26/11 Mumbai Attacks: পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের ভয়ের কারণ ‘কারকারের হত্যাকারী কে?’

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: আরব সাগর তীরে বিস্তৃত ফেনিল ঢেউ দুই মহানগরের তটরেখায় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে খান খান হয়ে যায়। এপারে মুম্বই-ভারতের বাণিজ্য নগরী, ঘুমহীন এক শহর।…

Hemant karkare

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: আরব সাগর তীরে বিস্তৃত ফেনিল ঢেউ দুই মহানগরের তটরেখায় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে খান খান হয়ে যায়। এপারে মুম্বই-ভারতের বাণিজ্য নগরী, ঘুমহীন এক শহর। কোনাকুনি সরলরেখা টানলে সাগরের অন্যদিকে আছে করাচি- পাকিস্তানের বাণিজ্য নগরী, ঘুমহীন আরও এক শহর। ঘুমহীন? কারণ, মুম্বই ও করাচির জীবনযাত্রা হুবহু এক। দিনে রাতে সদা চঞ্চল। জাহাজঘাটা থেকে বিশাল কর্পোরেট অফিসের বহুতল পেরিয়ে সাপের মতো কিলবিলিয়ে এলিয়ে থাকা গলিপথগুলো সদা চঞ্চল। সুপথে-বিপথে রোজগারের প্রাণকেন্দ্র এমনই হয়।

এতদূর পর্যন্ত সব ঠিক। আরও একটা মিল রয়েছে, মুম্বই ও করাচির গোপন ফোনাফুনি। এ একদম সাদা সত্য। দুই শহরের ছায়ামানুষরা ফোনে ফোনে এদিক থেকে ওদিক বা ওদিক থেকে এদিক নিমন্ত্রণ করে। তেমনই এক নিয়ন্ত্রিত ঘটনা ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর জঙ্গি হামলা।

‘মুম্বই খতরে মে’, অনেকবার হয়েছে। আরও আশঙ্কা আছে। এক যুগেরও আগে ২০০৮ সালের সেই জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের বাণিজ্য নগরী করাচি থেকে সুচতুর উপায়ে যেভাবে মুম্বইকে রক্তাক্ত করা হয় সেটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ তালিকায় অতি আলোচিত রক্তাক্ত পর্ব।

২৬/১১ মুম্বই হামলার সেই ঘটনায় হামলাকারী পাকিস্তান মদতপুষ্ট লস্কর ই তৈবা জঙ্গিদের রুখতে মুম্বইয়ের জঙ্গি দমন শাখার অফিসার (এটিএস) হেমন্ত কারকারের ভূমিকা যতটা বীরত্বের ততটাই সেদিন জঙ্গিদের গুলিতে শহিদ হওয়া বিতর্কের। কেন এই বিতর্ক ? হেমন্ত কারকারের মৃত্যু নিয়ে তাঁর পরিবারের তরফেই বারবার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অভিযোগ হিসেবে উঠে এসেছে ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তির কিছু নাশকতার পরিকল্পনা বানচাল করা হেমন্ত কারকারের ভূমিকা।’ প্রবল আলোচিত হয় শহিদ আরও এক পুলিশকর্তা অশোক কামতের পরিবারের কিছু বক্তব্য।

karkare-book

‘কারকারের হত্যাকারী কে’ (ভারতে সন্ত্রাসবাদের প্রকৃত চেহারা) বইটি তীব্র আলোচিত। মূল বই “Who Killed Karkare? The Real Face of Terrorism in India” থেকে বাংলা সহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে এই বই। লেখক, এস এম মুশরীফ (প্রাক্তন আই.জি পুলিশ, মহারাষ্ট্র)। লেখক তাঁর সুদক্ষ সহকর্মী হেমন্ত কারকারের মৃত্যু নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে গোপন সূত্রের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন। যুক্তির পর যুক্তি তুলে ধরেছেন। বইটির বাংলা অনুবাদক সব্যসাচী চক্রবর্তী। বাংলায় প্রকাশ করেছে বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশন।
”ভারতে সন্ত্রাসবাদের প্রকৃত চেহারা’ বর্ণনা করতে গিয়ে লেখকের যুক্তি, ভারতের পক্ষে সৌভাগ্যজনক ও তাদের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক, মহারাষ্ট্র পুলিশের এটিএস প্রধান হেমন্ত কারকারে, ২০০৮ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্ত যেভাবে করেছিলেন, তাতে তাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেল। স্বপ্নও রয়ে গেল অধরা। কারকারে তদন্তের অর্ধেকটা পথ এগিয়েছিলেন, তারপরেই মুম্বই হামলার ঘটনা।”

লেখক পুলিশের শীর্ষ কর্তা হিসেবে তাঁর গবেষণা ও অনুষন্ধানের ভিত্তিতে তুলে ধরেন “২০০৮ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণ পর যখন আসল সন্ত্রাসবাদীদের গ্রেফতার করা হল, তখন বিস্ফোরণের ঘটনা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল।”

মালেগাঁও বিস্ফোরণ ও নাশকতার তদন্তে উঠে আসে এতে জড়িত অভিনব ভারত সহ কিছু সংগঠন। মুম্বই পুলিশের তদন্তে বলা হয়েছে এই সংগঠনটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী মতবাদ নিয়ে চলে। মালেগাঁও বিস্ফোরণের পরপরই হয়েছিল ২৬/১১ মুম্বই হামলা।

প্রাক্তন পুলিশকর্তার বইটি নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা সমানতালে চলেছে। তাৎপর্যপূর্ণ, বইটির বিষয়বস্তু নিয়ে তৎকালীন ও বর্তমান কোনও কেন্দ্রীয় সরকার উচ্চবাচ্য করেনি। যদিও বিভিন্ন সংগঠনের তরফে বইটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে বারবার।