সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী, চিনের একটি কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে এমন একটি হাইপারসনিক যাত্রীবাহী বিমান (Chinese Hypersonic Plane) উড়িয়েছে যা ২০২৭ সালের মধ্যে ৭০ জন যাত্রীকে মাত্র ৯০ মিনিটে আটলান্টিক পার করে দিতে সক্ষম হবে। এই বিমানের নাম ইউঙ্ক্সিং, এবং চিনের বেইজিং ভিত্তিক সংস্থা লিংকং তিয়ানশিং টেকনোলজি জানিয়েছে যে এই বিমানটি ঘণ্টায় ৩১০০ মাইল গতি তুলতে সক্ষম হবে, যা প্রয়াত ব্রিটিশ-ফরাসি কনকর্ডের চেয়েও দ্বিগুণ দ্রুত।
বিমানের স্রষ্টারা জানিয়েছেন যে ইউঙ্ক্সিং উল্লম্বভাবে টেক-অফ ও ল্যান্ড করতে সক্ষম হবে, যা ১৯৫০-এর দশকের সায়েন্স ফিকশন গল্পের মতো। যদিও চিনের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তবুও চিনের সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি করেছে।
চিনের এই পরিকল্পনা শুনে অনেকেই পূর্ববর্তী ব্রিটিশ ও ফরাসি সুপারসনিক বিমান কনকর্ডের কথা মনে করেন, যা ১৯৭৬ সালে প্রথম আটলান্টিক পার হয়ে দ্রুত যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল। তবে, কনকর্ডের সমস্যাগুলি ছিল অত্যধিক জ্বালানি খরচ, অতিরিক্ত শব্দ, এবং সোনিক বুম, যা অনেক দেশের উপর দিয়ে উড়তে বাধা সৃষ্টি করেছিল। ২০০৩ সালে কনকর্ডের বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়।
ইউঙ্ক্সিং এর হাইপারসনিক বিমান তৈরির প্রচেষ্টাটি কনকর্ডের তুলনায় অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। শুধু উচ্চ গতির যাত্রীবাহী বিমান তৈরি করা নয়, বরং উল্লম্বভাবে উড়ানের ক্ষমতা প্রদান করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বহু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই প্রকল্পটি মূলত বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য করা হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো চিন এখনো আন্তর্জাতিক মানের দুটি যাত্রীবাহী বিমান তৈরি করেছে, যার মধ্যে বড়টি, কোম্যাক সি৯১৯, গত বছর প্রথম উড্ডয়ন করে। তবে এটি শুধুমাত্র চিনের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এখনো আন্তর্জাতিক বাজারে স্বীকৃতি পায়নি। চিনের স্থানীয়ভাবে তৈরি বিমানে ভ্রমণ করতে এখনও অনেক চিনা নাগরিকই নিরাপত্তার দিক থেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। যদিও চিনের এভিয়েশন খাতে সামগ্রিক নিরাপত্তার রেকর্ড ভাল।
চিনের বিমান নির্মাণ খাতে দুর্বলতা সম্পর্কে রয়্যাল অ্যারোনটিক্যাল সোসাইটির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চিন যদি বোয়িং বা এয়ারবাসের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চায় তবে তাদের এখনো অনেক দূর যেতে হবে। প্রতিবেদনে চিনের বিমান গুলিকে কম দক্ষ ডিজাইন এবং দীর্ঘ সময়ে বাজারে আসার কারণে তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে খুব একটা সুযোগ নেই বলে বলা হয়েছে।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ব্রিটেনের ভার্জিন গ্যালাক্টিক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুম এভারচার নামক সংস্থাগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বিমান তৈরিতে কাজ করছে, তবে তাদেরও অনেক বছরের প্রচেষ্টা এবং গবেষণার প্রয়োজন পড়েছে। এই দুটি সংস্থা এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করতে পারেনি এবং এটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
চিনের এই উদ্যোগটি বিশ্বে দ্রুতগতির বিমান প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে চিনের এই বিমান প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আরও সময় এবং উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হতে পারে।