পঞ্চভূতে বিলীন বাপ্পি, কান্নায় ভেঙে পড়লেন দুই সন্তান

ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই হয়ে চলেছে একের পর এক নক্ষত্রপতন। প্রথমে লতা মঙ্গেশকর তারপর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও বাপ্পি লাহিড়ী। নক্ষত্র পতনের সর্বশেষ সংযোজন ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত।…

bappi-silver

ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই হয়ে চলেছে একের পর এক নক্ষত্রপতন। প্রথমে লতা মঙ্গেশকর তারপর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও বাপ্পি লাহিড়ী। নক্ষত্র পতনের সর্বশেষ সংযোজন ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত। সঙ্গীত জগতের তিন মহীরুহের মৃত্যুতে নেমেছে বিরাট শূন্যতা। কিংবদন্তিদের হারিয়ে অনুরাগীদের মন খারাপ।

বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ের ভিলে পার্লের পবনহংস শশ্মানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল বাপ্পি লাহিড়ীর। তাঁর প্রয়াণের মধ্যে দিয়ে ডিস্কো যুগের যেন অবসান ঘটল। শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলিউড জগতের একাধিক তারকা। বুধবার তাঁর ছবিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অপেক্ষা ছিল তাঁর একমাত্র পুত্র বাপ্পা লাহিড়ীর আমেরিকা থেকে ফেরার। বুধবার রাতেই তিনি সপরিবার আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলস থেকে মুম্বই এসে পৌঁছন। শেষকৃত্যের প্রস্তুতি আগেই সারা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে মুম্বইয়ের লাহিড়ী হাউস থেকে ফুলের ট্রাকে করে ভিলে পার্লের পবনহংস শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় বাপ্পি লাহিড়ীকে। বাড়ি থেকে ভিলে পার্লের পবনহংস শ্মশানের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। কিন্তু শ্মশানযাত্রায় এত বেশি সংখ্যক ভক্ত গিয়ে উপস্থিত হয় যে, ১০ মিনিটের সেই পথ পেরোতে সময় লাগে ১ ঘন্টা। ভিলে পার্লে মহাশ্মশানে মুখাগ্নি করলেন ছেলে বাপ্পা।

শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বাপ্পির কম্পোজ করা সুর- চলতে চলতে ইয়াদ রাখনার মূর্ছনার মধ্যে বাপ্পি লাহিড়ী পঞ্চভুতে বিলীন হলেন। থেকে গেল তাঁর স্মৃতি। বাপ্পির মেয়ে রিমাকে এদিন মরদেহের পিছনে কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে দেখা যায়। সাজগোজ করতে ভালোবাসতেন বাপ্পি। স্ত্রী চিত্রাণী শেষবারের মত তাঁকে সাজিয়ে দেন। বাপ্পির প্রিয় কালো রংয়ের পোশাকেই তাঁকে শেষবারের মতো সাজিয়ে দেন চিত্রাণী। এদিন বাপ্পির নশ্বর দেহ পঞ্চভুতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের অবসান হল।

বলিউডের যে ফিউশন আজ গোটা দেশ মাতাচ্ছে তার স্রষ্টা ছিলেন বাপ্পি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গানের সুর নিয়ে তিনি ডালি সাজাতেন। বাপ্পি সব সময় বলতেন, সংগীত হল এক মহাসমুদ্র। সেখান থেকে দু একটা নুড়ি পাথর কুড়িয়ে নিলে সমস্যা কিসের। তবে প্রয়াত বাপ্পির একটা ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে গেল। তাঁর ইচ্ছা ছিল, বিশ্বের ১০০টি দেশের ১০০ জন সংগীত ও যন্ত্রশিল্পী নিয়ে একটা কনসার্ট করবেন। কিন্তু হঠাৎ করে চলে যাওয়ায় বাপ্পির সেই ইচ্ছা আর পূর্ণ হল না। এদিন ছেলে বাপ্পা চিতায় আগুন দেওয়ার পর যখন আগুনের লেলিহান শিখা শিল্পীর নশ্বর দেহকে গ্রাস করছে তখন মহাশ্মশানে উপস্থিত বাপ্পির অনুরাগীরা আওয়াজ তোলেন- জুম্মা চুম্মা দে দে। তবে সেই আওয়াজ আর শুনতে পেলেন না চির ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়া বাপ্পি লাহিড়ী।

উল্লেখ্য, অসুস্থতার জন্য মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বাপ্পি। সেখান থেকে সোমবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে মুম্বইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মঙ্গলবার রাত ১১.৪৫ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডিস্কো কিং। ১৯৭০ থেকে হিন্দি ছায়াছবির জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পি লাহিড়ী। ‘চলতে চলতে’, ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘শারাবি’-র মতো কালজয়ী ছবির গানে সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন একাধিক গান। ২০২০ সালে বাগি- ৩-এর জন্য শেষ সুর করেন তিনি।