২০২৫ সালে সরকারি কর্মীদের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে একটি হল অষ্টম বেতন কমিশন (৮ম সিপিসি)। কেন্দ্র সরকারের পাশাপাশি রাজ্য সরকারি কর্মীরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এই নতুন কমিশনের সুপারিশের জন্য। প্রশ্ন একটাই—৮ম বেতন কমিশন কার্যকর হলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন কতটা বাড়বে?
সম্ভাব্য বেতন বৃদ্ধি
আর্থিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অষ্টম বেতন কমিশনের মাধ্যমে বেতন কাঠামোতে গড়ে ২২% থেকে ২৮% পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে পারে। এটি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য উভয় কর্মীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদি অনুমান সঠিক হয়, তাহলে বর্তমানে যে কর্মী মাসে ৪০,০০০ টাকা বেতন পান, তার বেতন বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৪৮,৮০০ থেকে ৫১,২০০ টাকায় পৌঁছতে পারে।
৭ম বেতন কমিশনে যেমনভাবে বেতন বৃদ্ধি হয়েছিল, তেমনই এবারও নতুন কাঠামোয় ডিএ (ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স), এইচআরএ (হাউস রেন্ট অ্যালাওয়েন্স) এবং অন্যান্য ভাতা সংযোজনের মাধ্যমে চূড়ান্ত বেতন নির্ধারণ হবে।
মুদ্রাস্ফীতি ও বাজারদরের প্রভাব
৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ নির্ভর করবে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। বিশেষত, মুদ্রাস্ফীতি ও বাজারদর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গত কয়েক বছরে দাম বৃদ্ধির ফলে মধ্যবিত্ত কর্মীদের জীবনে চাপ বেড়েছে। তাই নতুন কমিশন এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্র বনাম রাজ্য কর্মীদের বেতন কাঠামো
যদিও কেন্দ্রীয় কর্মীদের জন্য সরাসরি কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা হবে, রাজ্যগুলিকে নিজেদের আর্থিক পরিস্থিতি অনুযায়ী তা কার্যকর করতে হবে।
ধনী রাজ্য যেমন মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু দ্রুত নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করতে পারে।
তুলনামূলক দুর্বল অর্থনীতির রাজ্যগুলিকে (যেমন বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ) হয়তো কিছুটা সময় নিতে হতে পারে।
তবে ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, কেন্দ্রের সুপারিশ অনুসরণ করতে রাজ্য সরকারগুলিও দেরি করে না, কারণ কর্মী সংগঠনের চাপ অনেক বেশি থাকে।
কর্মীদের প্রত্যাশা
রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, নতুন কমিশনের ফলে শুধু বেতনই নয়, পেনশন কাঠামো ও গ্র্যাচুইটি সীমাতেও পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য পেনশনের হার বাড়ানো হলে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় হবে।
সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই কমিশনের প্রাথমিক খসড়া নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্তভাবে ঘোষণা হতে পারে। এর পর বাজেট অধিবেশনে তা কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, বেতন বৃদ্ধি একদিকে কর্মীদের হাতে খরচের ক্ষমতা বাড়াবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই ব্যয় আবার কর আদায় ও বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেও সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞ মত
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, নতুন কমিশন বাস্তবায়িত হলে প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মী এবং কয়েক কোটি রাজ্য সরকারি কর্মী সরাসরি উপকৃত হবেন। একই সঙ্গে ভোক্তা চাহিদা ও খুচরো বাজারও বড়সড় উত্থান দেখতে পাবে।
অষ্টম বেতন কমিশন শুধু একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং কোটি কোটি পরিবারে নতুন আশার সঞ্চার। ২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে এই কমিশন কার্যকর হলে রাজ্য সরকারি কর্মীরা ঠিক কতটা বেতন বৃদ্ধি পাবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে অনুমান করা হচ্ছে, গড়ে ২২%–২৮% বেতন বৃদ্ধি কর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।