ক্যান্সারে ভুগছেন মহীনের ঘোড়াগুলির সুদিন কাছে এসো-র অন্যতম স্রষ্টা

অসুস্থ মহিনের ঘোড়াগুলির (Mohiner ghoraguli) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন গায়ক অর্ক। তিনি তার জন্য ক্রাউড ফান্ডিংয়ের চেষ্টা করছেন।

Mohiner ghoraguli singer

অসুস্থ মহিনের ঘোড়াগুলির (Mohiner ghoraguli) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন গায়ক অর্ক। তিনি তার জন্য ক্রাউড ফান্ডিংয়ের চেষ্টা করছেন।

তিনি আবেদন করেছেন, যাদের গান “সুদিন কাছে এসো ভালোবাসি একসাথে সবকিছুই” তাদেরই বাপিদা আজ অসুস্থ। মহিনের ঘোড়াগুলির এই তাপস দাস, বাপিদা, কে তার পরিচয় আমি করিয়ে দেব এত বড় কেউ আমি নই । লাং ক্যান্সার থার্ড স্টেজ, খেতে পারছেন না স্বাভাবিক পদ্ধতিতে । ওজন কমে পয়ত্রিশ কিলোয় নেমে এসেছে । এখুনি কথা হয়েছে ওনার স্ত্রীর সাথে । এই অবস্থাতেও কোনোমতে ফোন হাতে নিয়ে আমার সাথে কথাও বলেছেন । আমরা বন্ধুরা একটি অনলাইন ফান্ড্রেসার অর্গানাইস করবো দ্রুতোই এক সপ্তাহের মধ্যে । বাজে ভনীতা করে আর পলিটিকাল/এপলিটিকাল কুৎসিত ট্রোলবাজি না করে যদি পারেন আমার আপনার সামান্য ছোট ছোট কান্ট্রিবিউশন পাঠাতে শুরু করুন । খরচ অনেক । ঐ যে গানটা আপনাকে রাতে দিনে ভাবিয়েছে , তার ও মূল্য অনেক । সে কথা ভেবে এগিয়ে আসুন । অন্য কে কি করেছে না করেছে তার জন্য না ভেবে । যদি সত্যিই কোনোদিন ভেবে থাকেন “কোথায় রয়েছে ভাবি লুকিয়ে বিষাদ তবুও” , তবে মনে রাখবেন একটু একটু করে হলেও এই মানুষটিকে বাঁচানোর দায় আমাদেরও আছে ।”
মহীনের ঘোড়াগুলি বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের ইতিহাসে কিংবদন্তীতুল্য এক নাম।

বাংলা নতুন ধারার রক সঙ্গীতের আদিস্রষ্টা। ১৯৭০ এর দশকে কলকাতায় যাত্রা শুরু। সেই সময় ব্যান্ডটি সেরকম সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হলেও বর্তমানে এই ব্যান্ডের গান পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের শ্রোতাদের কাছে খুবই আদৃত হয়েছে ।

ইতিহাস এবং প্রেক্ষাপটঃ
কলকাতার কয়েকজন সঙ্গীতশিল্পী মিলে ১৯৭৪ সালের শেষ দিকে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই ব্যান্ডটির গঠন করেন। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের নাম ছিল সপ্তর্ষি। পরে তাঁদের নাম পরিবর্তন হয় যেমন তীরন্দাজ এবং গৌতম চট্টোপাধ্যায় বিএসসি এবং সম্প্রদায় একেবারে শেষে রঞ্জন ঘোষাল এই ব্যান্ডটির নাম দেন মহীনের ঘোড়াগুলি। প্রায় এই একই সময়ে বাংলাদেশে সোল্‌স এবং ফিডব্যাক নামের দুটি ব্যান্ড গঠিত হয়।

গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের তীব্র রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিল। তিনি ছিলেন মূলত বামপন্থী মনোভাবের লোক। এই বামপন্থী চিন্তাধারা তাঁর সঙ্গীতের ভিতরেও প্রকাশিত হত। মহীনের ঘোড়াগুলির একজন সদস্য আব্রাহাম মজুমদারের মতে গৌতম চট্টোপাধ্যায় হয়তো নকশাল আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

১৯৭০ এর দশক বাংলা ব্যান্ড এবং রক সঙ্গীতের পক্ষে খুব একটা সুবিধার সময় ছিল না। সেই সময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরা। সঙ্গীতের দিক থেকে তাঁরা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের পুরনো ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। তাঁদের গাওয়া বাংলা সিনেমার গান এবং বাংলা আধুনিক গানের জনপ্রিয়তা ছিল খুবই বেশি।

মহীনের ঘোড়াগুলি নামের মানেঃ
এই ব্যান্ডের নামটি তাদের ভক্তদের জন্য একটি বড় ধাধা। আক্ষরিক অর্থে মহীনের ঘোড়াগুলির সাথে সঙ্গীতের কোন মিল পাওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে এই ব্যান্ডের নাম নেয়া হয়েছে বিশিষ্ট আধুনিক বাংলা কবি জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা ঘোড়া থেকে। কবিতার দ্বিতীয় পংতি হচ্ছেঃ
মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জোৎস্না প্রান্তরে

এই ব্যান্ডের একটি জনপ্রিয় গান ভালবাসি জোসনায় বাংলার প্রকৃতির রুপময় নৈসর্গিক দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। জীবনানন্দের প্রভাব এখানে স্পস্ট ভাবে ধরা পড়েছে।

এখানে আরেকটি মিল পাওয়া যায়। জীবনানন্দ তৎকালীন সমসাময়িক কবিতার বৃত্তের বাইরে এসে বাংলা সাহিত্যে আধুনিক কবিতার সূচনা করেন। মহীনের ঘোড়াগুলি ব্যান্ডটিও তৎকালীন সাধারণ সঙ্গীতের গন্ডির বাইরে বাংলা সঙ্গীতকে নতুন কিছু দেয়ার চেষ্টা করেছে।

মহীনের ঘোড়াগুলির সদস্যরাঃ
গৌতম চট্টোপাধ্যায় (মনি) — কণ্ঠ, কথা, লিড গিটার, স্যাক্সোফোন
আব্রাহাম মজুমদার — পিয়ানো, বেহালা
প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়(বুলা) — বেস গিটার, বাঁশি
রঞ্জন ঘোষাল — কথা, emcee, মিডিয়া সম্পর্ক
বিশু চট্টোপাধ্যায়– ড্রামস, বেস বেহালা
তাপস দাস (বাপি) — কণ্ঠ, গিটার
তপেশ বন্দোপাধ্যায় (ভানু) — কণ্ঠ, গিটার
প্রকাশিত অ্যালবামঃ
সংবিগ্ন পাখিকূল ও কলকাতা বিষয়ক (১৯৭৭)
অজানা উড়ন্ত বস্তু বা অ-উ-ব (১৯৭৮)
দৃশ্যমান মহীনের ঘোড়াগুলি
আবার বছর কুড়ি পরে (১৯৯৫)
ঝরা সময়ের গান (১৯৯৬)
মায়া(১৯৯৭)
খ্যাপার গান (১৯৯৯)