কলকাতায় ভেস্তে গেল ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ সিনেমার ট্রেলার মুক্তি অনুষ্ঠান

পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রীর আসন্ন সিনেমা দ্য বেঙ্গল ফাইলস (Bengal Files)মুক্তির আগেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কলকাতায় এই সিনেমার ট্রেলার মুক্তি অনুষ্ঠান শেষ মুহূর্তে বাতিল…

Bengal Files controversy

পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রীর আসন্ন সিনেমা দ্য বেঙ্গল ফাইলস (Bengal Files)মুক্তির আগেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কলকাতায় এই সিনেমার ট্রেলার মুক্তি অনুষ্ঠান শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন।

সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসের কিছু সংবেদনশীল ও সহিংস ঘটনা, বিশেষ করে ১৯৪৬ সালের ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে, কলকাতা হত্যাকাণ্ড এবং নোয়াখালি দাঙ্গার মতো ঘটনাগুলো তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়েছে, যা বিতর্কের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসে কলকাতায় একটি প্রথাগত থিয়েটার চেইনের অধীনে দ্য বেঙ্গল ফাইলস সিনেমার ট্রেলার প্রকাশের পরিকল্পনা ছিল।

   

কিন্তু অনুষ্ঠানের একদিন আগে, ১৪ আগস্ট, থিয়েটার কর্তৃপক্ষ এই অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয়। বিবেক অগ্নিহোত্রী, যিনি বর্তমানে আমেরিকায় সিনেমাটির প্রচারে ব্যস্ত, এক্স প্ল্যাটফর্মে একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “আমরা সমস্ত অনুমতি ও যোগাযোগ সম্পন্ন করেছিলাম।

আমাদের পুরো দল কলকাতায় এসেছিল, কিন্তু হঠাৎ করে এই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। কে আমাদের কণ্ঠস্বর দমন করতে চায়? এবং কেন?” তিনি আরও জানিয়েছেন, তিনি এই বাধা সত্ত্বেও কলকাতায় ট্রেলার প্রকাশ করবেন এবং সত্যকে দমিয়ে রাখা যাবে না।

দ্য বেঙ্গল ফাইলস সিনেমাটি মুক্তির আগেই পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ঝড় তুলেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যরা এই সিনেমার বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদ সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে একাধিক এফআইআর দায়ের করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন যে, সিনেমাটি ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে এবং রাজ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তি উসকে দিতে পারে, বিশেষ করে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে। ট্রেলারে মা কালীর মূর্তি পোড়ানোর একটি দৃশ্যকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে বিতর্ক উঠেছে, যাকে তৃণমূল বাংলার ঐতিহ্যের প্রতি অপমান হিসেবে অভিহিত করেছে।

বিবেক অগ্নিহোত্রী এই অভিযোগের জবাবে বলেছেন, “এই সিনেমা হিন্দু নিধনের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র, যা ভারতের ইতিহাসের কিছু অন্ধকার অধ্যায় উন্মোচন করে।” তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে আইনি জটিলতার মাধ্যমে তাঁর প্রচার কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তবে, কলকাতা হাইকোর্ট এই এফআইআরগুলির উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেছে, যা ২৬ আগস্ট পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পরবর্তী শুনানি ১৯ আগস্ট নির্ধারিত হয়েছে।

দ্য বেঙ্গল ফাইলস বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘ফাইলস ট্রিলজি’র তৃতীয় কিস্তি, যার আগের দুটি ছিল দ্য কাশ্মীর ফাইলস এবং দ্য তাশকেন্ট ফাইলস। এই সিনেমাটি ১৯৪৬ সালের ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে, কলকাতা হত্যাকাণ্ড এবং নোয়াখালি দাঙ্গার মতো ঘটনাগুলোর উপর আলোকপাত করবে, যেখানে ৫,০০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।

সিনেমাটিতে মিথুন চক্রবর্তী, অনুপম খের, দর্শন কুমার, নমশী চক্রবর্তী এবং পল্লবী জোশী অভিনয় করেছেন। প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছেন বিবেক অগ্নিহোত্রী, পল্লবী জোশী এবং অভিষেক আগরওয়াল। সিনেমাটির প্রথম কিস্তি, দ্য বেঙ্গল ফাইলস: রাইট টু লাইফ, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ মুক্তি পাবে।

Advertisements

পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই বিতর্ক রাজনৈতিক মাত্রা নিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই সিনেমাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন, যখন বিবেক অগ্নিহোত্রী দাবি করেছেন যে, তাঁর সিনেমা ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তুলে ধরছে।

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “তারা কি আমার বিরুদ্ধে, সিনেমার বিরুদ্ধে, নাকি সত্যের বিরুদ্ধে?” তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি। এর আগে ২০২৩ সালে দ্য কেরালা স্টোরি সিনেমার প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করার জন্য তৃণমূলের সমালোচনা হয়েছিল, যা পরে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেয়।

এক্স প্ল্যাটফর্মে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। অনেকে বিবেক অগ্নিহোত্রীর পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন যে, তৃণমূল সরকার সত্য প্রকাশে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। একটি পোস্টে বলা হয়, “ফিরোজা দিদি নীরবতা চেয়েছিলেন, কিন্তু বিবেক অগ্নিহোত্রী একটি সাংস্কৃতিক ঝড় সৃষ্টি করছেন।” অন্যদিকে, তৃণমূল সমর্থকরা দাবি করছেন যে, সিনেমাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

দ্য বেঙ্গল ফাইলস সিনেমার ট্রেলার প্রকাশ বাতিল এবং এফআইআর দায়েরের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিবেক অগ্নিহোত্রী তাঁর সিনেমাকে ইতিহাসের একটি অন্ধকার অধ্যায়ের প্রকাশ হিসেবে উপস্থাপন করলেও, তৃণমূলের বিরোধিতা এই সিনেমার মুক্তির পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছাব্বিশে টিকিট মিলবে না শুনে চটে লাল তৃণমূল বিধায়ক

কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ এবং আসন্ন শুনানি এই বিতর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে শিল্প ও রাজনীতির মধ্যে সংঘাতের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।