Monday, December 8, 2025
HomeEditorialPataliputra: 'তু অছুত হ্যায়, অব দেখ কেয়া হোগা', শুরু হয় একটা রক্তাক্ত...

Pataliputra: ‘তু অছুত হ্যায়, অব দেখ কেয়া হোগা’, শুরু হয় একটা রক্তাক্ত পর্ব

- Advertisement -

প্রসেনজিৎ চৌধুরী:
‘বদলা’ এই শব্দ মিশে আছে সমগ্র উত্তর পশ্চিম ভারতের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে। একেবারে খতম নীতি। কোনো আপোষ মীমাংসা নয়। তীব্র জিঘাংসায়  প্রতিশোধ, তার বদলা, তার বদলা এভাবেই চক্রবৃদ্ধি সুদের মতো খতিয়ান তৈরি হচ্ছে। আজ যখন বিহারের প্রেক্ষিতে কিছু পুরনো পাতা উল্টে দেখছি, তখন বার বার হাজির হচ্ছে প্রতিশোধ রাজনীতির রক্তাক্ত পর্বগুলি। পাটলিপুত্রের যুদ্ধ (Pataliputra) এই নব্য পর্বে গত শতকের সত্তর দশক থেকে ‘বদলা’ বীজের চারাগাছ ডালপালা মেলতে শুরু করেছিল।

“समझौता? कैसा समझौता ? हमला तो तुमने बोला है”
-শৈলেন্দ্র

   

কবি গীতিকার শৈলেন্দ্র তাঁর কলমে যে বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ ধরে রেখেছেন তাতে স্পষ্ট সমঝোতা বা সন্ধি হবে না। যদি হামলা হয় তাহলে প্রত্যাঘাত হবেই। বাস্তব সেটাই। অথচ দাবি করা হয় ভারতের অন্তরাত্মা বুদ্ধ-গান্ধীর শান্তি পথে চলে। এই পথে প্রত্যাঘাত তত্ত্ব না-মঞ্জুর। গান্ধী কি ভাবতে পেরেছিলেন তাঁর দেখানো পথে চৌরিচৌরায় ভয়ঙ্কর প্রত্যাঘাত হবে। এ ছিল তাঁর কল্পনাতীত। ভারত স্বাধীন হবার পরেও নরম-চরম তত্ত্বের কঠোর প্রয়োগ চলেছে। যে পথের যে পথিক তার দৃষ্টিতে সেটাই সঠিক।

ভারত স্বাধীন হবার পর থেকে অতি মূল্যবান এক সম্পদের সংবিধান বইয়ের অধিকারী ছিল বিহার। ‘ছিল’ একথা বলছি তার কারণ, ২০০০ সাল থেকে সেই প্রথম সংবিধানের অনুলিপি বই ঝাড়খণ্ডের সম্পত্তি।  গিরিডি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে এই অমূল্য সম্পদ। রাজ্য ভাগের ফলে বিহারের হাতছাড়া হয় এই বই। সংবিধান প্রস্তাবনায় সাম্যের কথা বলা হয়েছে। ভারতে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার যতটুকু চেষ্টা হয়েছিল সেটা বারবার বিহার, উত্তর ও উত্তর পশ্চিম ভারতের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

ভয়াবহ জাতিবাদে আচ্ছন্ন দেশ। এই দেশের সংবিধানে লেখা সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা নেহাতই কল্পনা। গঙ্গা, কোশী, শোন, চম্বল নদী বিধৌত রোহিলখণ্ড, বুন্দেলখণ্ডে বিভক্ত উত্তর প্রদেশ, অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, আর একপাশে বিহারভূমির বাস্তব ছবি হলো এখানে কোনো অন্ত্যজ শ্রেণির ছায়ার ছোঁয়া লাগলে উঁচু জাতির লাল চোখ জ্বলে ওঠে। ‘তু অছুত হ্যায়, অব দেখ কেয়া হোগা’-আসে এমন প্রাণঘাতী হুমকি। তারপর শুরু হয় একটা রক্তাক্ত পর্ব।  এই কারণেই চম্বল তীরে উচ্চবর্ণের কাছে ‘অছুত’ মালহা শ্রেণীর (মাঝি সম্প্রদায়) ফুলন গণধর্ষিতা হয়। ‘বদলা’ নিতে বন্দুক হাতে নেন ফুলন। ১৯৮১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ফুলনের বন্দুক সেই গণধর্ষণের গ্রাম উত্তর প্রদেশের বেহমইতে কুড়ি জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। সেদিন বেঁচে যাওয়া ও মৃতের আত্মীয়রা অস্পষ্ট শব্দে বলেছিলেন ‘বদলা’।

ফুলন একদিকে ‘গণধর্ষিতা’ আবার তিনিই ‘গণহত্যাকারী’। এই বিতর্কিত অবস্থানের মূলে একটাই কথা চিরন্তন সত্য ‘বদলা’ বা প্রতিশোধ। সেই একই কারণে কুড়ি বছর পরে গুলিতে ঝাঁঝরা হন ফুলন। সংসদে সবার সামনে কমিউনিস্ট নেতা ইন্দ্রজিৎ গুপ্তর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেন তিনি। ডাকতেন বাবা। কিন্তু উত্তর প্রদেশের মির্জাপুর কেন্দ্রে ভোটের সময় জমির লড়াই করা সিপিআই প্রার্থীর দিকে তাকিয়ে ভয়াল হাসতেন। ফুলনের হাসিতেই ভোটের আগে ভোট শেষ হয়ে যেত!  আশির দশকে ফুলনের গণধর্ষণ, চরম প্রতিশোধের গণহত্যা বিশ্বজোড়া শিহরণ তৈরি করে। তবে গণহত্যার নিরিখে শুধু উত্তর প্রদেশ নয় বারবার আলোচনায় এসেছে অসম, ত্রিপুরা। আর বিহারের মাটিতে বদলা রাজনীতির গণহত্যা দেশ তো বটে পুরো বিশ্বকে বারবার নড়িয়েছে।

‘৭৫ সালের জরুরি অবস্থার পর বিহার জুড়ে জেপি আন্দোলন সব জাতি বর্ণকে প্রতিবাদের একসারিতে আনলেও, আজন্ম পালিত সংস্কারের ফল্গুধারায়  জাতিবাদ বয়ে চলেছিল। জেপি আন্দোলনের নতুন ধারায় উঠে আসছিলেন দলিত, অন্ত্যজ ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধিরা। কিন্তু জেপি প্রয়াণের পরেই সব যে কে সেই।

সত্তর দশকে দুটি  মারাত্মক ঘটনায় পুরো দেশ নড়ে গিয়েছিল। ‘৭৪ সালে দুর্ঘটনার নীল নকশায় রহস্যময় মৃত্যু হয় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কে বি সহায়ের। আর ‘৭৫ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে সমস্তিপুরে বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ইন্দিরা ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা, রেলমন্ত্রী ললিতনারায়ণ মিশ্রের। বিহারের পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রের ভাই ছিলেন ললিতনারায়ণ। তিনি ব্রাহ্মণ। এবার উঁচু শ্রেণিভুক্তরা তৈরি হলেন ‘বদলা’ নিতে। 

বিহারের ভোজপুর, হাস্যরসাত্মক বাচনভঙ্গী আর রক্তাক্ত ঘটনার মিশেলে একটি এমন জনপদ, যেখান থেকে বদলা শব্দের রাজনীতিকরণ নির্দিষ্ট পথ ধরেছিল।(চলবে)

গত পর্ব: Pataliputra: বিদ্রোহী বিহারে কুঁয়র সিংয়ের হামলায় পরাজিত হয় ব্রিটিশ, জনজাগরণে জয়ী হন জেপি

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular