চলতি বর্ষে পেনশনে বড় বদল আনতে পারে অষ্টম বেতন কমিশন

কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘোষণা…

8th Pay Commission Could Reshape Government Pensions

কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘোষণা করেছেন যে, অষ্টম বেতন কমিশন ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে, যা প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের জন্য বেতন, ভাতা এবং পেনশনের কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। এই কমিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পেনশন ও বেতনের কাঠামোকে আধুনিক ও ন্যায্য করা। এই প্রতিবেদনে আমরা বর্তমান এবং প্রক্ষেপিত পেনশনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং এর প্রভাব বিশেষ করে প্রবীণ পেনশনভোগীদের জন্য আলোচনা করব।

বর্তমান পেনশন কাঠামো
বর্তমানে, সপ্তম বেতন কমিশনের (৭ম সিপিসি) সুপারিশের ভিত্তিতে পেনশন প্রদান করা হয়, যা ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছিল। সপ্তম বেতন কমিশন একটি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর (মাল্টিপ্লায়ার) ২.৫৭ নির্ধারণ করেছিল, যার ফলে ন্যূনতম পেনশন ৩,৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৯,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ পেনশন ৪৫,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ১,১৫,৬৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়া, মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব মোকাবেলায় পেনশনভোগীরা মহার্ঘ ভাতা (ডিয়ারনেস রিলিফ বা ডিআর) পান, যা বর্তমানে মূল পেনশনের ৫৩%। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো মূল পেনশন ৩০,০০০ টাকা হয়, তবে ৫৩% ডিআর যোগ হলে মোট পেনশন হয় ৪৫,৯০০ টাকা।

   

অষ্টম বেতন কমিশনের প্রক্ষেপিত পেনশন
অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.২৮ থেকে ২.৮৬ এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে পেনশনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি প্রত্যাশিত। নিম্নলিখিত তুলনা বর্তমান এবং প্রক্ষেপিত পেনশনের ধারণা দেয়:

পেনশনের ধরন

বর্তমান পেনশন (৭ম সিপিসি)

প্রক্ষেপিত পেনশন (৮ম সিপিসি, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬)

বৃদ্ধির হার

ন্যূনতম পেনশন

৯,০০০ টাকা

২৫,৭৪০ টাকা

১৮৬%

গড় পেনশন (উদাহরণ)

৩০,০০০ টাকা

৭৫,০০০ টাকা

Advertisements

১৫০%

সর্বোচ্চ পেনশন

১,১৫,৬৫০ টাকা

৩,৫৭,৫০০ টাকা

২০৯%

এই হিসাব অনুসারে, যদি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ নির্ধারিত হয়, তবে ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫,৭৪০ টাকা হবে, যা ১৮৬% বৃদ্ধি। একইভাবে, গড় পেনশন ৩০,০০০ টাকা থেকে ৭৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ পেনশন ১,১৫,৬৫০ টাকা থেকে ৩,৫৭,৫০০ টাকায় উন্নীত হতে পারে। তবে, নতুন পেনশন কাঠামোর শুরুতে মহার্ঘ ভাতা (ডিআর) শূন্যে রিসেট করা হবে, যা পরবর্তীতে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে বাড়বে।

ইউনিফাইড পেনশন স্কিম (ইউপিএস)
২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ইউনিফাইড পেনশন স্কিম (ইউপিএস) চালু করবে, যা পেনশনভোগীদের জন্য নিশ্চিত পেনশন প্রদান করবে। এই স্কিমের অধীনে, ২৫ বছর বা তার বেশি চাকরির মেয়াদ সম্পন্ন কর্মচারীরা অবসরের আগের ১২ মাসের গড় মূল বেতনের ৫০% পেনশন হিসেবে পাবেন। ১০ বছরের বেশি চাকরির জন্য ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা পেনশন নিশ্চিত করা হবে। এই স্কিম জাতীয় পেনশন স্কিম (এনপিএস) এর বিকল্প হিসেবে কাজ করবে এবং পেনশন গণনাকে আরও সরল করবে।

প্রবীণদের জন্য প্রভাব
প্রবীণ পেনশনভোগীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন একটি গেম-চেঞ্জার হতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে অনেক পেনশনভোগী তাদের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রবীণ পেনশনভোগী যিনি বর্তমানে ৩০,০০০ টাকা পেনশন পান, তিনি অষ্টম বেতন কমিশনের পর ৭৫,০০০ টাকা পেতে পারেন, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। এছাড়া, অতিরিক্ত ভাতা যেমন প্রবীণ পেনশনভোগীদের জন্য বিশেষ ভাতা এবং বর্ধিত মহার্ঘ ভাতা মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করবে।

ন্যাশনাল কাউন্সিল–জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেশিনারি (এনসি-জেসিএম) একটি ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, যারা ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, ন্যূনতম পেনশন, এবং অন্যান্য ভাতার উপর সুপারিশ প্রস্তুত করবে। এই কমিটি ২০২৫ সালের জুন মাসে তাদের স্মারকলিপি চূড়ান্ত করবে।

অর্থনীতিতে প্রভাব
অষ্টম বেতন কমিশনের ফলে পেনশন বৃদ্ধি কেবল পেনশনভোগীদের জন্যই নয়, দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বর্ধিত পেনশন পেনশনভোগীদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াবে, যা ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কমিশনের বাস্তবায়ন অর্থনীতিতে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার বোঝা সৃষ্টি করতে পারে, তবে এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভোক্তা চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করবে।

পেনশন বৈষম্য নিয়ে বিতর্ক
অষ্টম বেতন কমিশন নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য বিতর্ক হলো ২০২৬ সালের আগে অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার আশঙ্কা। ফিনান্স বিল ২০২৫-এ কিছু প্রস্তাবিত সংশোধনী এই আশঙ্কা তৈরি করেছে। তবে, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ স্পষ্ট করেছেন যে, ২০১৬ সালের আগে অবসরপ্রাপ্তরা যেমন সপ্তম বেতন কমিশনের সমান সুবিধা পেয়েছিলেন, তেমনি অষ্টম বেতন কমিশনেও সকল পেনশনভোগী সমান সুবিধা পাবেন। এই আশ্বাস পেনশনভোগীদের মধ্যে উদ্বেগ কমিয়েছে।

অষ্টম বেতন কমিশন প্রবীণ পেনশনভোগীদের জন্য একটি নতুন আশার আলো নিয়ে আসছে। প্রক্ষেপিত ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ এর ভিত্তিতে ন্যূনতম পেনশন ১৮৬% বৃদ্ধি পেতে পারে, যা পেনশনভোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। ইউনিফাইড পেনশন স্কিমের প্রবর্তন এবং মহার্ঘ ভাতার সংশোধন পেনশনভোগীদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। প্রবীণরা এই পরিবর্তনের মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির চাপ মোকাবেলা করতে পারবেন এবং আরও স্থিতিশীল অবসর জীবন উপভোগ করতে পারবেন। অষ্টম বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ ২০২৬ সালের শেষের দিকে বা ২০২৭ সালের শুরুতে প্রকাশিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পেনশনভোগীদের উচিত সরকারি ঘোষণার উপর নজর রাখা এবং আর্থিক পরিকল্পনার জন্য প্রস্তুত থাকা।