জল জমবেই, ভগবানের তৈরি নর্দমা আটকেই বিপদে সল্টলেক-নিউটাউন

বিশেষ প্রতিবেদন: সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউনের মানুষ ভয়ে ত্রস্ত ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে আবার বৃষ্টির পূর্বাভাস শুনে। কারণ , আবার জল যন্ত্রণা সইতে হবে যে। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত…

newtown

বিশেষ প্রতিবেদন: সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউনের মানুষ ভয়ে ত্রস্ত ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে আবার বৃষ্টির পূর্বাভাস শুনে। কারণ , আবার জল যন্ত্রণা সইতে হবে যে। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত স্পষ্ট বলছেন নেতা মন্ত্রীরা যতই জলে হাঁটু ডুবিয়ে জনসংযোগ করতে বেরোন জল জমা রোখা যাবে না, সৌজন্যে কলকাতার ঢাল হারিয়ে যাওয়া।

একটু কড়া ভাষাতেই পরিবেশবিদ বলেছেন, “লুঙ্গি তুলে গোপন অঙ্গকে হাওয়া খাইয়ে, জমা জলে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে নিরীক্ষণ করতে নেতা-মন্ত্রীরা বেরিয়ে পড়ছেন। শুধু তাই নয় টেলিভিশনে বিবৃতি দিয়ে বা খবরের কাগজে ছবি সহ সংবাদ ছাপিয়ে তারা জনগণের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে পারছেন যে – “আমি তোমাদেরই লোক – আমায় দিও ভোট।” কিন্তু জল জমছে ও জমবে। জল জমাকে কেউই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।”

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

এর কারণ কী? তাঁর বিশ্লেষণ, “কলকাতা ও শহরতলীতে কেন এত জল জমছে হররোজ সেটা বুঝতে গেলে ভূগোলটা জানতেই হবে। সেই ৬০-এর দশক থেকেই কোলকাতা বেড়েই চলেছে। সল্ট লেক অর্থাৎ লবণ হ্রদ এর প্রথম ধাপ। ১৯৬৫ সাল নাগাদ গঙ্গা থেকে পলি তুলে সল্টলেক সিটির ডাঙ্গাটা তৈরী হল, বর্তমানে যার নাম বিধাননগর। লবণ হ্রদ ছিল ‘marshy land’ অর্থাৎ জলাভূমি। জল জমেই তো জলাভূমি হয়। তাই যতই উঁচু করা হোক না কেন, প্রকৃতির নিয়মে জল এখানে আসবেই। রুখবে কে?”

newtown

এরপর তিনি বলছেন, “এখন যেটা নিউটাউন, এটার একসময়কার নাম ছিল রাজারহাট। পরিবেশ-প্রতিকূল এই স্যাটেলাইট টাউন-শিপের বিষয়ে ২০০০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে একটা জনস্বার্থ মামলা রুজু করেছিলাম। প্রায় ৪ মাস ঘুরে এর ভূগোলটা দেখার সৌভাগ্য তখন আমার হয়েছিল। কি সাংঘাতিক জিনিস যে দেখেছিলাম তার বিস্তারিত বর্ণনা এখানে করব না – শুধু একটা বিষয় ছাড়া। ওখানে দুটো বিল ছিল, যার নাম হোল ধুপির বিল ও ঘুনির বিল। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে যে দুটির উচ্চতা ছিল মাত্র ৩ থেকে ৪ ফুট।

তদানীন্তন ভূগোলটা কিন্তু পরিষ্কার জানান দেয় যে প্রকৃতির ঢালটা ওখানেই ছিল। আর সেই ঢালটাকেই আটকে দিয়ে আমরা নিউটাউনের রাস্তাঘাট, ইমারতগুলো বানিয়েছি ও বানাচ্ছি। বৃষ্টির জলটা যাবে কোথা দিয়ে? তার পথ আটকে দিলে তো সে পথ হারিয়ে এদিক সেদিক ঢুকে পড়বেই, আর তা ছাড়া পাঁচশো-ছশো বছর আগেতো ওটা একপ্রকার সুন্দরবনেরই এলাকা ছিল। অপরিকল্পিত উন্নয়ন যে ধ্বংসের কারণ তাঁর হাতেখড়ি ঘটছে এখন।”

পরিবেশবিদ বলেছেন, “কলকাতার উত্তরে হিমালয় পর্বত ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রকৃতির তৈরী ভৌগোলিক নিয়মে জল উত্তর থেকে দক্ষিণেই তো বইবে। ভগবানের তৈরী নর্দমাটা যদি আমরা বুজিয়ে দিই তাহলে তো যা হবার তা হবেই। উত্তর থেকে দক্ষিণে বিশাল যে জনপদ কংক্রিটের জঙ্গল গড়ে উঠেছে সেই ব্যারিকেডে আটকে পরা বর্ষার জল সরাবে কার সাধ্য? ১৯৬২ সালে ভি.আই.পি রোড পূর্ব-পশ্চিমে আড়াআড়িভাবে তৈরী করে উত্তর-দক্ষিণের ঢালটাকে আমরা আটকে দিয়েছিলাম। দুপাশে নয়নজুলি তৈরী করা হয়েছিল। কিন্তু ঐ রাস্তাটির দুপাশে প্রোমোটারদের দাপাদাপি শুরু হতেই নয়নজলে নয়নজুলিটাই গেল ভেসে।

বিশেষজ্ঞদের নিধান অগ্রাহ্য করে গত তিন দশকে কোলকাতা পুবে বাড়ছে তো বাড়ছেই। পূর্ব কোলকাতা জলাভূমির নাভিশ্বাস তুলে আমরা জনপদ গড়েই চলেছি। এখানেই উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ই.এম.বাইপাস তৈরী করে মূল শহরের পূর্বমুখী জলের গতিটাকেই দিয়েছি আটকে। সত্যি কথা বলতে কি পরিবেশ আইন ও উন্নয়নের যে মাপকাঠিগুলো রয়েছে তাকে অবজ্ঞা করেই বেড়ে উঠেছে এবং এখনও উঠছে কলকাতার বহর। এই উন্নয়ন দস্যুকে আমরা বাগে আনতে পারিনি। এখন তাই মাথায় হাত দিয়ে বসে জলবন্দী হওয়া ছাড়া আমাদের আর কিই বা করনীয় আছে? হাইকোর্ট, পরিবেশ আদালত বা সুপ্রিম কোর্ট যতই রায় দিক, জলের গতি কিন্তু তার দিক পরিবর্তন করতে আর পারবে না।”