Bangladesh: অরণ্য সুন্দরী সাতছড়ি যেন জঙ্গিদের অস্ত্র খনি, পা ফেললেই ভারত সীমান্ত

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: বারবার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার। প্রতিবারই বিপুল পরিমান। অস্ত্র ভাণ্ডার দেখলেই স্পষ্ট হয় সরাসরি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের জন্য এসব ব্যবহার করা হতো।বাংলাদেশের সাতছড়ি জাতীয় অরণ্য…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: বারবার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার। প্রতিবারই বিপুল পরিমান। অস্ত্র ভাণ্ডার দেখলেই স্পষ্ট হয় সরাসরি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের জন্য এসব ব্যবহার করা হতো।বাংলাদেশের সাতছড়ি জাতীয় অরণ্য যেমন প্রকৃতির বিপুল বিস্ময় তেমনই এই এলাকা যেন অস্ত্র খনি!

সোমবার এই অরণ্য থেকে ১৫টি মর্টার শেল, ২৫টি বুস্টার ও ৫১০ রাউন্ড অটো মেশিনগানের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে বারে বারে এমন আগ্নেয়াস্ত্র ভাণ্ডার উদ্ধার হচ্ছে। প্রতিবারই অস্ত্র সম্ভার দেখে চমকে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

সাতছড়ি অরণ্যের অন্দরে
গভীর এই সাতছড়ি সীমান্ত জঙ্গলের এমনও অনেক এলাকা আছে যেখানে আন্তর্জাতিক সীমারেখা অদৃশ্য। কোনদিকে ভারত কোনদিকে বাংলাদেশ তা নির্নয় করা কঠিন। ভারতের দিকে ত্রিপুরা আর বাংলাদেশের দিকে পড়েছে সিলেট। সাতছড়ি অরণ্যের মূলনিবাসী উপজাতি জনগোষ্ঠী ত্রিপুরা জাতির অন্তর্ভুক্ত। স্থানীয় ত্রিপুরা পল্লীর নামকরণ থেকেই স্পষ্ট।

বিরলতম প্রাণী ও উদ্ভিদ গবেষকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের সাতছড়ি অরণ্যাঞ্চল। পর্যটকরা আসেন অনবরত। তবে নির্দিষ্ট কিছু এলাকার বাইরে বৃহত্তর বনাঞ্চলে যাতায়াতে দুর্গমতার কারণে এখানেই সীমান্ত পারাপার হয় অতি সহজে। টিলা-জঙ্গল, নদী ঘেরা অদ্ভুত নীরবতা আর আলো আঁধারিময় সাতছড়িতে ছড়িয়ে আছে ভারত বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৈরি করা বহু বাংকার। মাটির তলায় পোঁতা আছে আগ্নেয়াস্ত্র।

চুপ যা টাইগার আসতাসে, বাঘের থাবা খাবা!

টাইগার?

এই নামটি পরিচিত সমগ্র পার্বত্য ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের সাতছড়ি অরণ্যাঞ্চলে। বেশি কিছু কেউ বলবে না এখনও। ‘বাঘের থাবা’ খেতে কেউ চায় না।

সেই টাইগার কে?

অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (ATTF) একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। মূলত ত্রিপুরার হিন্দু আদিবাসী উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের সংগঠন ছড়িয়ে ছিল। দলনেতা রণজিত দেববর্মা পরে আত্মসমর্পণ করে। ত্রিপুরায় বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তৎকালীন মু়খ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের শাসনে টাইগার হয়ে যায় ঘুমন্ত বাঘ। তবে আতঙ্কটা রয়ে গিয়েছে- চুপ যা টাইগার আসতাসে, বাঘের থাবা খাবা!

টাইগারের প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল লিবারেশন!

পার্বত্য ত্রিপুরার উপজাতি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রভাবশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (NLFT)। সংগঠনটি ফের সক্রিয়। সম্প্রতি তাদের সাংগঠনিক কাঠামোর বড়সড় রদবদল করা হয়। একশ শতাংশ খ্রিষ্টানধর্মাবলম্বী নিয়ে পরিচালিত এনএলএফটি বাংলাদেশের জমিতে ফের ঘাঁটিগুলি পরিচালিত করছে। পুরনো নেতা বিশ্বমোহন দেববর্মার নীতি থেকে সরেছে এই সংগঠন।

তাৎপর্যপূর্ণ, সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আবার পারস্পরিক সংঘর্ষ এই নিয়েই ত্রিপুরার পার্বত্য এলাকা ও বাংলাদেশ সংলগ্ন অঞ্চলে এলাকা ভিত্তিক সমান্তরাল সরকার কায়েম করেছিল দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। এটিটিএফ ও এনএলএফটি এই দুই সংগঠনের নিরাপদ ঘাঁটি বাংলাদেশের জমিতে।

প্রতিবেশি দেশে জামাত ইসলামি ও বিএনপি জোট সরকারের আমলে ভারত বিরোধী তৎপরতা বেড়েছিল। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলাদেশ থেকে বৃহত্তর বেআইনি অস্ত্র চালান ষড়যন্ত্র (দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা) বানচাল হয়। অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফা (এখন আলফা-স্বাধীনতা) প্রধান পরেশ বড়ুয়ার জন্য যাচ্ছিল সেই আগ্নেয়াস্ত্র। চাঞ্চল্যকর সেই ঘটনার পর থেকে সতর্কতা অবলম্বন করে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো।

বস্তুতপক্ষে ৮০-৯০ দশক থেকে ২০০০ সাল শুরুর কিছু পর পর্যন্ত ত্রিপুরা ছিল উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিচরণভূমি। ঠিক সেই সময়েই সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে ছিল নিরাপদ ঘাঁটি। ত্রিপুরায় সন্ত্রাসবাদ বা উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদ ঘুমিয়ে পড়েছিল গত বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে। কড়া বাস্তব, বাম সরকার পতনের পর বিজেপি জোট সরকারের আমলে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সক্রিয়।

বাংলাদেশের মাটিতে যে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সক্রিয় তার দাবি করেছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। তিনি এখন বিরোধী নেতা। সম্প্রতি তিনি এনএলএফটির হামলায় দুই বিএসএফ জওয়ানের মৃতুর পর একই দাবি করেন। ত্রিপুরার বিজেপি সরকারও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানায়।

ত্রিপুরায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে সক্রিয় হতে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কি ফের পুরনো অবস্থান ফিরছে? এই প্রশ্ন বারবার উঠছে। রাজ্যটির তিনদিকে একেবারে গা ঘেঁষে থাকা বাংলাদেশ। সিলেটের সাতছড়ি অরণ্যে বারবার অস্ত্র উদ্ধার প্রমাণ করছে মানিকবাবুর দাবি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর এমন দাবিতে ঢাকা ও নয়াদিল্লি নড়ে চড়ে বসেছিল।

<

p style=”text-align: justify;”>বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। সেই নীতি নিয়েই সাতছড়ির মতো সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বারবার অভিযান চলছে।