অঞ্জলি দিতে হবে। অঞ্জলি দেওয়ার সময় অন্য পাড়ার ছেলেরা আসত। তখন তাদের সঙ্গে চোখাচোখি হত। বুক দুরুদুরু করত তাতেই। ছেলেদের ছোট ছোট চিরকুট নিয়েও নানা উত্তেজনায় কাটাতাম আমরা মেয়েরা। এরমধ্যে একটু লুকিয়ে কেউ যদি কাউকে বলত, ‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে এই শাড়িটায়’ বা ‘খুব সুন্দর লাগছে তোমার চুলের ফুলটা’—ব্যস, আরও মাখো-মাখো অবস্থা! তাছাড়া আমাদের বাড়ি পুজো হত যেমন, তেমনই পাশের বন্ধুদের বাড়িতে পুজো হত। সব বন্ধুরা মিলে বিকেলে দলবেঁধে প্রসাদ খেতে যেতাম অন্যদের বাড়ি। ছোটবেলার আমাদের পাড়ায় একটা কমিউনিটি মতন ছিল, সেখানে বড় করে সরস্বতী পুজো হত। সেই পুজোর বিশেষ আকর্ষণ ছিল সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাড়ার প্রত্যেকে আমরা অপেক্ষা করতাম সরস্বতী পুজো কবে আসবে। এক মাস আগে থেকে মহড়া চলত। আমরা কেউ গান, কেউ নাচ, কেউ নাটকের দলে যোগ দিতাম। খুব মজা হত। আমি নাচতাম।

বনি সেনগুপ্ত: ছোটবেলায় প্রচণ্ড উত্তেজিত থাকতাম যে কতক্ষণে বাড়িরার পুজো শেষ করে স্কুলে যাব। কারণ ওই একটামাত্র দিন স্কুলে কোনও ইউনিফর্ম পরে যাওয়ার ব্যাপার ছিল না। সরস্বতী পুজোর দিন সব মেয়েরা শাড়ি পরে আসত, ওদের আরও সুন্দর দেখতে লাগত। তাই প্রত্যেক বছর সরস্বতী পুজোয় ইনফ্যাচুয়েশন মতো হতই। ওটা একটা আলাদাই অনুভূতি ছিল। স্কুলের পুজো শেষ হওয়ার পর তো বন্ধুদের বাড়ি ছিলই। সেখানে যাওয়া, প্রসাদ খাওয়া, দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সারা। ভীষণ মজা হত।

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়: মেয়েদের স্কুলে কে নেমন্তন্ন করতে যাবে সেটা নিয়ে একটা প্রতিযোগীতা চলত ছাত্রদের মধ্যে। প্রথমবার মেয়েরা শাড়ি পরবে, দেখতেই ভালো লাগত। আর হ্যাঁ, বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনে অনেকে পুজো দিতে আসতেন। অঞ্জলির ফুল দেওয়ার দায়িত্ব পড়ত আমাদের ওপর। সরস্বতী পুজো মানে, যাকে পছন্দ হবে তার হাতে অঞ্জলির ফুলটা তুলে দিতে পারাটা অন্যরকম ভালোলাগা। সে আমার হাতের ফুল দিয়ে অঞ্জলি দিচ্ছে, ছোটবেলার সেই অনুভূতিটা ভোলা যাবে না কখনও