কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটি জরিপে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। জরিপ অনুযায়ী, ৮৩ শতাংশ সরকারি কর্মচারী ২০২৫ সালের মধ্যে অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এই জরিপটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের বেতন, ভাতা এবং পেনশন সংশোধনের প্রত্যাশার ইঙ্গিত দেয়। অষ্টম বেতন কমিশনের প্রত্যাশিত বাস্তবায়ন ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে।
অষ্টম বেতন কমিশন: কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
বেতন কমিশন প্রতি দশ বছর অন্তর গঠিত হয় এবং এটি সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো, ভাতা এবং পেনশন পর্যালোচনা করে। সপ্তম বেতন কমিশন ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছিল এবং এর মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। সেই প্রেক্ষিতে অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৩ শতাংশ কর্মচারী মনে করেন যে, মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে তাঁদের বেতন ও ভাতা বাড়ানো জরুরি।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে উপস্থাপিত হতে যাওয়া কেন্দ্রীয় বাজেটে অষ্টম বেতন কমিশন সংক্রান্ত ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা অষ্টম বেতন কমিশনের অনুমোদন দিয়েছে। তবে, কমিশনের গঠন এবং এর কার্যক্রমের জন্য চেয়ারপার্সন এবং সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনও চলছে।
বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, অষ্টম বেতন কমিশন বেতন ও পেনশনে ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করতে পারে। বর্তমানে সপ্তম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭, যা ন্যূনতম বেতনকে ৭,০০০ টাকা থেকে ১৮,০০০ টাকায় উন্নীত করেছিল। অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ থেকে ৩.৬৮-এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে ন্যূনতম মৌলিক বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫১,৪৮০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের জন্য বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিম্নরূপ:
• লেভেল ১: ন্যূনতম বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে ৫১,৪৮০ টাকায় উন্নীত হতে পারে।
• লেভেল ৫: সিনিয়র ক্লার্ক এবং টেকনিক্যাল স্টাফদের বেতন ২৯,২০০ টাকা থেকে ৮৩,৫১২ টাকায় বাড়তে পারে।
• লেভেল ৬: ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টরদের বেতন ৩৫,৪০০ টাকা থেকে ১,০১,২৪৪ টাকায় বৃদ্ধি পেতে পারে।
• লেভেল ১০: গ্রুপ এ অফিসারদের বেতন ৫৬,১০০ টাকা থেকে ১,৬০,৪৪৬ টাকায় বাড়তে পারে।
এছাড়া, মহার্ঘ ভাতা (DA), গৃহভাড়া ভাতা (HRA), এবং ভ্রমণ ভাতা (TA) সংশোধনের মাধ্যমে কর্মচারীদের মোট বেতন আরও বাড়বে।
কর্মচারীদের প্রত্যাশা
জরিপে অংশ নেওয়া কর্মচারীরা জানিয়েছেন, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁদের বেতন বাড়ানো জরুরি। অনেকে মনে করেন, সরকারি চাকরির সঙ্গে যুক্ত সুবিধাগুলি যেমন পেনশন, চিকিৎসা সুবিধা, এবং এলটিসি (Leave Travel Concession) তাঁদের জন্য বড় আকর্ষণ। তবে, বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি এই সুবিধাগুলিরও আধুনিকীকরণ প্রয়োজন।
ট্রেড ইউনিয়নগুলি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ৩.৬৮-এ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। তবে, সরকার এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারের বাজেটের উপর নির্ভর করবে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের চূড়ান্ত হার।
সরকারের পদক্ষেপ
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, অষ্টম বেতন কমিশনের প্রতিবেদন ২০২৫ সালের শেষের দিকে জমা দেওয়া হতে পারে। এরপর মন্ত্রিসভার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হবে। তবে, কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে এটি ২০২৭ সাল পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে।
কর্মচারী ইউনিয়নগুলি এই কমিশনের গঠন ত্বরান্বিত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। তারা আশা করছে, ২০২৫ সালের বাজেটে এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আসবে।
অষ্টম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি বড় সুযোগ। এটি তাঁদের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়াতে পারে। তবে, সরকারের উপর চাপ রয়েছে যে, এই কমিশন সময়মতো গঠিত হয় এবং কর্মচারীদের প্রত্যাশা পূরণ করে। জরিপের ৮৩ শতাংশ কর্মচারীর দাবি এই প্রত্যাশারই প্রতিফলন। এখন দেখার বিষয়, সরকার কীভাবে এই দাবি পূরণ করে এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে বেতন বৃদ্ধির ভারসাম্য বজায় রাখে।