Pataliputra: কংগ্রেস যেন মগধের ঘোড়া, হিমালয়ের নিচে গণতন্ত্রের জন্য ষড়যন্ত্র

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ও ভাই ঘোড়সওয়ার, মগধ কোন দিকে? মগধ থেকেই এসেছি, ফিরছি নিজের ঘরে… মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সাংসদ ও কবি শ্রীকান্ত ভার্মা যেদিন ‘মগধ’ কবিতা লিখেছিলেন,…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী:

ও ভাই ঘোড়সওয়ার, মগধ কোন দিকে?
মগধ থেকেই এসেছি, ফিরছি নিজের ঘরে…
মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সাংসদ ও কবি শ্রীকান্ত ভার্মা যেদিন ‘মগধ’ কবিতা লিখেছিলেন, সেদিন থেকেই তিনি বিহারের আপনজন। পঁচাত্তরের জরুরি অবস্থার পর দেশজুড়ে কংগ্রেসের ঐতিহাসিক পতন হচ্ছিল। জেপি হামলায় বিপর্যস্ত হচ্ছিলেন ইন্দিরা। তবে মধ্যপ্রদেশে শ্রীকান্ত ভার্মা কংগ্রেসের পতাকা তুলে বিজয়ী হচ্ছিলেন ধারাবাহিকভাবে। ১৯৭৭ সালে জেপি নেতৃত্বে জনতা দল ঠিক যেন প্রাচীন মগধের দুরন্ত গতির অশ্বমেধ ঘোড়া। সেই সুপ্রাচীন মগধের ক্ষুদ্র প্রতিপক্ষ বৃজি যেমন ঐতিহাসিক প্রতিরোধ করেছিল, তেমনই আধুনিক ভারতের জনতা দল-কে রুখছিলেন গুটিকতক কংগ্রেস নেতা। সেই প্রেক্ষিতেই (Pataliputra) শ্রীকান্ত ভার্মার লেখা হিন্দি কবিতাটি। দূর্বল অনুবাদ করলাম।  

   

ইতিহাসে নিশ্চিত পাঠ্য বিখ্যাত ষোড়শ মহাজনপদ। প্রাচীন ভারতের ষোলটি শাসন কেন্দ্রের সর্বশেষ্ঠ দুই নগর পাটলিপুত্র ও বৈশালী। দুটি নগরী হলো প্রধান দুই  প্রতিপক্ষ মগধ ও বৃজির রাজধানী। রাজতান্ত্রিক মগধের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রজাতান্ত্রিক ‘গণরাজ্য’ বৃজি। উৎকর্ষে মগধের থেকে কম নয় বৈশালী। যেদিন ‘মগধ কে সেনা’ হামলা করেছিল, ওই দিন থেকেই প্রাচীন ভারতের বিশ্বশ্রেষ্ঠ নগরী বৈশালীর ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। একসময় প্রজাতান্ত্রিক শক্তি পরাজিত হয়। বিহার হলো সেই রণভূমি।

তাৎপর্যপূর্ণ, আধুনিক ভারতেও এই বিহার হয়েছিল তেমনই রণভূমি। কংগ্রেস বনাম জনতার লড়াই। ইতিহাসের চাকা ঘুরে এবারেও ‘জনতা’ পরাজিত হয়।

প্রাচীন হোক বা এখন বিহারের মানচিত্রে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাটি প্রায় একই আছে। প্রাচীন সেই মগধ সাম্রাজ্যের উত্তর অংশ অথবা বিহারের উত্তর দিক হলো নেপালের তরাইভূমি-হিমালয়ের নিচের থাকের অংশ। এই আন্তর্জাতিক সীমান্তে আছে বিহারের সাতটি জেলা-পশ্চিম চম্পারণ, পূর্ব চম্পারণ, সীতামাঢ়ি, মধুবনী, সুপৌল, আরারিয়া ও কিষাণগঞ্জ। ষোড়শ মহাজনপদের মগধ ও বৃজি মিশে আছে বিহারের এই সব জেলাতেই।

স্বাধীনতার পর টানা দু’টি দশক কংগ্রেসের অতি শক্ত ঘাঁটি উত্তর বিহার। তার পরে দলিত রাজনীতির কেন্দ্র। এর কারণ অবশ্যই জরুরি অবস্থার সময় বিহারের রুখে দাঁড়ানো,কংগ্রেসের বিপর্যয়।

চমকে যাবেন, সীমান্তের এপারেও কংগ্রেস আবার ওপারেও কংগ্রেস ! দু-পারেই কংগ্রেস স্বমহিমায় বিরাজমান। দুই কংগ্রেসের চরিত্র এক। শুধু নামের আগে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস আর নেপালি কংগ্রেস লেখা হয়। কূটনীতি, রাজনীতির একই পথ। তবে দলীয় পতাকা সম্পূর্ণ আলাদা। তবে দুই দেশের কংগ্রেসি নেতাদের গলায় গলায় বন্ধুত্ব।

ভারত-নেপাল সীমান্ত চুক্তির কারণেই খোলা আন্তর্জাতিক সীমারেখা। চেকপোস্ট-বাঁশের গেট খুলে দু’দিকে যাতায়াত হরদম হয়। এই সুবিধা নিয়ে বিহার থেকে নেপালে আসা যাওয়া লেগেই থাকে। স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই নেপালের রাজনৈতিক নেতাদের জীবনের বড় অংশ ভারতেই কেটেছে। এরা ভারতে থেকেই কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে এসেছেন। রাজনৈতিক গণ আন্দোলনের শিক্ষা নিয়েছেন। দেশে ফিরে নিজেদের মতো রাজনৈতিক পথ তৈরি করেছেন।

সত্তর দশকে তীব্র ঝঞ্ঝাপূর্ণ নেপালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই মোস্ট ওয়ান্টেড নেতাদের আশ্রয় ছিল বিহার। ঠিক যেমন পরাধীন ভারতের বিপ্লবীদের ‘সেফ হাউস’ হতো নেপালের যে কোনো গ্রামের বাড়ি।রাজতান্ত্রিক নেপালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চলছিল। নেপালের রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ’র বিরুদ্ধে  রাজপথে তখন বিদ্রোহের প্রবল আস্ফালন। আবার গোপনে সশস্ত্র উপায়ে রাজার পতন ঘটানোর ছক করা হচ্ছিল। গণতন্ত্র আনার জন্য হিমালয়ের নিচে তরাই জঙ্গলে চলছিল ষড়যন্ত্র। নেপালি কংগ্রেসের এই পরিকল্পনার নেতৃত্বে গিরিজা প্রসাদ কৈরালা, সুশীল কৈরালার মতো কিংবদন্তি নেতা। সেই সময় বিহারের মাটি থেকে হয় একটি মারাত্মক আন্তর্জাতিক গেরিলা হামলা। বিশ্ব কেঁপে গিয়েছিল। এই ঘটনার ‘নীরব’ প্রত্যক্ষদর্শী নায়িকা মালা সিনহা।

বিহার মানেই হাড় হিম করা ঘটনার কেন্দ্র। (চলবে)

গত পর্ব: Pataliputra: জ্যোতি বসুকে টার্গেট করে গুলি চালালো সুপারি কিলার, একজন পড়ে গেল