নিউজ ডেস্ক: আলফার ভয় আছেই এবার জুড়ছে নৃশংস ডিমাসা জঙ্গিদের নাম। অসম থমথমে। রাজ্যের ডিমা হাসাও জেলায় শুক্রবার পাঁচ শ্রমিককে পুড়িয়ে মেরেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ডিএনএলএ। তাদের দাবি আলাদা হিড়িম্বা রাজি অর্থাত অসম কেটে তৈরি হোক স্বশাসিত এলাকা। দাবি মানা না হলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করা হবে হুমকি ছিল তাদের তরফে। শুক্রবার সেটাই করে দেখিয়েছে ডিমাসা বিচ্ছিন্নতাবাদী-জঙ্গিরা।
রাজ্যের ডিমা হাসাও জেলা পুরোটাই উপজাতি অঞ্চল। ডিমাসা উপজাতি ভিত্তিক এই জেলায় অবশ্য বাঙালিরাও আছেন। নিম্ন অসমের বরাক নদী উপত্যকার কাছাড় জেলা পুরো বাঙালি অধ্যুষিত। কাছাড়ের উত্তরে উপজাতি জেলা হলো ডিমা হাসাও। এখানেই সক্রিয় ডিমাসা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি। সংগঠনটি অত্যন্ত আগ্রাসী।
হিড়িম্বা রাজি কী?
স্থানীয় পৌরাণিক গাথা অনুসারে একটি কাল্পনিক ভূখণ্ড হলো হিড়িম্বা রাজি। সেই ভূখণ্ডের দাবিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলা চালাল ডিএনএলএ গোষ্ঠী। বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ডিএনএলএ অধ্যক্ষ কার্মিনডাও ডিমাসা জানিয়েছে, আমরা কারও জমি ছিনিয়ে নিতে আন্দোলন করছি না। ডিমাসাদের হারিয়ে যাওয়া রাজ্য উদ্ধারে এই আন্দোলন চলছে।
২০১৮ সালের ডিমাসা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ডিএনএলএ জন্ম নেয়। অসম নাগাল্যাণ্ড সীমান্তে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে কয়েকবার।
কেমন আগ্রাসী হিড়িম্বা রাজি দাবি করা ডিমাসা জঙ্গিরা?
শুক্রবার যেভাবে পাঁচ লরি শ্রমিককে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তাদের চেহারা থেকেই স্পষ্ট হবে হামলাকারী ডিএনএলএ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কতটা নৃশংস। অসম পুলিশের মহানির্দেশক ভাস্করজ্যোতি মহন্ত জানিয়েছেন, ডিএনএলএ হামলা করেছে বেছে বেছে। মৃত ও জখম কেউ উপজাতিভুক্ত নয়। ডিমা হাসাও জেলার সদর হাফলং থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে হামলা হয়। একটি ট্রাক ঘিরে নেয় ডিএনএলএ জঙ্গিরা। গুলি চালিয়ে সবাইকে জখম করে। পরে আগুনে পুড়িয়ে মারে।
অসম সরকার ও ডিমা হাসাও জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে মৃতদের চারজন রাজ্যের হোজাই জেলার বাসিন্দা। একজন উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড়ের বাসিন্দা। মৃত তালিকায় সংখ্যালঘু মুসলিমরা রয়েছেন।
আরও পড়ুন: তালিবান সরকারের অংশীদার হাক্কানি নেটওয়ার্ক সক্রিয় নেপাল থেকে উত্তরবঙ্গে
শনিবারের পরিস্থিতি আরও থমথমে। ডিমা হাসাও জেলায় ছড়িয়েছে ভয়। কারণ ডিএনএলএ স্বাধীনতা দিবসের আগেই ভিডিও বার্তায় রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়াকি দিয়ে বলেছিল পৃথক স্বশাসিত এলাকা না হলে ভয়ঙ্কর হামলা হবে। তেমনই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে শুক্রবার।
ডিমাসা জঙ্গিদের হামলা, জ্যান্ত পাঁচজনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে অসমের বিজেপি সরার। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার প্রশাসন দূর্বল দাবি করেছে বিরোধী কংগ্রেস সহ বাকিরা। সম্প্রতি অসম-মিজো রক্তাক্ত পুলিশ যুদ্ধের পরেই রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রশাসন দূর্বল অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা।
অসমের কাছাড় জেলা লাগোয়া মিজোরামের কৈলাশিব জেলার আন্ত:সীমানায় দুই রাজ্য পুলিশের মধ্যে নজিরবিহীন গুলির লড়াইয়ে কেঁপেছিল দেশ। অসম পুলিশের ৫ রক্ষীর মৃত্যু হয়। এ যেন রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্র। পরিস্থিতি এমনই যে দুই রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর ও মুখ্যমন্ত্রীরা পরস্পরকে অভিযুক্ত করছেন। বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার মধ্যে টুইট লড়াইয়ে কেন্দ্র সরকার অস্বস্তিতে পড়ে।
এই রক্তাক্ত পুলিশ সংঘর্ষের পর বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলায় ফের অসমে ভয় ছড়িয়েছে।