ভবিষ্যতে বৈশ্বিক বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে এক নতুন প্রযুক্তির হাতছানি

বর্তমানে বিশ্বের কিছু উন্নত এবং প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশ তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের একেবারে ক্ষুদ্র আকারের মোবাইল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ডিজাইন ও গবেষণায় বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে।

For future new technology read this

বর্তমানে বিশ্বের কিছু উন্নত এবং প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশ তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের একেবারে ক্ষুদ্র আকারের মোবাইল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ডিজাইন ও গবেষণায় বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে। তবে একেবারেই নতুন প্রজন্মের এই মাইক্রো টেকনোলজির নিউক্লিয়ার রিএক্টর ডিজাইন ও তৈরির প্রতিযোগিতায় কিন্তু সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে সেই আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

যদিও জাপানের মিতসুবিশি হেভী ইন্ডাস্ট্রিজ কিন্তু অনেক আগে থেকে ভ্রাম্যমাণ নিউক্লিয়ার পাওয়ার জেনারেশন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করে যাচ্ছে। আর খুব সম্ভবত আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তার একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি মোবাইল ন্যানো টেকনোলজির নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট বিশ্বের সামনে উন্মোচন করার বিষয়ে প্রবলভাবে আশাবাদী।

একেবারে নতুন কনসেপ্টের ভ্রাম্যমান ও ক্ষুদ্র আকারের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের জটিল প্রযুক্তির সিস্টেম ডিজাইন ও গবেষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ও তার নিয়ন্ত্রণে থাকা সামরিক গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু প্রাথমিকভাবে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। আর এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে মার্কিন প্রশাসনের তরফে বিলিয়ন ডলারের ফান্ড বরাদ্দ বা বিনিয়োগে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। যার সুফল আগামী ২০৩০-৩৫ সালের মধ্যেই পেতে শুরু করবে আমেরিকা।

এই প্রজেক্ট নিয়ে গবেষণা করা মার্কিন নিউক্লিয়ার প্রযুক্তিবিদদের মতে, নতুন প্রযুক্তির ভ্রাম্যমান ন্যানো নিউক্লিয়ার রিএক্টর প্রয়োজন মাফিক যে কোন স্থানে এবং খুব সহজেই জাহাজ, বিমান, হেভী লিফটিং হেলিকপ্টার কিংবা ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। পাশাপাশি এর ব্যবহার হবে অনেকটাই সহজ ও নিরাপদ। বিশেষ করে এর মাধ্যমে যাতে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং ভবিষ্যতে যুদ্ধকালীন যে কোন পরিস্থিতিতে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা এবং সরকারি দপ্তরে খুব সহজেই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় মার্কিন প্রশাসন। আর এ লক্ষ্য অর্জনে এই ধরণের উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষুদ্র আকারের মোবাইল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ডিজাইন করতে কাজ করছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

নতুন এ প্রজেক্টের ন্যানো নিউক্লিয়ার রিএক্টর ডিজাইন করার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ‘পেন্টাগন’ কিন্তু ইতোমধ্যেই দেশটির তিনটি প্রযুক্তি কোম্পানির সাথে চুক্তি সম্পন্ন করেছে। চুক্তি মোতাবেক এই তিনটি কোম্পানি চলতি ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় পাবে এটি ডিজাইন করার। আর এই তিন কোম্পানির ডিজাইন থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ‘পেন্টাগন’ বেছে নিবে সর্বোচ্চ মানের ক্ষুদ্র আকারের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট বা রিএক্টর তৈরির চূড়ান্ত নকশা। এই প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ‘পিলি’। এটি নিয়ে ‘পেন্টাগন’ গত ২০১৯ সাল থেকে কাজ শুরু করে এবং এটি বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে মার্কিন প্রশাসন ইতোমধ্যেই প্রায় ৪০-৫০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে অনেক আগেই।

তাছাড়া পেন্টাগনের স্ট্যাটিজিক ক্যাপাবিলিটিজ অফিস (এসসিও) ‘পিলি’ প্রকল্পটি গভীরভাবে নজরদারি করছে। এই জাতীয় ন্যানো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট আকারে ছোট এবং হালকা হওয়ায় এটিকে যে কোন স্থানে দ্রুত পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। প্রয়োজনে আবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া যাবে। তাছাড়া একেবারে স্বল্প খরচে ২ মেগাওয়াট থেকে সর্বোচ্চ ২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং এটি ব্যবহারে সর্বোচ্চভাবে নিরাপদ হবে এমনটি নিশ্চিত করে ডিজাইন করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে সামরিক উদ্দেশ্যে এটিকে তৈরির পরিকল্পনা করা হলেও কিন্তু এই জাতীয় টেকনোলজি ভবিষ্যতে সারাবিশ্বে বানিজ্যিক ব্যবহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম হয়ে উঠতে পারে।

সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম কোন দেশ হিসেবে সভিয়েত ইউনিয়ন সত্তরের দশকে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ভ্রাম্যমান বা মোবাইল নিউক্লিয়ার রিএক্টর বানালেও সেগুলো ছিল যথেষ্ঠ ভারি এবং পুরোনো প্রযুক্তির। তাছাড়া এগুলো পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ছিল খুবই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তারা খুব সম্ভবত এই জাতীয় মোবাইল নিউক্লিয়ার রিএক্টর আর্কটিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে তৈরি করেছিল। তবে ১৯৯১ সালে সভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে1 পরিসেবার মতো হয়ত আগামী ২০৩৫-৪০ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতে উদ্ভাবিত মাইক্রো মোবাইল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট আরও নিরাপদ, কম খরচ এবং ছোট আকার হয়ে এসে তা সারা বিশ্বের বিভিন্ন শহর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বানিজ্যিক কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ের বাসা বাড়িতে ব্যবহার শুরু হয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে হয়ত এমনো হতে পারে যে, অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং বড় আকারের কয়লা, গ্যাস এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের ব্যবহার হ্রাস করে দিয়ে কিংবা তার পাশাপাশি বেকআপ পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম হিসেবে একেবারেই স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এলাকা ভিত্তিক ক্ষুদ্র আকারের মাইক্রো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের ব্যবহার শুরু হয়ে গেলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।