Lal Bahadur Shastri: নেহরুর উত্তরসূরী লালবাহাদুর শাস্ত্রী

১৯৬৪ সালের ২৭ মে জওহরলাল নেহরুর মৃত্যু হয়৷ কিন্তু তার কয়েকদিন আগে ২২মে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- তিনি জীবিতকালেই তাঁর কোনও উত্তরসূরী…

Lal Bahadur Shastri
Siddhartha Mukhopadhyay
সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় , লেখক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক

১৯৬৪ সালের ২৭ মে জওহরলাল নেহরুর মৃত্যু হয়৷ কিন্তু তার কয়েকদিন আগে ২২মে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- তিনি জীবিতকালেই তাঁর কোনও উত্তরসূরী ঠিক করে রাখছেন কি না৷ জবাবে নেহরু সেদিন বলেছিলেন , ‘‘ আমার জীবন এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে না ৷’’ যা দেখে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ধারণা নেহরু প্রকৃত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন তাই এ ভাবে কাউকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে যেতে চাননি বরং গোটা ব্যাপারটা দলের উপর ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন৷

যদিও ভিন্ন মত হল, মৃত্যুর কিছুদিন আগে যখন তাঁর স্ট্রোক হয়েছিল তখন না কি নেহরু কংগ্রেস সভাপতি কামরাজকে জানিয়েছিলেন, তাঁর পরে ইন্দিরা গান্ধীকেই করা উচিত ৷ এমন ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য তাঁর ছিল তাই তিনি একদিকে কাউকে মনোনীত করা এড়িয়ে যাচ্ছিলেন শুধু নয়, তখন নানা দিক থেকে চাপ আসলেও ওই সময় শাস্ত্রীকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাবে রাজি হননি নেহরু ৷ যদিও আবার ‘কামরাজ পরিকল্পনা’ মাফিক সরকারি পদ থেকে নেহরু সরিয়ে দিয়েছিলেন সেই সব নেতাদের যারা তাঁর পরে প্রধানমন্ত্রীর দাবীদার হতে পারেন৷ যার ফলে সরতে হয়েছিল মোরারজি দেশাই, লাল বাহাদূর শাস্ত্রী, জগজীবন রাম, এসকে পাতিল প্রমুখদের ৷

যদিও কিছুদিন পরে লাল বাহাদূরকে মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল৷ যারফলে অনেকের পাল্টা যুক্তি মোরারজিকে না চাইলেও নেহরু শাস্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী করার পক্ষেই ছিলেন৷ কিন্তু শেষমেশ প্রকাশ্যে কাউকে মনোনীত না করে যাওয়ায় কাজ বেড়ে গিয়েছিল কামরাজের৷ তিনি এবং তাঁর সিন্ডিকেট নেতা বন্ধুরা শাস্ত্রীর নামই তুললেন৷ কতিপয় বামমনোভাবাপন্ন কংগ্রেসিরা ছাড়া তখন ইন্দিরার পক্ষে তেমন কোনও সাড়া মেলেনি৷ বরং তখন দৌড় হচ্ছিল শাস্ত্রী বনাম মোরারজি ৷

নেহরুর মৃত্যুর ঠিক পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলজারিলাল নন্দাকে অন্তরবর্তীকালীন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ ঠিক হয় কয়েকদিনের মধ্যে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া হবে৷ নতুন প্রধানমন্ত্রী খুঁজে নেওয়ার কাজটা মূলত তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি কামরাজের উপর বর্তায়৷ এজন্য কামরাজ এক ডজন মুখ্যমন্ত্রী এবং দুশো সাংসদের সঙ্গে কথা বলেন৷ নেহরুর উত্তরসূরি হিসেবে তখন মোরারজি দেশাইয়ের নাম উঠলেও সেই আলোচনা থেকে কামরাজ বুঝতে পারেন মোরারজিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে ৷ বরং বেশির ভাগের পছন্দ লালবাহাদূর শাস্ত্রীকে৷ তাছাড়া নেহরু শেষের দিকে লাল বাহাদূরের উপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন বলে তাঁর দিকেই অনেকে ঝুঁকেছিলেন৷

তাছাড়া কামরাজ তথা সিন্ডিকেটের নেতারা শাস্ত্রীকে চাইছিলেন কারণ তিনি নম্র ও শান্ত স্বভাবের মোরারজির মতো বদমেজাজের নয়৷আশা করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী হলে শাস্ত্রী সিন্ডিকেটের কথা শুনবেন আর উল্টে মোরারজি তাদের পাত্তাই দেবে না এমন আশংকা করা হয়েছিল৷ ফলে কামরাজের পাশাপাশি নিজলিঙ্গাপ্পা ,অতুল্য ঘোষ, সঞ্জীব রেড্ডির মতো শক্তিশালী নেতারা ঠিক করে রেখেছিলেন যেভাবেই হোক মোরারজিকে আটকাতে হবে এবং শাস্ত্রীকে গদিতে বসাতে হবে ৷

তখন সেইমতো বুঝিয়ে সুঝিয়ে মোরারজিকে প্রার্থী পদ তুলে নিতে রাজি করানো হয়৷ ৩১মে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি লাল বাহাদূর শাস্ত্রীর নাম অনুমোদন করে৷ এরপর কংগ্রেসের সংসদীয় কমিটি তাতে সায় দেয়৷ ফলে লাল বাহাদূর শাস্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এবং অচিরেই নিজ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন ৷ এদিকে মোরারজি দেশাই মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য পীড়াপীড়ি করতে দেখে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়৷ তবে তখন নেহরু কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে মন্ত্রিসভায় নেওয়ার ব্যাপারে চাপ আসলে তাঁকে তিনি মন্ত্রী করেন ঠিকই তবে কোনও গুরুত্বপূর্ণ দফতর দিতে চাননি৷ ইন্দিরাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী করা হয়৷ ওই সময় আবার ইন্দিরা দাবি তোলেন তিনমূর্তি ভবনটি নেহরু স্মরণে মিউজিয়াম বানাতে৷ যদিও অনেকের মতে সেটা ছিল ইন্দিরার পাল্টা চাল৷ শাস্ত্রীকে তিনমূর্তি ভবনে প্রবেশাধিকার না দেওয়ার জন্য ইন্দিরা অমন দাবি তুলেছিলেন৷

তথ্যঋণ
১) ইন্দিরা একাদশী -বরুণ সেনগুপ্ত
২) গান্ধী উত্তর ভারতবর্ষ- রামচন্দ্র গুহ