দীর্ঘদিনের ক্ষতির ধারা কাটিয়ে অবশেষে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL)। সরকারি সাহায্য, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং কৌশলগত পদক্ষেপের ফলেই এই সাফল্য, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মঙ্গলবার প্রকাশিত BSNL-এর সর্বশেষ আর্থিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে সংস্থার লাভ হয়েছে ২৮০ কোটি টাকা। যেখানে ঠিক এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের একই সময়ে সংস্থার ক্ষতি হয়েছিল ৮৪৯ কোটি টাকা।
এই নিয়ে পরপর দুই ত্রৈমাসিকে লাভ করেছে BSNL। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর— সেই তিন মাসেও সংস্থার নিট লাভ হয়েছিল ২৬২ কোটি টাকা। একটানা দুটি ত্রৈমাসিকে লাভ— BSNL-এর ইতিহাসে গত ১৮ বছরে এই ঘটনা ঘটেনি।
টেলিকমমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এই সাফল্যকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “২০০৭ সালের পর এই প্রথমবার BSNL টানা দুই কোয়ার্টারে নিট লাভ করেছে। এটি শুধুমাত্র সরকারের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ এবং সংস্থার দক্ষ পরিচালনার ফল।”
BSNL-এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এ রবার্ট জে রবি বলেন, “পেশাদার পরিচালনার মডেল এবং সরকারের সক্রিয় সহায়তার ফলে BSNL ধীরে ধীরে নতুন করে উঠে দাঁড়াচ্ছে। এই লাভ সংস্থার নবজন্মের বার্তা দিচ্ছে।”
সরকারি সাহায্যের বড় ভূমিকা
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছরে BSNL-কে চাঙ্গা করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। ২০১৯ সালে ৬৯ হাজার কোটি টাকার পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল BSNL এবং MTNL-এর জন্য। পরে আরও ১.৬৪ লক্ষ কোটি টাকার সাহায্য ঘোষণা করা হয় ২০২২ সালে।
এই সহায়তার আওতায় রয়েছে ঋণ পুনর্গঠন, ৪জি পরিষেবা সম্প্রসারণ, অপটিক ফাইবার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং পুরনো অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সরকারি সহায়তা BSNL-এর প্রযুক্তিগত ও আর্থিক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং নতুন পরিষেবা
BSNL এখন ৪জি পরিষেবা চালু করার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সংস্থার পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই দেশের ৭০% এলাকায় ৪জি নেটওয়ার্ক চালু করা হবে। পাশাপাশি ৫জি প্রযুক্তির দিকেও নজর রাখছে সংস্থা।
এ ছাড়াও BSNL BharatNet প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ ভারতে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে, যা ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে।
বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
টেলিকম ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে BSNL-এর মতো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পক্ষে টিকে থাকা সহজ নয়। কিন্তু সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপ, অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার রূপান্তর এবং প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ— এই তিনের সমন্বয়েই এখন লাভের মুখ দেখছে সংস্থা।
তবে তারা এটাও বলছেন, লাভের ধারাকে বজায় রাখতে হলে BSNL-কে আরও উদ্ভাবনী হতে হবে। গ্রাহক পরিষেবার মান উন্নত করা, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্যাকেজ ও পরিষেবা চালু করা এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও এগিয়ে যাওয়াই ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ।
১৮ বছর পরে টানা দু’টি ত্রৈমাসিকে লাভ করাটা BSNL-এর জন্য নিঃসন্দেহে এক বড় সাফল্য। সরকারি সহায়তা এবং পেশাদার ব্যবস্থাপনার যুগলবন্দিতে BSNL আবার নতুন করে উঠে দাঁড়াচ্ছে। এই গতি যদি বজায় থাকে, তবে আগামী দিনে ভারতের টেলিকম ক্ষেত্রে BSNL আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।