বাংলা সিনেমার ইতিহাসে নতুন পালক, টাইমস স্কোয়ারে ‘দেবী চৌধুরানী’!

বাংলা সিনেমার আকাশে আবারও এক নতুন আলো জ্বালাল টলিউড। স্বাধীনতার ৭৯তম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বড় বাজেটের ছবি ‘দেবী চৌধুরানী’ –র (Debi Choudhurani) টিজার…

Devi Choudhurani Teaser Unveiled at Times Square

বাংলা সিনেমার আকাশে আবারও এক নতুন আলো জ্বালাল টলিউড। স্বাধীনতার ৭৯তম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বড় বাজেটের ছবি ‘দেবী চৌধুরানী’ –র (Debi Choudhurani) টিজার উন্মোচিত হলো নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে। এ যেন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত। পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রর হাত ধরে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ফের জীবন্ত হয়ে উঠছে রূপোলি পর্দায়।

১৩ অগস্ট সমাজমাধ্যমে প্রথম প্রকাশ পায় ‘দেবী চৌধুরানী’–র টিজার। মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই দর্শকমহলে তৈরি হয় তুমুল আলোড়ন। বিপ্লবী আবহ, অনবদ্য ভিজ্যুয়াল, দুর্দান্ত সংলাপ—সব মিলিয়ে টিজার যেন এক ঝলকে ফিরিয়ে এনেছে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের আবহ। সেই আবেগ এবার ছড়িয়ে পড়ল নিউ ইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র টাইমস স্কয়ারে। স্বাধীনতা দিবসে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা ছবির উপস্থিতি নিঃসন্দেহে এক গর্বের অধ্যায়।

   

এই ছবির অন্যতম আকর্ষণ তার তারকাখচিত কাস্টিং। ভবানী পাঠকের ভূমিকায় রয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মহানায়ক’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গুরুগম্ভীর সংলাপ ও তলোয়ার হাতে লড়াই ইতিমধ্যেই দর্শকদের মনে উন্মাদনা তৈরি করেছে। অন্যদিকে দেবী চৌধুরানীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। টিজারে তাঁকে দেখা গেছে দুর্ধর্ষ রূপে—তরোয়ালের ঝলকে যেন দীপ্তিমান এক যোদ্ধা রানি।

ছবিতে জমিদার হরবল্লভ রায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রবীণ অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। রঙ্গরাজ চরিত্রে অভিনয় করছেন অর্জুন চক্রবর্তী, যিনি নিজেকে একেবারে নতুনভাবে হাজির করেছেন এই ছবিতে। এছাড়াও দর্শনা বণিক, বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়, কিঞ্জল নন্দ ও ভরত কলের অভিনয় ছবিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভরত কলের মজনু শাহ চরিত্র, যিনি টিজারেই দর্শকদের নজর কেড়েছেন।
টাইমস স্কয়ারে টিজার প্রদর্শনের পর অভিভূত প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্বাধীনতা দিবসে ‘দেবী চৌধুরানী’র টিজার নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে প্রদর্শিত হওয়া নিঃসন্দেহে গর্বের মুহূর্ত। ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনি আন্তর্জাতিক দর্শকের সামনে তুলে ধরা আমাদের কাছে ঐতিহাসিক ঘটনা।”

অন্যদিকে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমাদের পুরো টিমের কাছে অত্যন্ত আবেগঘন। আমরা যে এক টুকরো ভুলে যাওয়া ইতিহাস ফিরিয়ে আনছি, সেটিই আমাদের কাছে বড় সাফল্য। আন্তর্জাতিক মঞ্চে টিজার প্রদর্শন নিঃসন্দেহে বাংলার গর্ব।”

টিজারের শুরুতেই চোখে পড়ে দুর্দান্ত গ্রাফিক্স। তারপরই ভবানী পাঠকের কণ্ঠে শোনা যায় বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দেবী চৌধুরানী’–র অংশবিশেষ। নিভু নিভু আলোয় প্রসেনজিতের জলদগম্ভীর স্বর যেন মুহূর্তেই দর্শকদের নিয়ে যায় ১৮শ শতকের বাংলায়। তলোয়ার হাতে একের পর এক শত্রুকে পরাস্ত করার দৃশ্য রীতিমতো উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। তার সঙ্গে শ্রাবন্তীর তেজস্বী উপস্থিতি যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এক কিংবদন্তির প্রতিচ্ছবি।
পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক বড় উদ্যোগ নিয়েছেন এই ছবির মাধ্যমে। উত্তর কলকাতা থেকে শুরু করে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়, বীরভূম, ঝাড়খণ্ড ও বিহারের নানা জায়গায় হয়েছে শুটিং। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দুর্গম পাহাড়—প্রতিটি দৃশ্যে ধরা পড়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনন্য আবহ।

Advertisements

উল্লেখযোগ্য, এটি একটি ইন্দো-ইউকে যৌথ প্রযোজনা। ফলে প্রযুক্তি, সেট ডিজাইন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মানের পোস্ট প্রোডাকশনে ছবিটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। নির্মাতাদের আশা, এই ছবি শুধু বাংলার গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী দর্শকের মনে জায়গা করে নেবে।

বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে বড় বাজেটের ছবি বিরল। তবে ‘দেবী চৌধুরানী’ সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে চলেছে। শুধু কাহিনি নয়, প্রযোজনা, অভিনয়, প্রযুক্তি—সব ক্ষেত্রেই ছবিটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। ইতিমধ্যেই টিজার দেখে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত ইতিবাচক। অনেকেই বলছেন, বাংলা সিনেমা অবশেষে বলিউড ও আন্তর্জাতিক সিনেমার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার ক্ষমতা রাখে।

চলতি বছরেই বড়পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে ‘দেবী চৌধুরানী’। নির্মাতারা জানিয়েছেন, ছবির মুক্তির তারিখ খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। আপাতত টিজার দেখেই দর্শকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সিনেমা হলে ছবিটি দেখার জন্য।

বাংলা চলচ্চিত্র বহুবার ইতিহাসকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছে। কিন্তু এই প্রথমবার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষত টাইমস স্কয়ারের মতো বিশ্ববিখ্যাত মঞ্চে বাংলা ছবির টিজার প্রদর্শিত হলো। এটি শুধু একটি সিনেমার সাফল্য নয়, গোটা বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সাফল্য।

স্বাধীনতার ৭৯তম বর্ষপূর্তিতে ‘দেবী চৌধুরানী’ যেন আমাদের মনে করিয়ে দিল—সংগ্রাম, সাহস আর আত্মত্যাগের গল্প কখনও পুরোনো হয় না। প্রসেনজিৎ-শ্রাবন্তী অভিনীত এই ছবি নিঃসন্দেহে বাঙালির গর্ব, যা বিশ্ব দরবারে বাংলার আসন আরও দৃঢ় করবে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News