পার্সোনাল লোন নিচ্ছেন? আগে জেনে নিন প্রি-অ্যাপ্রুভড ও রেগুলার লোনের মধ্যে পার্থক্য

বর্তমান আর্থিক চাহিদার যুগে ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan) একটি সহজলভ্য এবং দ্রুত অর্থের উৎস হয়ে উঠেছে। হঠাৎ চিকিৎসা খরচ, উচ্চশিক্ষা, বিবাহ বা ভ্রমণের মতো নানা…

Personal Loan Without CIBIL

বর্তমান আর্থিক চাহিদার যুগে ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan) একটি সহজলভ্য এবং দ্রুত অর্থের উৎস হয়ে উঠেছে। হঠাৎ চিকিৎসা খরচ, উচ্চশিক্ষা, বিবাহ বা ভ্রমণের মতো নানা কারণে আমাদের অনেক সময় অতিরিক্ত অর্থের দরকার পড়ে। ঠিক তখনই পার্সোনাল লোন একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। তবে সব পার্সোনাল লোন একরকম নয়। বর্তমানে ব্যাংক ও এনবিএফসি (NBFC – Non-Banking Financial Company)-গুলি মূলত দু’ধরনের পার্সোনাল লোন অফার করে—প্রি-অ্যাপ্রুভড পার্সোনাল লোন এবং রেগুলার পার্সোনাল লোন। এই দুটি ঋণের ধরনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে, যা জানা থাকলে আপনি আপনার আর্থিক চাহিদা ও পরিস্থিতির ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

প্রি-অ্যাপ্রুভড পার্সোনাল লোন কী?
প্রি-অ্যাপ্রুভড পার্সোনাল লোন মূলত সেইসব গ্রাহকদের অফার করা হয় যাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্কযুক্ত এবং যাঁদের ক্রেডিট স্কোর ভালো, আয় স্থির এবং ঋণ পরিশোধের রেকর্ড শক্তিশালী। এই ধরনের ঋণ অফার সাধারণত ব্যাংক নিজে থেকেই তার গ্রাহকদের কাছে পাঠায়। যেহেতু ব্যাংকের কাছে ইতিমধ্যেই গ্রাহকের আর্থিক তথ্য থাকে, তাই এই ঋণের অ্যাপ্রুভাল খুব দ্রুত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে টাকা অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যায়।

   

প্রি-অ্যাপ্রুভড লোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো খুব কম কাগজপত্র লাগে। ব্যাংক ইতিমধ্যেই আপনার KYC, ইনকাম এবং ব্যাঙ্কিং ইতিহাস সম্পর্কে অবগত, ফলে নতুন করে সব ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে মনে রাখা দরকার, এই অফারগুলি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বৈধ এবং লোন নেওয়ার সময় আপনাকে ব্যাংকের নির্ধারিত যোগ্যতা পূরণ করতেই হবে।

রেগুলার পার্সোনাল লোন কী?
অন্যদিকে, রেগুলার পার্সোনাল লোন পাওয়ার জন্য গ্রাহককে পুরোপুরি একটি নতুন লোন অ্যাপ্লিকেশন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এটি শুধু বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য নয়, নতুন গ্রাহকদের জন্যও উন্মুক্ত। তবে এতে পুরো ক্রেডিট অ্যাসেসমেন্ট করা হয়, অর্থাৎ আবেদনকারীর ইনকাম প্রুফ, চাকরির তথ্য, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, KYC ইত্যাদি সমস্ত কিছু যাচাই করে তারপর লোন অ্যাপ্রুভ করা হয়।
এই প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ—সাধারণত ২ থেকে ৭ কর্মদিবস সময় লাগতে পারে। তবে এর একটি বড় সুবিধা হলো আপনি বিভিন্ন ব্যাংক বা এনবিএফসি-র থেকে লোন অফার তুলনা করে দেখতে পারেন এবং যেটি আপনার পক্ষে বেশি লাভজনক, সেটি বেছে নিতে পারেন। যারা প্রি-অ্যাপ্রুভড অফারের যোগ্য নন অথবা যাঁরা সুদের হার ও শর্ত নিয়ে দর-কষাকষি করতে চান, তাঁদের জন্য রেগুলার পার্সোনাল লোনই ভালো বিকল্প।

মূল পার্থক্যগুলি এক নজরে

Advertisements
  • বিষয় প্রি-অ্যাপ্রুভড পার্সোনাল লোন রেগুলার পার্সোনাল লোন
  • যোগ্যতা শুধুমাত্র নির্বাচিত গ্রাহক, যাঁদের ক্রেডিট স্কোর ভালো সকল আবেদনকারী, যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে
  • প্রসেসিং টাইম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বা তাৎক্ষণিক ২–৭ কর্মদিবস
  • ডকুমেন্টেশন প্রায় নেই, কারণ ব্যাঙ্কের কাছে তথ্য থাকে KYC, ইনকাম প্রুফ, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন
  • সুদের হার ১০.৪৯% থেকে ১৪% (ক্রেডিট প্রোফাইল অনুযায়ী) ৯.৫০% থেকে ৪৪% পর্যন্ত (ব্যাংক ও স্কোর অনুযায়ী)

কোন লোনটি আপনার জন্য সঠিক?
আপনার চাহিদা এবং আর্থিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের পার্সোনাল লোন নেবেন, তা ঠিক করতে হবে। যদি আপনার তাড়াতাড়ি টাকার প্রয়োজন হয় এবং আপনার ব্যাংকের কাছ থেকে একটি প্রি-অ্যাপ্রুভড অফার থাকে, তাহলে এটি গ্রহণ করলে দ্রুত এবং সহজে টাকা পেয়ে যাবেন।

তবে যদি আপনি সুদের হার, টার্মস এবং অন্যান্য শর্তাবলী তুলনা করে দেখতে চান বা আপনার কাছে প্রি-অ্যাপ্রুভড অফার না থাকে, তাহলে রেগুলার পার্সোনাল লোনই আপনার জন্য উপযুক্ত হবে। এতে আপনি বাজারের বিভিন্ন অফার দেখে বেছে নিতে পারবেন কোনটি আপনার জন্য বেশি সুবিধাজনক।

বর্তমানে ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। তবে প্রি-অ্যাপ্রুভড এবং রেগুলার পার্সোনাল লোন—এই দুই ধরনের মধ্যে পার্থক্য বোঝা খুবই জরুরি। কারণ সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে আপনি উচ্চ সুদের হার বা অনাবশ্যক ঝামেলায় পড়তে পারেন। তাই ঋণ নেওয়ার আগে নিজের আর্থিক অবস্থা, প্রয়োজন এবং ফেরতের ক্ষমতা মূল্যায়ন করে তবেই লোন বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন, সচেতন সিদ্ধান্তই সেরা সিদ্ধান্ত।