মোদীর হাত ধরে চালু হচ্ছে বিএসএনএলের ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত 4G স্ট্যাক

BSNL Indigenous 4G Stack

কেন্দ্রীয় যোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া শুক্রবার ঘোষণা করেছেন যে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের টেলিকম খাতে দুটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ— বিএসএনএলের নিজস্ব 4G স্ট্যাক এবং “ডিজিটাল ভারত নিধি” প্রকল্পের অধীনে ১০০ শতাংশ ৪জি স্যাচুরেশন প্রকল্প।

Advertisements

মন্ত্রী জানান, প্রায় ৯৮ হাজার স্থানে এই দেশীয় ৪জি স্ট্যাক স্থাপন করা হবে, যা দেশের প্রত্যেক কোণায় টেলিকম সেবা পৌঁছে দেবে। বর্তমানে বিএসএনএলের টাওয়ার ও বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) ইতিমধ্যেই ২ কোটি ২০ লক্ষ গ্রাহককে পরিষেবা দিচ্ছে। সিন্ধিয়া বলেন, “এটি সম্পূর্ণ সফটওয়্যার-চালিত, ক্লাউড-ভিত্তিক এবং ভবিষ্যৎ প্রস্তুত প্রযুক্তি। সবচেয়ে বড় দিক হলো এটি সহজেই ৫জিতে আপগ্রেড করা যাবে।”

সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ও অবহেলিত এলাকায় টেলিকম পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। এজন্য বিএসএনএলকে ৪জি স্যাচুরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

টেলিকম উৎপাদনে ভারতের অগ্রগতি:

সিন্ধিয়া জানান, সরকারের মনোযোগ শুধু সংযোগ বৃদ্ধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভারতের টেলিকম ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করাও এর অংশ। তিনি বলেন, “বিশ্বের নামী সংস্থাগুলি এখন ভারতীয় নির্মাতাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। সিসকো ফ্লেক্সের সঙ্গে কাজ করছে, এরিকসন ও ভিডিভিএন জ্যাবিলে যুক্ত হয়েছে, ডিক্সনও তাদের কার্যক্রম বাড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে ভারত টেলিকম সরঞ্জাম তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠছে। আমরা শুধু পরিষেবা প্রদানকারী নই, একইসঙ্গে সরঞ্জাম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠা করছি।”

সি-ডট ও দেশীয় সরঞ্জাম উৎপাদন: BSNL Indigenous 4G Stack

মন্ত্রী আরও জানান, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অফ টেলিম্যাটিকস (সি-ডট) এখন শুধু মূল প্রযুক্তি সরবরাহ নয়, বরং রেডিও অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক (RAN) সরঞ্জামও তৈরি করছে। টেজাস নেটওয়ার্কস-এর সঙ্গে মিলে তারা আন্তর্জাতিক বাজারেও, বিশেষত গ্লোবাল সাউথ অঞ্চলে, নতুন দিগন্ত খুলতে চলেছে।

Advertisements

বিনিয়োগ ও আর্থিক পরিকল্পনা:

বিএসএনএলের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের প্রসঙ্গে সিন্ধিয়া বলেন, একটি বিশদ মূলধনী বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে যার মাধ্যমে নতুন সাইট বাড়ানো ও অবকাঠামো আধুনিকীকরণ করা হবে। এর জন্য অর্থ আসবে ফ্রি ক্যাশ ফ্লো, জমি মুদ্রায়ন এবং কেন্দ্রীয় সহায়তা থেকে। তবে তিনি চূড়ান্ত হওয়ার আগে অতিরিক্ত তথ্য জানাতে অস্বীকার করেন।

বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ডেটা ভারতেই:

ট্যারিফ বা পরিষেবা মূল্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি প্রতিটি অপারেটরের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। ভারতেই বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা টেলিকম সেবা পাওয়া যায়— প্রতি জিবি ডেটার গড় খরচ মাত্র ১১ সেন্ট, যেখানে বৈশ্বিক গড় ২.৪৯ মার্কিন ডলার। তাই সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রয়োজন নেই।

মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, বিএসএনএল গত কয়েক ত্রৈমাসিকে লাভ দেখালেও, প্রকৃত কর্মক্ষমতা যাচাই করা উচিত অপারেটিং প্রফিট ও EBITDA-র ভিত্তিতে, কারণ গত অর্থবছরে ২৫,০০০ কোটি টাকার রেকর্ড মূলধনী ব্যয়ের কারণে অবচয়ের প্রভাব বেশি পড়েছে।

ডিজিটাল ভারতের নতুন অধ্যায়:

সিন্ধিয়ার কথায়, “এই উদ্যোগ শুধু প্রত্যেক গ্রামে ডিজিটাল সংযোগ পৌঁছে দেবে না, বরং ভারতের টেলিকম ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বৈশ্বিক নেতৃত্বের নতুন অধ্যায়ও সূচনা করবে।”