Sunday, December 7, 2025
HomeEditorialPataliputra: মাফিয়া সূরজদেও সিংয়ের ইশারায় চলল গুলি, মার্কসিস্ট রায়বাবু নামলেন গণপ্রতিরোধে

Pataliputra: মাফিয়া সূরজদেও সিংয়ের ইশারায় চলল গুলি, মার্কসিস্ট রায়বাবু নামলেন গণপ্রতিরোধে

- Advertisement -

প্রসেনজিৎ চৌধুরী:
কহানি কুছ অ্যায়স্যা হ্যায়, রায়বাবু নে আপনে দম পর ধানবাদ মে মাফিয়া রাজ সে লড়নে কি জী জান কওশিস কিয়ে। আখির পয়সে কে মুকাবলে কোই কিতনা দূর তক লড়েগা…। (Pataliputra)

আজও এই চরম ধান্ধাবাজি রাজনীতির মধ্যে কালো টাকার খনি ধানবাদ শহরে যদি আপনি ভুল করেও কারোর কাছে ‘রায়বাবু’ নাম বলে ফেলেন, সে সাধারণ মানুষ হোক বা সুপারি কিলার অথবা মামুলি কয়লা চোর বা ধরুন মাফিয়া লিডার, রাজনৈতিক দলনেতা, পান বিড়ি খৈনির দোকানদার, সাধারণ চাকরিজীবী, যেই হোক রায়বাবু নাম শুনে তাদের হাতটা বুকের উপর চলে আসে। এই শহর সাক্ষী মাফিয়া বনাম মার্কসবাদীর দুরন্ত লড়াইয়ের।

   

ধানবাদ ছাড়িয়ে নিরসা পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সীমানা লাগোয়া রেলশহর চিত্তরঞ্জন, আসানসোল, বার্নপুর, আদরা, দুর্গাপুরের পর রায়বাবুর অস্তিত্ব তেমন পাওয়া যায় না। খনি শিল্পাঞ্চল পার করে শস্যবহুল বঙ্গ জমিতে তিনি গুটিকয়েক ব্যক্তির কাছে পরিচিত। খনি মাফিয়াদের ভয়ের কারণ রায়বাবু দামোদর-বরাকর নদ পেরিয়ে তেমন আলোচিত হননি। এ নেহাতই বঙ্গ উন্নাসিকতা। আর কিছু না !

“जिसे ढूँढती है तेरी नजर, ना उदास हो मेरे हमसफ़र”-জাভেদ আখতার

ধানবাদ।
যানজটে, কেলাহলে, হিন্দি সিনেমার মারকাটারি অ্যাকশনের আসলি ‘ঘটনায়েঁ’ মিশে থাকা কয়লাখনি অঞ্চলের সেরার সেরা শহর। এখানেই আছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা ক্ষেত্র বিসিসিএল (BCCL) সদর দফতর। টাকা উড়ছে কালো ধোঁয়ায়। এখানকার কালো হীরে তুলে আনা শ্রমিক মহল্লার রাজা হয়ে ‘দিল্লি তক’ কাঁপাচ্ছিলেন এ কে রায় (রায়বাবু)। এই ধানবাদ শহর আবার কয়লা মাফিয়া সূরজদেও সিংয়ের জমিনদারি। এখানে যেমন এ কে রায়ের অবাধ যাতায়াত। আবার শ্রমিক মহল্লাতেও সূরজদেও ঢুকে পড়ে যখন তখন। 

প্রায়ই রাস্তার উপরেই ‘দিনদহাড়ে’ গুলি চলে। আচমকা গলির ভিতর থেকে প্রবল চিৎকার করে তলোয়ার, কট্টা নিয়ে তেড়ে আসে কয়েকজন। দু চারটে লাস দোকানের সামনে নালার ধারে পড়ে থাকে। ‘গোলিয়াঁ সে লহুলুহান’ হয়ে যায় বাজার। তদন্তে নেমে ধানবাদ পুলিশ হাত তুলে নেয়। ঠিক তখন সূরজদেও সিং মালাই দেওয়া মোটা দুধের চা খেতে খেতে হাল্কা ইশারা করেন। ফের ঠাণ্ডা হয়ে যায় ধানবাদ।
এরপর কী হয়?
রায়বাবুর নির্দেশে এমসিসি (মার্কসিস্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটি) পার্টি বনধ ডাকে। বিসিসিএলের প্রায় সব খনিতে তখন কাম বন্ধ। ধানবাদের রাস্তা খাঁ খাঁ করে। তখন মাথায় হাত পড়ে বেওসাদারদের। নয়াদিল্লির সুন্দর এয়ার কন্ডিশন মোড়া কয়লা মন্ত্রকের মন্ত্রী থেকে সান্ত্রী সবার কপালে ঘাম জমে। আর ধানবাদের রাস্তায়, কয়লা শ্রমিকদের বস্তিতে বুক শুকিয়ে দেয় এমন গরমে মাথায় গামছা বেঁধে রায়বাবু তখন মোর্চা সামলান। তাঁর এক ডাকে হাজার হাজার কয়লা মাখা মানুষ ঘিরতে শুরু করে ধানবাদ। পুলিশ আসে। ডিএম আসেন। পাটনা থেকে ফোন আসে। দিল্লি থেকে ফোন আসে। মুখ্যমন্ত্রী, কয়লামন্ত্রীর বারবার অনুরোধে প্রতিশোধের রাগে জ্বলতে থাকা শ্রমিকদের ঠান্ডা করেন রায়বাবু। আবার সব কিছুদিনের জন্য মিটমাট। চুপ মেরে থাকে সূরজদেও।

১৯৭৭-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ধানবাদের এমপি (সাংসদ) এ কে রায় ভোটের বাক্সে অপরাজিত।  ‘৮৪ তে প্রথম পরাজয় হলো  ইন্দিরা হত্যার সহানুভুতি হাওয়ায়। সেবার ধানবাদে কংগ্রেস তরতরিয়ে জিতল। অবশ্যই সূরজদেও সিংয়ের শক্তি ছিল কংগ্রেসের পাশে। ভোটে হারার পরেও রায়বাবুর মুখে মৃদু হাসি। ধানবাদ জুড়ে আকাশে গুলি ছুঁড়ে বিজয় উল্লাস করছে সূরজের বাহিনী। রায়বাবুকে ঘিরে একপাল কয়লা শ্রমিক বসে আছে এমসিসি পার্টি অফিসে (মাওবাদী সংগঠন নয়)। রায়বাবু মহল্লা মহল্লায় মোর্চা বানাচ্ছেন। হামলাকারীরা ঢুকলেই হবে গণ প্রতিরোধ। চুরাশির ধানবাদ এমনই। নুনডি কোলিয়ারির কালো ধোঁয়া আর মাটির তলার গনগনে আগুনের আ়ঁচে ঝলসে যাওয়া শ্রমিকদের নিয়ে প্রতিরোধের পথে এ কে রায়। প্রতিপক্ষ সূরজদেও সিং জাতিতে রাজপুত। সে মাফিয়া হলেও কিন্তু জাত্যাভিমানী। অকুতোভয় রায়বাবুর থেকে সম্মান দূরত্ব রাখত। মোর্চার পর মোর্চা। মহল্লায় মহল্লায় গণ প্রতিরোধের পরিকল্পনা করে সূরজদেও সিংয়ের বন্দুকধারী বাহিনীকে শেষপর্যন্ত আটকে দিলেন রায়বাবু। ভোটের চাকা ঘুরিয়ে ‘৮৯ সালে ফের ধানবাদের দখল নিলেন এ কে রায়। 

‘৭৭ সাল থেকে টানা এমপি, তার আগে বিহার বিধানসভার ‘স্টার’  বিধায়ক রায়বাবু নিজেই একটা ‘কহানি’। এতবারের সাংসদ, বিধায়ক কিন্তু টাকা নেই! এমপি বেতন ভাতার প্রায় পুরোটা সরকারি তহবিলে দান করেন। গাড়ি নেই। নর্দমার পাশে মাছি ভনভন করা ছোট ঘর থেকে গণতান্ত্রিক লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। জনপ্রিয়তা প্রবল। প্রভাব বিশাল। পাটনা হোক বা দিল্লি একডাকে সবাই সেলাম করে।

দশক পাল্টে গেল। নব্বই দশক শুরু। এই দশকের প্রথম লোকসভা নির্বাচনী ফের লড়াইতে নামলেন ধানবাদের সাংসদ এ কে রায়। নিশ্চিত পরাজয়। সেই শেষ, ১৯৯১ সাল থেকে ধানবাদ আর কোনোদিনই মার্কসবাদী রায়বাবুকে সংসদে পাঠায়নি। লেন-দেন ভিত্তিক রাজনীতিতে অতি দ্রুত পিছিয়ে পড়ছিলেন তিনি।

বিহারকে ভাঙতেই হবে। ভীষ্মলোচন শর্মার মতো ঝাড়খণ্ড তৈরির কঠিন পণ করা এ কে রায় ও  শিবু সোরেনের এতটাই প্রভাব যে পাটনার মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয় একেবারে খাবি খাচ্ছিল। জমাট হচ্ছিল ঝাড়খন্ড আন্দোলন।

এ কে রায় তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিশ্মাটিক ইমেজে শ্রমিক মহল্লায় জনপ্রিয়। রোটি, কাপড়া, মাহিনা, মকান লড়াইয়ে তিনি আছেন। কিন্তু ভোটে আর ছিলেন না। তবে তাঁর নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ড আন্দোলন পূর্ণতা পাচ্ছিল। ২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর অবশেষে চূড়ান্ত বিজয় এলো। বিহার ভাঙল। নবগঠিত ঝাড়খণ্ডের জন্মদাতা হিসেবে সেই মাছি ভনভন করা ঘর বেছে নিলেন এ কে রায়। সীমিত থেকে গেলেন খনি মহল্লাতেই। নতুন রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে বিপুল জনসমাবেশে শিবু সোরেন তখন ঝাড়খন্ডের ‘রাজা’। আর ঝরিয়া কয়লাখনি থেকে সূরজদেও সিং ঝাড়খন্ড ও বিহার দুই রাজ্যেই মাফিয়া ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যাস্ত।

সাংসদদের কেন বেতন বাড়বে ? সংসদে বারবার এই প্রশ্ন তোলা এ কে রায় ২০১৯ সালের ২১ জুলাই প্রয়াত হলেন। সেদিন ঝাড়খণ্ড স্তব্ধ। এ রাজ্যের জন্মদাতা বাঙালি ‘বরিশইল্যা’ এ কে রায়ের ব্যক্তিগত কিছুই ছিল না।
হাসপাতাল থেকে তাঁর দেহটা দলীয় পতাকায় মুড়ে বের করলেন কয়েকজন কয়লা শ্রমিক। বিউগল বাজল। বন্দুক নামাল পুলিশ। শ্রমিকদের কাঁধে বিদায় নিলেন অরুন কুমার রায়-ধানবাদের রায়বাবু। (চলবে)

গত পর্ব: Pataliputra: খাপরার চালের ঘরে থাকা মার্কসবাদী এ কে রায়ের মৃদু হাসিতে বুক কাঁপত কয়লা মাফিয়াদের

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular