রাস্তায় থাকতেন, র‍্যাপার এমসি স্ট্যানের গলায় এখন দেড় কোটির হীরের নেকলেস

পায়ে ৮০ হাজার টাকার জুতো, গলায় ১.৫ কোটি দামের হীরার নেকলেস পেশায় একজন র‍্যাপার। ভারতের বিগ বস রিয়েলিটি শোয়ের বিজেতা তিনি। ট্রোফির পাশাপাশি জিতেছেন ৩১…

পায়ে ৮০ হাজার টাকার জুতো, গলায় ১.৫ কোটি দামের হীরার নেকলেস পেশায় একজন র‍্যাপার। ভারতের বিগ বস রিয়েলিটি শোয়ের বিজেতা তিনি। ট্রোফির পাশাপাশি জিতেছেন ৩১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং একটি গাড়ি। তার জীবন বর্তমানে চাকচিক্যময় হলেও তার দুই চোখে লেগে আছে দারিদ্রের গভীর অন্ধকার। বলছি হায়দ্রাবাদের এমসি স্ট্যানের কথা।

এমসি স্ট্যানের জন্ম ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট পুণের একটি বস্তিতে। মহারাষ্ট্রের পুলিশ দফতরে কাজ করতেন তার বাবা। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও গান বাজনায় ঝুঁকেছিলেন স্ট্যান। ১২ বছর বয়স থেকে কাওয়ালি গাইতেন তিনি। পরে ভিন্ন স্বাদের গানের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন ইংলিশ গানের হিপহপ ভার্সন শোনেন তিনি। গানের ভাব বোঝার জন্য ইংরেজি শিখতে শুরু করেন তিনি। স্কুলের পড়াশোনা শেষ না করেই র‍্যাপ গান লিখতে শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। সঙ্গীতশিল্পী এমিনেন-কে গুরু মানতেন এমসি স্ট্যান। গুরু ভক্তির কারণে নিজের নামও পরিবর্তন করে ফেলেছিলেন। এমসি স্ট্যান-এর আসল নাম আলতাফ শেখ। স্ট্যান নামে তার একটি গান মুক্তির পর তার নাম বদলে ফেলেন আলতাফ। পড়াশোনায় মন না দিয়ে তিনি গান বাজনায় ঝুঁকে পড়েন। প্রথমদিকে পরিবার, বন্ধু বান্ধবও তার পাশে দাঁড়াননি। একটা সময় পর সকলেই তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।

এমসি স্ট্যান গান লেখার সময় নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি। ২০১৮ সালে প্রথম গান মুক্তি পায় তার। এই গানে নিজের ব্যক্তিগত জীবন ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। তার পরিবারের আর্থিক দশা থেকে কীভাবে তিনি নেশার দিকে ঝুঁকে পড়লেন তার উল্লেখ করেছিলেন গানে। স্ট্যান জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তার দ্বিতীয় গানে। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন দেখে এমিওয়ে বান্টাই তার গানে কটাক্ষ করতে শুরু করেন এমসি স্ট্যানকে। পাল্টা র‍্যাপ তৈরি করেন এমসি স্ট্যান। গানের মাধ্যমে ঝড় চলতে থাকে এমসি স্ট্যান ও এমিওয়ে বান্টাইয়ের। এমিওয়ের বিরুদ্ধে গান বানানোর অপরাধে জেলে হাজতবাস করেন এমসি স্ট্যান। জেলে গিয়েও চুপ থাকেন নি তিনি। একের পর গান লিখে গেছেন সেখানেই। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ২০১৯ সালে স্ট্যানের খুসামত গানটি মুক্তি পায়। ইউটিউবে পোস্ট করার পর এই গানটি ভালো সাড়া পায়।

বিতর্কের সাথে স্ট্যানের সম্পর্ক আগেই। প্রাক্তন প্রেমিকা ‌আজমা শেখ তার বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। শোনা যায় স্ট্যানকে একটি উপহার দিয়েছিলেন র‍্যাপ গায়ক রাফতার। রাফতারের উপহার সরাসরি প্রত্যাখান করেন স্ট্যান। উঠতি র‍্যাপ গায়কদের উপহার দেন রাফতার। রাফতার যখন এমসি স্ট্যানকে মাইক উপহার করতে যান, তখন স্ট্যান জানান, আমার কাছে মাইক আছে, আলাদা করে লাগবে না।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার বাড়িতে কোনো টিভি ছিল না, তিনি বিগ বসে অংশগ্রহণের পর তার মা ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটা টিভি কিনে নিয়েছিলেন। স্ট্যান বলেন, মা যেদিন ৭০ হাজার টাকা দিয়ে টিভি কিনে আনলেন তখন আমার পায়ে জুতো ছিলো ৮০ হাজার টাকার। নামী ব্র্যান্ডের জামাকাপড় পড়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন তিনি। তবে হীরার নেকলেসের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ আছে এমসি স্ট্যানের। ইংরেজি হরফে হিন্দি লেখা একটি হীরের নেকলেস রয়েছে তার।এই নেকলেসের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা।‌ এছাড়া রুপি চিহ্ন দেওয়া হীরের পেনডেন্ট রয়েছে এমসি স্ট্যানের। এমসি স্ট্যান জানান, এক সময় অর্থের অভাবে রাস্তাতেও দিন কাটাতে হয়েছে তাকে, আর এখন তাকে টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতে হয়না।