Mamata Banerjee: আন্দোলনের প্রাক্তন সতীর্থরাই এখন মমতার পথের কাঁটা

সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের দুই মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) ক্ষমতার অলিন্দে এনে দিয়েছিল৷ বঙ্গ রাজনীতির ইতিহাসে মাইলস্টোন গড়া জোড়া আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরাই পরবর্তীতে তাঁর দলেরই…

Mamata Banerjee former colleagues

সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের দুই মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) ক্ষমতার অলিন্দে এনে দিয়েছিল৷ বঙ্গ রাজনীতির ইতিহাসে মাইলস্টোন গড়া জোড়া আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরাই পরবর্তীতে তাঁর দলেরই সতীর্থ হয়েছেন৷ কিন্তু সময় বদলেছে৷ সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের দুই নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এখন অন্য দলে৷ কেউ বলছেন, টাটাকে তাড়ানোর ক্ষেত্রে মমতার ভূমিকা ছিল৷ আবার কেউ বলছেন, সিঙ্গুর কোনও আন্দোলন ছিল না৷ নন্দীগ্রাম ছিল আসল আন্দোলন৷

২০০৭ ও ২০০৮ সালে বামেদের সূর্য যখন মধ্যগগণে তখন ঘূণ ধরিয়েছিল এই দুই আন্দোলন৷ সিঙ্গুর আন্দোলনে তৃণমূলের প্রথম সারীর নেতারা যেমন উপস্থিত ছিলেন, তেমন উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মানুষ। সেই আন্দোলনের রাস্তা ধরেই রাজ্য রাজনীতির ফোকাসে এসেছিলেন বেচারাম মান্না, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য নেতৃত্ব৷ অন্যদিকে, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারীদের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷ কিন্তু দল বদলানোর পরেই কেন দুই আন্দোলনকে দাঁড়িপাল্লার মাপছেন তাঁরা? কেন আন্দোলনের যৌতিকতা নিয়ে আগে প্রশ্ন তোলেননি? প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহল।

বৃহস্পতিবার সিঙ্গুর আন্দোলন কোনও আন্দোলনই নয়, ওটা তো শিল্প তাড়ানোর আন্দোলন। নন্দীগ্রামের আন্দোলনই আসল আন্দোলন। নন্দীগ্রামের আন্দোলন কৃষক হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন। একইসঙ্গে বিজেপির পিঠ চাপড়ে লালকৃষ্ণ আদবানী সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিকেও সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, একদিকে জনসাধারণের কমিটির নামে মাওবাদী- ছত্রধর জনসাধারণের কমিটি। অন্যদিকে তৎকালীন শাসক-পুলিশ ও পার্টি ক্যাডার নিয়ে তৈরি হয়েছিল যৌথ বাহিনী। দুটো কমিটি ভেঙে সেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামে প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাব গড়ার বরাত পেয়েছিল সালেম গোষ্ঠী। মোট ২৯টি মৌজা নিয়ে এই কেমিক্যাল হাব গড়ে ওঠার কথা ছিল। এর মধ্যে ২৭টি মৌজাই ছিল নন্দীগ্রামে। কিন্তু যা জমিটি অধিগৃহীত হওয়ার কথা ছিল, তা বহুফসলি জমি৷ এবং সেই জমি অধিগৃহীত হলে চল্লিশ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ এমনটা ভেবেই সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল গ্রামের মানুষ। শাসক দলের বিরুদ্ধেই সুর চড়িয়েছিল সিপি(আই)এমের নেতারাই৷ দীর্ঘদিন চলা সেই আন্দোলন বাংলার বুকে মাইলস্টোন তৈরি করেছিল৷ একইভাবে টাটার কারখানার জন্য অধিগৃহিত জমি নিয়েও সরব হয়েছিল সিঙ্গুরের মানুষ। দূর্গাপুর হাইওয়ের ওপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্যদের আন্দোলন নজির গড়েছিল৷

বাংলায় এখন রাজনৈতিক আবহাওয়ার বদল হয়েছে। এখ সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, আমি টাটাকে তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে। ওরা জোর করে জমি নিতে গিয়েছিল। আমরা ফিরিয়েছি। কিন্তু সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই বলেন, টাটা চলে গিয়েছে আন্দোলনের ফলেই যার নেতৃত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আন্দোলনের ফলেতেই টাটা চলে গিয়েছে৷ তাঁর কথায়, মাথায় বাড়ি মেরে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি কেড়ে শিল্প হোক, এখনও চাই না আমরা। তখনও চাইনি। সমঝোতার মাধ্যমে যদি টাটা এখানে শিল্প করত, তাহলে ভালো হত।

বাংলায় শিল্পের বরাত কার হাতে যাবে? ভবিষ্যতে শিল্পের সন্ধান মিলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন শাসক দলের জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন দুই সতীর্থ ভোলবদল এখন তাঁকে চরম বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। আগামী দিনে এরাই মমতার গলায় কাঁটার মতো বিঁধবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷