মাইসুরু আরবান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (MUDA)–র বহুল আলোচিত দুর্নীতি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সংস্থা ৩৪টি স্থাবর সম্পত্তি সংযুক্ত করেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ₹৪০.০৮ কোটি। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন (PMLA), ২০০২–এর আওতায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
লোকায়ুক্ত পুলিশের FIR-এর ভিত্তিতে তদন্ত শুরু:
এই তদন্তের সূত্রপাত হয় মাইসোর লোকায়ুক্ত পুলিশের দায়ের করা একটি FIR থেকে। অভিযোগ ছিল, MUDA সাইট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে একাধিক বেআইনি বরাদ্দ করা হয়েছে। এরপর ED বেঙ্গালুরু জোনাল অফিস তদন্ত শুরু করে এবং ৪ অক্টোবর সম্পত্তি সংযুক্তির নির্দেশ জারি করে।
প্রাক্তন কমিশনারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ: MUDA Corruption Case ED
ED-এর তদন্তে উঠে এসেছে, MUDA–র প্রাক্তন কমিশনার জি.টি. দিনেশ কুমার বেআইনি উপায়ে সাইট বরাদ্দ ও মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সংস্থার দাবি, তিনি অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নামে বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেন। ইতিমধ্যেই তিনি মানি লন্ডারিং–এর অভিযোগে ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং বর্তমানে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন।
তল্লাশিতে নথিপত্র ও অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ উদ্ধার:
ED ২০২৪ সালের ১৮ ও ২৮ অক্টোবর একাধিক স্থানে তল্লাশি চালায়। এই তল্লাশিতে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও নগদ লেনদেনের প্রমাণ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে দেখা গেছে, ১৪ মার্চ ২০২৩–এর সরকারি চিঠি, ২৭ অক্টোবর ২০২৩–এর সরকারি আদেশ এবং ২০০৯ সালের (২০১৫ সালে সংশোধিত) কর্ণাটক আরবান ডেভেলপমেন্ট অথরিটিজ রুলস ও ১৯৯১ সালের প্রণোদনা স্কিম রুলসের একাধিক ধারাই প্রকাশ্যে লঙ্ঘন করা হয়েছে।
MUDA কর্মকর্তা ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ ফাঁস:
ED-এর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, MUDA–র কিছু কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের মধ্যে গভীর যোগসাজশের তথ্যও সামনে এসেছে। নগদ টাকায় সাইট বরাদ্দ এবং লেআউট অনুমোদনের বিনিময়ে ঘুষ লেনদেনের ঘটনাও উঠে এসেছে তদন্তে।
আগেও ২৫২টি বেআইনি সাইট সংযুক্ত করেছিল ED:
এই মামলায় এর আগে ED প্রাথমিকভাবে ২৫২টি অবৈধ MUDA সাইট সংযুক্ত করেছিল। বর্তমান পদক্ষেপে আরও ৩৪টি স্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই সমস্ত সম্পত্তির মোট বাজারমূল্য ৪০.০৮ কোটি টাকা।
৪৪০ কোটির অবৈধ সম্পত্তি সংযুক্ত, তদন্ত অব্যাহত:
ED-এর হিসাব অনুযায়ী, এই মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ₹৪৪০ কোটির “প্রসিডস অফ ক্রাইম” বা অবৈধ সম্পত্তি সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও অবৈধ সম্পত্তি ও লেনদেন চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য:
MUDA–র মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থার সাইট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় এই ধরনের দুর্নীতি সামনে আসায় কর্ণাটক জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়েও এই তদন্ত নিয়ে আলোড়ন দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলার রায় ও তদন্ত ভবিষ্যতে কর্ণাটকের নগর উন্নয়ন খাতে দুর্নীতি রোধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।