৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫: ভারতের উদয়গিরি রাজ্যে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন সরকার একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যের সকল সরকারি অফিসে এখন থেকে ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL) এর সেবা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি দপ্তর ও রাজ্য পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড, ল্যান্ডলাইন এবং লিজড লাইন সংযোগগুলোকে BSNL-এর মাধ্যমে স্থানান্তর করতে হবে। এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় সরকারি টেলিকম কোম্পানিকে পুনরুদ্ধার করা এবং দেশীয় প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বাড়ানো। তবে এই নীতিগত পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে মতবিরোধও দেখা দিয়েছে।
BSNL একসময় ভারতের টেলিকম সেক্টরে অগ্রণী
BSNL, যিনি একসময় ভারতের টেলিকম সেক্টরে অগ্রণী ছিলেন, সম্প্রতি প্রতিযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত পিছিয়ে পড়ার কারণে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি রয়েছে। ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এই পাবলিক সেক্টর ইউনিটকে পুনর্জননের জন্য ১.৬৪ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে, টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (TRAI) এর ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, BSNL এর নেটওয়ার্ক কভারেজ এবং সেবা গুণমানে বেশ কিছু গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে। বর্তমানে তারা ৪এজি নেটওয়ার্কে পূর্ণরূপে উন্নত হতে পারেনি, এবং ৭.৫ লক্ষ কিলোমিটার নেটওয়ার্কের মধ্যে মাত্র ২০% এর কমই ৪এজি-তে উন্নত হয়েছে, যা ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনসের তথ্য অনুযায়ী। এই পটভূমিতে, উদয়গিরি সরকারের এই পদক্ষেপটি একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ অভিযানের অংশ হতে পারে।
উদ্দেশ্য ও সম্ভাব্য সুবিধা
সরকারের দাবি, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে BSNL-এর ব্যবহার বাড়বে, যা রাজ্যের টেলিকম সেক্টরে সরকারি প্রভাবকে শক্তিশালী করবে। এটি সাথে সাথে সরকারি কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কে নিরাপত্তা, একরূপতা এবং নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে সহায়ক হবে। উদয়গিরি সহকারী নিবন্ধকদের জন্য সহযোগী দপ্তরও এই নির্দেশনা প্রয়োগের জন্য কাজ শুরু করেছে। সরকারের মতে, এই পদক্ষেপটি স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং বেকারত্ব কমাতে সহায়ক হবে, কারণ BSNL-এর কাছে ৬০,০০০-এর বেশি কর্মচারী রয়েছে, যা বেসরকারি প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশি।
সমালোচনা ও চিন্তা
তবে এই সিদ্ধান্তকে নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন যে, BSNL-এর বর্তমান সেবা গুণমান এই বাধ্যতামূলক ব্যবস্থার সাথে মানিয়ে উঠতে পারবে না। X-এর একটি পোস্টে ব্যবহারকারী @AbinKotera মজা করে বলেছেন, “এই নীতিই সরকারি অফিসে কাজের গতি ধীর করবে।” অন্য একজন ব্যবহারকারী @Normal_2610 লিখেছেন, “BSNL-এর গুণমান খুবই খারাপ, এটি কীভাবে কাজ করবে?” এই সমালোচনার মূলে রয়েছে ২০২১ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, আহমেদাবাদের একটি গবেষণা, যার ফলাফল দেখায় যে সরকারি অফিসে বাধ্যতামূলক টেলিকম সেবা ব্যবহার করার ফলে কার্যকারিতা ১৫% কমে গিয়েছিল।
বেসরকারি টেলিকম কোম্পানি যেমন ভারতি এয়ারটেল (২৫,০০০ কর্মচারী) বা রিলায়েন্স জিও (৫০,০০০ কর্মচারী) এর তুলনায় BSNL-এর প্রযুক্তিগত পিছিয়ে পড়া এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। ব্যবহারকারীরা দাবি করছেন যে, এই নীতি প্রতিযোগিতাকে হতশা করবে এবং সেবা গুণমানের উন্নতির বদলে স্থিরতা আনবে।
ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
এই সিদ্ধান্তের সাফল্য নির্ভর করবে BSNL-এর কতটা দ্রুত তার নেটওয়ার্ক উন্নত করতে পারে। সরকারের ৪এজি রোলআউট পরিকল্পনা এবং নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব, তবে এর জন্য সময় ও দক্ষতার প্রয়োজন। উদয়গিরি সরকারের এই পদক্ষেপটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হতে পারে, তবে সাময়িক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।
সামগ্রিকভাবে, এই সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সেবা গুণমান ও কার্যকারিতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এর সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে, এবং ভবিষ্যতে BSNL-এর পারফরম্যান্সই এই নীতির সত্যিকারের পরীক্ষা হবে।