বারবার নিজ কেন্দ্রেই কেন আক্রান্ত মানিক সরকার, সিপিআইএমে ‘জমি’ হারানোর উদ্বেগ

নিউজ ডেস্ক: টানা ২৫ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের আমলে যা স্বপ্নেও ভাবেনি ত্রিপুরাবাসী, গত বিধানসভা ভোটের পর তাই হচ্ছে বারবার। আক্রান্ত হচ্ছেন দেশের অন্যতম আলোচিত ‘গরীব’…

Manik Sarkar

নিউজ ডেস্ক: টানা ২৫ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের আমলে যা স্বপ্নেও ভাবেনি ত্রিপুরাবাসী, গত বিধানসভা ভোটের পর তাই হচ্ছে বারবার। আক্রান্ত হচ্ছেন দেশের অন্যতম আলোচিত ‘গরীব’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার (Manik Sarkar)। তাও আবার নিজ কেন্দ্র ধনপুরে। সোমবারেও তাঁর কনভয় ঘিরে হামলা হয়েছে। অভিযুক্ত বিজেপি।

তবে ধনপুরের বিধায়ক তথা বর্তমান বিরোধী নেতা মানিক সরকারের কনভয়ে হামলার ঘটনা নরমভাবে নেয়নি সিপিআইএম। তাদের সমর্থকরা দলীয় পতাকার ডান্ডা নিয়ে পুলিশ, টিএসআর ও বিজেপি কর্মীদের দিকে তেড়ে যান। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ শুরু হয়। এর পরেই ঘেরাও ছেড়ে রণে ভঙ্গ দেয় বিজেপি সমর্থকরা।

মানিক সরকার ধনপুরে রাজনৈতিক সভা করেন। তাঁর অভিযোগ,পরিস্থিতি ত্রিপুরায় খুবই খারাপ। বিজেপি জোট সরকার রাজ্যে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে।
কেন মানিকবাবু বারবার তাঁর কেন্দ্রেই ঘেরাওয়ের মুখে পড়ছেন? এই প্রশ্ন তুঙ্গে। এর থেকেই আগরতলায় ত্রিপুরা সিপিআইএম রাজ্য দফতর দশরথ দেব ভবনে ছড়িয়েছে উদ্বেগ-ভয়। প্রশ্ন উঠছে তবে কি ধনপুরেও দল জমি হারাচ্ছে?

Manik Sarkar

ধনপুর মানিকবাবুর নিজের কেন্দ্র। এখান থেকে তিনি গত বাম বিপর্যয় বছরে সরকার হারালেও নিজে জয়ী হয়েছেন। ২০১৮ সালে রাজ্যে টানা ২৫ বছরের বামফ্রন্ট সরকার পরাজিত হয়। সরকার গড়ে বিজেপি আইপিএফটি জোট। বিপর্যয়ের দিনে মানিকবাবু গণনা কেন্দ্রেই আক্রান্ত হওয়ার মুখে ছিলেন। তখনও তিনি মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রতিমা ভৌমিকের সমর্থকরা তেড়ে এসেছিল। পরে জয়ী হন মানিকবাবু। তবে ততক্ষণে বামেরা বিদায় নিয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলে তাদের একমাত্র দুর্গ ত্রিপুরা থেকে।

ফল ঘোষণার পর থেকে ত্রিপুরায় রাজনৈতিক পরিবেশ রক্তাক্ত হতে থাকে। সেই ধারা এখনও চলছে। বিরোধী দল সিপিআইএমের সমর্থকরা বারবার হামলার মুখে পড়ছেন। বিধানসভায় না থাকলেও কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের উপর লাগাতার হামলা হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকরা আক্রান্ত হন। সর্বক্ষেত্রে অভিযুক্ত বিজেপি।

সরকার হারানোর পরে মানিকবাবু বেশ কয়েকবার ঘেরাও ও হামলার মুখে পড়েছেন। বিরোধী দললেতা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বিধানসভা অধিবেশন উত্তপ্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব জানিয়েছেন, রাজনৈতিক হামলা মেনে নেওয়া হবে না। তবুও বারবার হামলার ঘটনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ যে দলীয় সমর্থকদের উপর নেই তা স্পষ্ট।

ত্রিপুরায় এখন দুটি সুপার হেভিওয়েট আসন একটি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের কেন্দ্র বনমালীপুর অন্যটি বিরোধী নেতা চার বারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কেন্দ্র ধনপুর। বনমালীপুর শান্তিপূর্ণ, কিন্তু ধনপুর থাকে অশান্ত। বিশেষকরে মানিকবাবু তাঁর কেন্দ্রে যাওয়ার পরেই ঘেরাও হন বারবার। তবে সিপিআইএমের সমর্থকরাও পাল্টা তেড়ে যান।

ত্রিপুরা ভারতের একমাত্র রাজ্য, যেখানে স্বাধীনতার পর প্রথমবার বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। এই রাজ্যেই প্রথমবার বাম বনাম রামের রাজনৈতিক লড়াই হয়েছে। প্রথম দফায় বাম পরাজিত। পরবর্তী দফা চলে আসছে। ত্রিপুরায় নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের মুখ হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লড়াই এখানে দ্বিমুখী আর নয়, ত্রিমুখী।