Utshasree: মমতা সরকারের উৎসশ্রী জোয়ারে ভাসছেন শিক্ষকরা, ডুবছে একাধিক স্কুল

শিক্ষা সমস্ত কিছুর উৎস, এবং উৎস সবকিছুর শ্রী-বৃদ্ধি করে, তাই সরকারের তরফে নাম দেওয়া হয়েছে উৎসশ্রী (Utshasree)। শিক্ষকদের বদলির সুবিধার্থে এই পোর্টালের উদ্বোধন করে এমনটাই…

Utshasree

শিক্ষা সমস্ত কিছুর উৎস, এবং উৎস সবকিছুর শ্রী-বৃদ্ধি করে, তাই সরকারের তরফে নাম দেওয়া হয়েছে উৎসশ্রী (Utshasree)। শিক্ষকদের বদলির সুবিধার্থে এই পোর্টালের উদ্বোধন করে এমনটাই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু লকডাউনের পর স্কুল চালু হতেই রাজ্যের একাধিক স্কুলগুলির বেহাল অবস্থার ছবি উঠে এল৷ কোথাও ছাত্র বেশি, শিক্ষক কম৷ আবার কোথাও একের পর এক শিক্ষকের বদলিতে অচলাবস্থা রাজ্যের বিদ্যালয়গুলির৷

নদিয়া:
নদিয়ার কালিগঞ্জ ব্লকের জুড়ানপুর দুর্গাদাস সরলাবালা গার্লস জুনিয়র হাই স্কুল। বয়স মাত্র ছয় মাস স্কুলের বয়স৷ এরই মধ্যে করুন দশা৷ কারণ, পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৫৯, শিক্ষিকা ১! বন্ধ হওয়ার মুখে স্কুলটি। প্রধান কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে উৎসশ্রীর ফায়দা তুলে সকলেই শহরের দিকে বদলি নিয়েছেন৷ তাই অস্তিত্ব টেকাতে পড়ে রয়েছেন একজন মাত্র শিক্ষিকা ইপ্সিতা মুখোপাধ্যায়। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী অবধি তিনিই পড়ান৷

পুরুলিয়া:
সবচেয়ে বেহাল অবস্থা পুরুলিয়ার গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে৷ সেখানে উচ্চমাধ্যমিক তো দূরের মাধ্যমিক স্কুলগুলিতেও শিক্ষক না থাকার দরুন করুন অবস্থা দেখা দিয়েছে৷ প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক স্তরে একাধিক স্কুল বন্ধের মুখে৷ পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের নিলডি হাইস্কুল৷ ২০১২ সালে চালু হওয়ার পর থেকে এখনও অবধি স্থায়ী শিক্ষক পদে নিয়োগ হয়নি৷ এমনকি মাধ্যমিক স্তরেও নেই সঠিক অঙ্কের শিক্ষক। জোড়াতালি দিয়ে চলছে সবটাই৷ এই জেলার বাঘমুন্ডি হাইস্কুলের অবস্থা খুবই খারাপ। শিক্ষকের সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে। একে একে বন্ধের মুখে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলগুলি৷ অবিলম্বে শিক্ষার পরিষেবা সচল করার দাবিতে সোমবার বাঘমুন্ডি এলাকায় বনধের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস৷ একই ছবি রঘুনাথপুরের গুনিয়ারা হাই স্কুলে৷ ছাত্রের সংখ্যা ১৩০০ শিক্ষক মোটে ৮৷ চিত্রা হুড়া গার্লস হাইস্কুলে একসময়ে শিক্ষিকার সংখ্যা ছিল ২১৷ এখন তা কমে ৭ এ ঠেকেছে৷

দ: ২৪ পরগনা:
আরও করুণ ছবি দক্ষিণ ২৪ পরগণার মথুরাপুর ১ নম্বর ব্লকে। এই ব্লকে ১৮ টি হাইস্কুল রয়েছে। উৎসশ্রীর সুবিধা নিয়ে বদলি করেছেন প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকরা। ১০ টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বদলি হয়েছে৷ পরে সবটাই সামলাতে হচ্ছে সহকারী শিক্ষককে৷ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষে ক্লাস নেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই স্কুলের পঠনপাঠন ব্যহত৷ আবার কোনও কোনও স্কুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই শিক্ষক। আবার থাকলেও উঁচু ক্লাসের জন্য সঠিক শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফলে স্কুলগুলির পঠনপাঠন একেবারে তলানিতে৷

বেহাল বিদ্যালয়ের এই ছবি ধরা পড়েছে সারা রাজ্যজুড়ে। শিক্ষকদের আটকাতে স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। সম্প্রতি হরিহরপাড়ার মালোপাড়ার উচ্চবিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকের বদলির অনুমতি মিলতেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের অভিযোগ, কয়েকদিন আগেই পাঁচ শিক্ষকের বদলি হয়েছে৷ এখন দুই শিক্ষকের বদলিতে আরও অচলাবস্থা দেখা দেবে৷ একই ছবি তেহট্টের থানারপাড়া থানার সাদিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের৷ সেখানে বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৩০০ জন। স্কুল শিক্ষকের সংখ্যা ১৪। আবার উৎসশ্রী মাধ্যমে বদল করতে চান আরও একজন৷ তাই শিক্ষক বদলির প্রতিবাদে স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়ারা।

দীর্ঘ বছর ধরে একাধিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় তালা পড়েছে বহু স্কুলে। ১০ বছরে বন্ধ হয়েছে প্রায় ৭ হাজারটি স্কুল। ফলে বেড়েছে স্কুলছুটের সংখ্যাও। এমত অবস্থায় নতুন করেও নিয়োগ নিয়ে সরকারের কোনও ভূমিকা চোখে পড়ছে না৷ বরং শিক্ষক নিয়োগে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতিতে বারবার প্রশ্নের মুখে সরকার। অথচ মেধাতালিকায় নাম থাকার পরেও বঞ্চিত বহু চাকরীপ্রার্থী। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই মিলছে না৷ এখন বিরাট প্রশ্নের মুখে আগামী প্রজন্ম।