থমকে ২ লক্ষ কোটির প্রকল্প! বিদেশি বিনিয়োগের অগ্রগতি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

নয়াদিল্লি, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ভারতের অর্থনীতিতে এক চাঞ্চল্যকর ধাক্কা নেমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে বিদেশি সংস্থাগুলি একসঙ্গে প্রায় ₹২-লাখ কোটি টাকার প্রকল্প (Foreign Investment)…

India Economy Faces Setback as ₹2 Lakh Crore Foreign Investment Projects Stalled in Q1 2025

নয়াদিল্লি, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ভারতের অর্থনীতিতে এক চাঞ্চল্যকর ধাক্কা নেমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে বিদেশি সংস্থাগুলি একসঙ্গে প্রায় ₹২-লাখ কোটি টাকার প্রকল্প (Foreign Investment) স্থগিত বা বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল তুলনামূলকভাবে নগণ্য। ফলে এ বছরের বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,২০০ শতাংশ—যা বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতি বিদেশি আস্থার বড় ধরণের প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।

শুল্ক নীতির অনিশ্চয়তাই বড় কারণ
অর্থনীতিবিদদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগে হঠাৎ এই ধস নামার প্রধান কারণ শুল্ক নীতি ও কর কাঠামোর অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্ব ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ভারতের উপরও চাপ ফেলেছে। বিদেশি সংস্থাগুলি মনে করছে, এই অস্থির পরিস্থিতিতে তাদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে।

   

Also Read | যুদ্ধাস্ত্র রফতানি থেকে মোদী সরকারের রাজকোষে কোটি কোটি টাকা

বিশেষত উৎপাদন খাত, অবকাঠামো নির্মাণ, শক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি—এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে যে প্রকল্পগুলো চলছিল বা পরিকল্পনায় ছিল, সেগুলির অনেকগুলিই থমকে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন কর ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক চাপ মিলিয়েই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব

প্রকল্প স্থগিত হওয়ার ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে একাধিক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে—

Advertisements
  • কর্মসংস্থানে ধাক্কা: হাজার হাজার নতুন চাকরির সুযোগ আপাতত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
  • GDP প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব: অবকাঠামো ও উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ না হলে অর্থনীতির সামগ্রিক বৃদ্ধির গতি মন্থর হতে বাধ্য।
  • বিনিয়োগকারীর আস্থা কমে যাওয়া: বিদেশি সংস্থাগুলি যদি ধারাবাহিকভাবে সরে যেতে থাকে, তবে ভারত দীর্ঘমেয়াদে “নিরাপদ বিনিয়োগ গন্তব্য” হিসেবে ভাবমূর্তি হারাতে পারে।
  • দেশীয় শিল্পের চাপ: বিদেশি মূলধন আসা বন্ধ হলে দেশীয় শিল্পও সম্প্রসারণে পিছিয়ে পড়বে।

সরকারের নীরবতা ও সম্ভাব্য পদক্ষেপ
এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার এই ঘটনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারে—

1. শুল্ক নীতি পুনর্বিবেচনা: বিদেশি সংস্থার জন্য আমদানি শুল্ক ও কর কাঠামোতে স্থিতিশীলতা আনা জরুরি।
2. সহজতর ব্যবসার পরিবেশ: নীতিগত জটিলতা কমিয়ে দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
3. স্বচ্ছতা বৃদ্ধি: বিনিয়োগ সম্পর্কিত নিয়ম ও প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও পূর্বানুমানযোগ্য করতে হবে।
4. বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সরাসরি সংলাপ: বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করা যেতে পারে।

ভবিষ্যৎ করণীয়: বিশ্লেষকদের পরামর্শ
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ পরিস্থিতি সামলাতে হলে ভারতকে জরুরি ভিত্তিতে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে—

  • দ্রুত নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
  • বিদেশি সংস্থাগুলির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলিতে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা।
  • আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে লাভজনক ও নিরাপদ বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা।
  • আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা, যাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পায়।

সারসংক্ষেপ
বিষয় তথ্য
স্থগিত প্রজেক্ট মূল্যমান ₹২-লাখ কোটি (Q1 অর্থবছর ২০২৫-২৬)
বৃদ্ধির হার প্রায় ১,২০০ % (গত বছরের Q1 তুলনায়)
মূল কারণ শুল্ক নীতি ও কর কাঠামোর অনিশ্চয়তা
সম্ভাব্য প্রভাব কর্মসংস্থান হ্রাস, বিনিয়োগ কমে যাওয়া, GDP প্রবৃদ্ধিতে ধাক্কা

বিদেশি বিনিয়োগ ভারতের উন্নয়ন কৌশলের অন্যতম স্তম্ভ। কিন্তু ₹২-লাখ কোটি টাকার প্রকল্প স্থগিত হওয়া শুধু বিনিয়োগ নয়, ভারতের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও এক অশনি সংকেত। যদি দ্রুত নীতিগত স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা আনা না যায়, তবে ভবিষ্যতে আরও বড় ধাক্কার মুখে পড়তে পারে ভারতীয় অর্থনীতি।